ত্রাণ নিয়ে ফেরা হলো না বাড়ি, নিহত সপরিবারে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:২০ আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:৪৫
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের ছত্রকান্দা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা তারা মিয়ার ছেলে রাকিবুল ইসলাম মিলন (৪০)। তিনি চাকরি করতেন ঢাকায়, সচিবালয়ে লিফটম্যান হিসেবে। চাকরির সুবাদে পরিচিতদের মাধ্যমে সম্প্রতি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবারের জন্য তদবির করে ত্রাণ হিসেবে কয়েক বান্ডিল টিন সহায়তার বরাদ্দ আনেন তিনি।
মঙ্গলবার সকালে একটি পিকআপে করে নিজের পরিবারের সদস্যদের সাথে আশপাশের গ্রামের কয়েকজনকে নিয়ে সেই টিন আনতে যাচ্ছিলেন ফরিদপুরের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে। কিন্তু পথে বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে মিলনের স্ত্রী সুমি বেগম (৩৩) ও দুই সন্তান আবু রায়হান (৬), আবু সিনান রুহান (৫)-সহ ১৪ জন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মিলনের মা খুড়িয়া বেগম। দুর্ঘটনায় মর্জিনা বেগম (৭০) নামে মিলনের একজন নানী শাশুড়িরও মৃত্যু হয়েছে। মর্জিনা বেগম একই গ্রামের ওহাব মোল্লার স্ত্রী।
এ ব্যাপারে নিহত রাকিবুল ইসলাম মিলনের মামাতো ভাই নুরুজ্জামান খসরু বলেন, ঢাকা থেকে কয়েকটি দরিদ্র পরিবারের জন্য ত্রাণের টিনের ব্যবস্থা করে সোমবার বিকেলে বাড়িতে আসে মিলন। সকালে ফরিদপুর রওনা হয়। তার আগে গতরাতে সর্বশেষ কথা হয়েছিল তার সাথে। বলেছিলো, ত্রাণের টিনগুলো বুঝিয়ে দিয়ে ওই পথেই চলে যাবে ঢাকা। এটিই যে তার শেষ যাওয়া সেটি কি কেউ জানতো।
তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা তারা মিয়ার তিন ছেলের মধ্যে রাকিবুল ইসলাম মিলন মেঝো ছিলেন। তার বড় ভাই ফরিদুল ইসলাম একজন স্কুল শিক্ষক। ছোট ভাই হাবিবুর রহমান মাস্টার্স পাশ করে আলফাডাঙ্গা সদরে ফোন ফ্লেক্সির ব্যবসা করেন। আট বছর আগে আলফাডাঙ্গার বানা ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের রোকায়েশ মোল্লার মেয়ে সুমির সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
নিহত রাকিবুলের আরেক ফুফাতো ভাই মকিবুল ইসলাম বাবলু বলেন, এভাবে পিকআপে যাত্রী চলাচলের ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, এভাবে সকলের সামনে পিকআপে পনের বিশজন মানুষ যাত্রা করলো অথচ কেউ কিছু বললো না! সড়কপথে এভাবে যাত্রী চলাচল নিষিদ্ধ হলেও কেউ সে আইন মানে না। আবার যাদের দেখভাল করার কথা তারাও কিছু বলে না।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, পিকআপ ভ্যানের ১৫ যাত্রীর ১৪ জনই মারা গেছেন। একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যারা মারা গেছে তাদের দাফনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে তাৎক্ষণিক অনুদান এবং চিকিৎসাধীনদেরও জন্য ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও নিহতের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে এবং আহত পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে অনুদান দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ জার্নাল/এফএম