ঢাকা, বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

‘খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য’

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০১ মে ২০২৪, ১৪:০০  
আপডেট :
 ০১ মে ২০২৪, ১৪:৫৫

‘খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য’
ছবি : সংগৃহীত

খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আওয়ামী লীগের একমাত্র লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (১ মে) দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মে দিবস উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে এমন কাউকে আমরা ছাড়ি না। এমনকি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন হলেও তাকে আমরা ছাড় দেই না।

এসময় মালিকদের বিলাসিতা কমিয়ে শ্রমিকদের দিকে মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, বায়াররা যদি বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে তবে সরকার শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির জন্য মালিকদের প্রতি চাপ দিতে পারে। একই সঙ্গে আইএলওকে শ্রমিকদের পাশাপাশি মালিকদের বিষয়গুলো দেখারও আহবান জানান তিনি।

শ্রমিকদের কল্যাণ দেখা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব মন্তব্য করে দলনেতা বলেন, রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শ্রমিকদের কল্যাণে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ প্রণোদনা, অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা গ্রিন শিল্প কারখানা স্থাপনসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও দক্ষ করে গড়ে তোলাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

করোনাকালের কথা স্মরণ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্প-কলকারখানা যেন বন্ধ না হয় সেজন্য তখন বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিলো। শ্রমিকদের কল্যাণ চিন্তা করে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কল-কারখানা খোলা রাখা হয়েছিল।

সরকারপ্রধান জানান, ৪২টি সেক্টরে শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে। নারী শ্রমিকদের জন্য ডেকেয়ার সহ বিভিন্ন সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শ্রমিক-মালিক সবাইকে সুসম্পর্ক রক্ষা করে উৎপাদন বৃদ্ধি আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের সব সমস্যার সমাধানে ও দেশের উন্নয়নে যা করার সরকার করবে, এজন্য কারো দুয়ারে দুয়ারে ঘোরার দরকার হবে না। তবে রুটি-রুজির কারখানা ভাঙচুর করে নিজেরাই নিজেদের সর্বনাশ করবেন না।

যুক্তরাষ্ট্রে আন্দোলন করলে চাকরি যায়, আর বাংলাদেশে বসে আলোচনা করে সমাধান করা হয়; এটাই তফাৎ। যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পহেলা মে দিবসকে শ্রমিক সংহতি দিবস ঘোষণা করেছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের বৈষম্য কমাতে চেয়েছিলেন।

বিনা জামানতে বর্গা চাষীদের ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, খাদ্য সঙ্কট সমাধানের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না। কারো কাছে হাত পেতে নয়, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।

এদিকে মহান মে দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার গৌরবোজ্জ্বল ত্যাগের ঐতিহাসিক দিন ‘মহান মে দিবস’ উপলক্ষে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মেহনতি মানুষকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন শোষিত, বঞ্চিত ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় শ্রমনীতি প্রণয়ন করেন এবং প্রথম মহান মে দিবসকে শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের স্বীকৃতি দেন। জাতির পিতা মে দিবসে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। তিনি শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে মজুরি কমিশন গঠন করেন এবং নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করেন।

আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রম আইন যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন-২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। এ তহবিল থেকে যে কোনো শ্রমিক কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনাজনিত কারণে স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে অথবা মৃত্যুবরণ করলে, জরুরি চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ ও দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার জন্য এবং শ্রমিকদের সন্তানের উচ্চ শিক্ষার জন্যও আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমরা রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের সার্বিক কল্যাণে আর্থিক সহায়তা দিতে একটি কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন করেছি এবং সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। এ শিল্পের কর্মহীন এবং দুস্থ শ্রমিকদের সর্বোচ্চ তিন মাসের নগদ আর্থিক সহায়তা দিয়ে চলমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সব সেক্টরে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে। শ্রমিকদের সামাজিক মর্যাদা, স্বাস্থ্য ও সেইফটি নিশ্চিতকল্পে জাতীয় শ্রমনীতি-২০১২, জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০, জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা-২০১৩, বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-২০১৫ এবং গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, তার সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং কার্যক্রম আরও সুদৃঢ় হয়েছে। শিল্প-কারখানায় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে উন্নীত করা হয়েছে। শ্রমিক ও তাদের পরিবারের কল্যাণে বিভিন্ন সেবার সম্প্রসারণ ও জোরদারকরণে আমরা শ্রম পরিদপ্তরকে সম্প্রতি অধিদপ্তরে রূপান্তর করেছি। শ্রমিক ভাই-বোনদের যে কোনো সমস্যা সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ, অভিযোগ নিষ্পত্তি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক টোল ফ্রি হেল্প লাইন (১৬৩৫৭) চালু করা হয়েছে। শিল্প কারখানায় বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ পরিদর্শন ও মনিটরিং ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি, মহান মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রমিক-মালিক পরস্পর সুসম্পর্ক বজায় রেখে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিবেদিত হবেন। মে দিবসের চেতনায় দেশের শ্রমিক-মালিক ঐক্য জোরদার করে শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণ ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তথা উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব, এটাই হোক আমাদের মে দিবসের অঙ্গীকার।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত