ঢাকা, রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

হরতালের দ্বিতীয় দিনে প্রভাব পড়েনি রাজধানীতে

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৩, ২১:৩৩

হরতালের দ্বিতীয় দিনে প্রভাব পড়েনি রাজধানীতে
হরতালের শেষ দিন সোমবার রাজধানীতে যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা দুই দিনের ডাকা হরতালের শেষ দিন সোমবার রাজধানীতে তেমন কোন প্রভাব পড়েনি, জনজীবন ছিল স্বাভাবিক। সকাল থেকে রাজধানীতে অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য দেখা গেছে। এদিন গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত যান চলাচলও বেড়েছে।

কোথাও কোথাও দেখা গেছে যানজটও। তবে যাত্রী সংকটে চলেনি দূরপাল্লার বাস। এদিন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের অন্যান্য দিনের মতই বাস, মিনিবাস, অটোরিকশা, পণ্যবাহী মিনিট্রাক, মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে। এছাড়া রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চলাচল ছিল স্বাভাবিক। মিরপুর-১, ১০ নম্বর, কল্যাণপুর, শ্যামলী, সাইন্স ল্যাব, নিউমার্কেট, প্রেসক্লব, গুলিস্তান, মতিঝিল এলাকার বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। তবে সন্ধ্যার পর নাশকতার আশঙ্কায় যান চলাচল কিছুটা কমেছে।

সকাল থেকেই রাজধানীর প্রায় প্রতিটি মোড়েই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লা সকাল থেকেই মিছিলি করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। পরে বিভিন্ন সড়কের মোড়ে তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান নেন।

অপরদিকে, ১২ দলীয় জোট, এলডিপি, গণ অধিকার পরিষদসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করছে।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, আগের তুলনায় রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল বেড়েছে। তবে নাশকতার আশঙ্কায় দূরপাল্লার গাড়ি ছাড়ছে না।

সকাল থেকে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) একটি দোতলা বাসে ও মতিঝিলে মধুমিতা সিনেমা হলের গলিতে সোনালী ব্যাংকের একটি স্টাফ বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া পল্টন এলাকাতেও একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়া হয়।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের গণমাধ্যম কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে বাসে আগুন দেয়ার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। পরে মিরপুর ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট ২টা ৪০ মিনিটে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা এরশাদ হোসাইন জানান, বিকেল সোয়া ৩টার দিকে মতিঝিলে ১টি বাসে আগুন দেয়ার সংবাদ পাওয়া যায়। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিল। এরমধ্যে আগুন নিভে যাওয়ার খবর আসায় আর যায়নি তারা। ফায়র সার্ভিস যাওয়ার আগে স্থানীয়রা বাসের আগুন নিভিয়ে ফেলেন।

বিকেল সোয়া ৫টার দিকে পল্টন এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সদরঘাট থেকে মিরপুরগামী তানজিল পরিবহনের বাসটি পল্টন এলাকায় পৌঁছালে এটিতে আগুন দেয়া হয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায়ও কেউ হতাহত হয়নি।

এর আগে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে এক বার্তায় জানানো হয়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গত রোব থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৭টি আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ১৯টি যানবাহনে আগুনের ঘটনা ঘটে। এরমধ্য ঢাকা সিটিতে ৪টি, ঢাকা বিভাগ ১টি, রাজশাহী বিভাগে (নাটোর, বগুড়া,সিরাজগঞ্জ) ৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগে (ফেনী, মিরসরাই, সাতকানিয়া) ৪টি, ময়মনসিংহ বিভাগে (জামালপুর) ১টি ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১০টি বাস, ১টি কাভার্ড ভ্যান, ৬টি ট্রাক, ১টি সিএনজি, ১টি ট্রেন (৩ বগি) পুড়ে যায়।

এদিকে, সোমবার বিকেল চারটার দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটেছে। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের নীচে এ ঘটনা ঘটে। তবে এতে কোনো হতাহতের হয়নি।

এদিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরের অভিযোগে করা মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন শুনানি ছিল।

রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পিপি তাপস পাল জানান, সোমবার বিকেল ৪টা ১ মিনিটে মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের জাতীয় পতাকা উত্তোলন বেদীর সামনে হাতবোমা ফাটানো হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (লালবাগ) জাফর হোসেন বলেন, একটি ককটেল বিস্ফারণের ঘটনা ঘটেছে। হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আমরা তদন্ত করে দেখছি কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

অপরদিকে, র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সোমবার ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ নিয়ে গত ২৮ অক্টোবর হামলা ও নাশকতাসহ পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও নাশকতায় জড়িত অভিযোগে এখন পর্যন্ত মোট ৫৬২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সংস্থাটি।

র‌্যাব জানায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীতে র‍্যাবের ১৪৫টিসহ সারাদেশে ৪২৫টি টইল দল মোতায়েন রয়েছে। পাশাপাশি যেকোন ধরনের নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে গোয়েন্দারা ছদ্মবেশে নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। আর যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে নিরাপত্তা প্রদানে দেশের বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লার গণপরিবহন ও পণ্যবাহী পরিবহনকে র‍্যাব টহলের মাধ্যমে এস্কর্ট দিয়ে নিরাপদে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিচ্ছে র‍্যাব।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ২৮ প্লাটুনসহ সারাদেশে ২৩১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে, হরতাল কর্মসূচির পর আবারও অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি ও জামায়াত। আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার টানা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের ডাক দিয়েছে দল দু’টি।

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত