ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

বহিষ্কারে দুর্বল হচ্ছে বিএনপির তৃণমূল

  আকরাম হোসেন

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:১৬

বহিষ্কারে দুর্বল হচ্ছে বিএনপির তৃণমূল
বহিষ্কারে দুর্বল হচ্ছে বিএনপির তৃণমূল। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নির্বাচনের মত স্থানীয় নির্বাচনও বর্জন করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৮৪ জনকে বহিষ্কার করেছে দলটি। প্রথম ধাপের মত দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের নির্বাচনেও প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। তাদের ভাগ্যেও বহিষ্কারাদেশ অপেক্ষা করছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের ব্যাপারে কঠোর থাকছে দলটি। বহিষ্কার অব্যাহত থাকলে তৃণমূলে নেতৃত্বের সংকট দেখা দিবে। ফলে কর্মী ও সমর্থকরাও অভিভাবকহীন হয়ে পড়বে। মাঠ পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারাবে দলটি। সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হবে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদী দলটির তৃণমূল দুর্বল হয়ে পড়বে। এমনটাই মনে করে বিএনপির একাধিক নেতা। তবে আরেকটা অংশ মনে করেন দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতেই বহিষ্কার। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

গত ১৬ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা নির্বাচনী বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটিতে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিস্তার আলোচনা হয়। এর আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। মাঠ পর্যায় থেকে অনেকে নির্বাচনের অংশ নেয়ার পক্ষে মতামত দেন বলে জানা যায়। তারা জানান, ভোটের মাঠে থাকলে স্থানীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকা যায়। নির্বাচিত হলে সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেক সহজ হবে। পরাজিত হলেও ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

জানা যায়, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির হিসাব-নিকাশ করে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পর স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিলে এটা নিয়ে অপরাজনীতি করবে আওয়ামী লীগ। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এদিকে কৌশলগত কারণেও আওয়ামী লীগ সরকার ও প্রশাসনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়া ঠিক হবে না। আন্তর্জাতিক রাজনীতির হিসাব-নিকাশ রয়েছে। সব দিক বিবেচনা করে বর্তমান সরকারের অধীনে সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে অটুট থাকছে দলটি।

বিএনপির এক যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নির্বাচন বর্জন করায় মাঠ পর্যায়ের বিএনপির রাজনীতি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ইতোমধ্যে ৮০ জনের বেশি বহিষ্কার হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন আরও তিন ধাপে হবে। বহিষ্কারের সংখ্যা অনেক বেশি হবে। এতে তৃণমূলে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ যারা বহিষ্কার হচ্ছে তারা মাঠ পর্যায়ের নেতৃস্থানীয়। দীর্ঘদিন ধরে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে। নিজ নিজ এলাকায় তাদের প্রভাবপ্রতিপত্তি, গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এদের নিজস্ব নেতা-কর্মী ও সমর্থক রয়েছে। এদের বাদ দিয়ে সাংগঠনিক কাজ বাধাগ্রস্ত হবে।

বহিষ্কার নেতাদের প্রতি নমনীয় আছে বিএনপি। নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে সঙ্গে সঙ্গে ফেরানো হবে দলে। ২৭ এপ্রিল এ বিষয় পরিষ্কার করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি জানান, বিএনপির বহিষ্কৃত নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। এখনও সুযোগ আছে, যারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে, দল তাদের বিষয়ে বিবেচনা করবে। এর বহিঃপ্রকাশও ঘটেছে। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় গত ২৬ এপ্রিল বিএনপি থেকে বহিষ্কার হন মেহেরপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য রোমানা আহমেদ। এর একদিন পরেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি। এরপরেই তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বিএনপি একটি আদর্শিক দল। যারা বিএনপি বিরোধী বা যারা বিএনপির সিদ্ধান্ত অমান্য করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া ঠিক আছে। এতে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালে প্রিন্স বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, যারা দলের সিদ্ধান্ত মানে না, নিয়ম-নীতি মানে না, শৃঙ্খলা মানে না তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হলে দলই বরং জঞ্জাল মুক্ত হবে। এতে দলের কোনো ক্ষতি হবে না। বিএনপি আরও শক্তিশালী হবে। বিএনপির জন্য কেউ অপরিহার্য নয়। যারা সরকারের প্ররোচনায় নির্বাচন করছে। তাদের অধিকাংশই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ-ধারি নেতা না। কিছু আছে পরিচিতির জন্য নির্বাচন করছে। কিছু আছে নির্বাচন আসলেই প্রার্থী হয়। কেউ আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। এরা দলে থাকলে দলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে এই নেতাদের আমারা চিনতে পারছি। এতে দল পরিচালনা করতে সহজ হবে।

তিনি বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে তারা দলের নীতি আদর্শের সঙ্গে বেইমানি করছে। তারা বেগম খালেদা জিয়া, আন্দোলনে নিহত, গুম, হামলা, মামলা, নির্যাতিত ব্যক্তিদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। যারা দলের নিবেদিত তারা কেউ এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়া এখন পর্যন্ত ৮৪ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাচনের ৭৮ জন প্রার্থী এবং পৌরসভা ও ইউনিয়ন নির্বাচনের ৬ জন প্রার্থী রয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এএইচ/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত