ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

এমপি মনিরুল ইসলামের কাণ্ড, ভিডিও ভাইরাল

  যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:০৭  
আপডেট :
 ১২ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:১০

এমপি মনিরুল ইসলামের কাণ্ড, ভিডিও ভাইরাল

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনের সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনিরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বৃহস্পতিবার যশোরের চৌগাছা উপজেলার এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবন অনুষ্ঠানে ফুল হাতে ছাত্রীদের ভিডিও এটি।

ভিডিওতে দেখা যায়, এমপি মনির ও আওয়ামী লীগের নেতারা রুমের মধ্যে বসে আছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান, চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. শাহজান কবির, চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাস্টার সিরাজুল ইসলামও আছেন। একদল ছাত্রী ফুলের মালা হাতে অতিথিদের সামনে দাঁড়াল। তারপর তারা ‘ধন, ধান্য পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা....গানের সাথে তাল মিলিয়ে ফুল হাতে করজোড়ে প্রণামের মতো করে মাথা নত করে উঠছে আর বসছে। পাশ থেকে একজন শিক্ষক ছাত্রীদের শিখিয়ে দিচ্ছে।

নাজমুল হোসেন নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক পেজে ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে। তিন ঘণ্টায় ভিডিওটি ৯৭ হাজার বার দেখা হয়েছে।

কমেন্টের জবাবে নাজমুল হোসেন জানান, এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানের ভিডিও এটি। প্রথমে এমপি সাহেব নিজেই আপলোড করেন। পরে তিনি ডিলেট করে দিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন নাজমুল হোসেন।

ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চৌগাছার বকসিপুর গ্রামের বাসিন্দা ও আইডিইবি’র যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ধন ধান্য পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা....গানের সাথে ফুলের মালা হাতে মেয়েরা এমপিসহ অতিথিদের বরণ করে নিয়েছে। অতিথির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এভাবে বরণ করা হয়েছে। মূলত গানটি কন্টিনিউ করার জন্য মেয়েরা ফুল হাতে, এভাবে উঠাবসা করেছে। এই ঘটনাটিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা ঠিক হবে না।

নূরুল ইসলাম বলেন, ‘ওই স্কুলের জমি দান করেছিল আমার মামা। দীর্ঘদিন ভবন ছিল না। নতুন ভবন পেয়ে এলাকার সবাই খুশি। তাই এমপিসহ অতিথিদের বরণ করে নিয়েছে।’

তবে, অতিথির সামনে দাঁড় করিয়ে, ছাত্রীদের এভাবে উঠাবসা করাকে ভালোভাবে নেয়নি এলাকাবাসী।

ফেসবুক ব্যবহারকারীরা আয়োজক, এমপি এবং সেখানে উপস্থিত শিক্ষকদের ধিক্কার জানাচ্ছেন। তাদের ভাষ্য, একজন সচেতন মানুষ হিসেবে এমপি মনিরুল ইসলাম কেন বাচ্চাদের এই কাজ করতে দিলেন? শুরুতেই তো ছাত্রীদের তার থামিয়ে দেয়া উচিত ছিল।

সোহেল রাজ নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে নিখেছেন, ‘আমার রাগটা সেই শিক্ষকদের ওপর বেশি, তারপর তথাকথিত এমপির ওপর। একজন শিক্ষিত মানুষ হয়েও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ রকম মালা নেয়া দৃষ্টিকটূ দেখায়।’

আলি হাসান নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘শুধু ব্যক্তিগতভাবে নয়, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবেও এ ধরনের অপকর্ম বন্ধ হওয়া উচিত। আর একই সঙ্গে এমন কাজের নীতি-নির্ধারকদেরও উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার।’

মিজানুর রহমান লেখেন, ‘কোথায় এই স্কুল? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানাই। এইভাবে ফুল দিয়ে বরণ করতে তো কোথাও দেখিনি! বারবার হাঁটু গেড়ে ওঠবস করে ফুল দেয়া, এটা কিসের নিয়ম? শিক্ষক ও স্থানীয়রা আবার এটি উপভোগও করছেন! ধিক্কার সবার প্রতি!’

এ বিষয়ে এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান বলেন, এখানে আবহাওয়া খারাপ ছিল, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল, রুমের মধ্যে গ্যাদারিং অবস্থায়……। ওই রকম…..।

তিনি বলেন, বসার কোনও পরিবেশ ছিল না, একটা ফাঁকা রুমে এমপি স্যারসহ মেহমানদের বসিয়ে অনুষ্ঠানটা চলছিল। আমার শিক্ষকরা এ অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন।

আপনি আগে থেকে জানতেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমপি স্যার যখন…….। ফুলের মালা দেওয়ার কথা ছিল….। এটা এ পর্যায়ে যাবে সেটা ভাবিনি। তবে এর ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে অন্য টিচাররা ছিল বলেও জানান তিনি।

তবে ওই শিক্ষকের ফোন নাম্বার চাইলে তিনি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের ভুল হয়েছে। নেক্সট টাইম এমন আর হবে না, জীবনে কখনও হবে না।…এটা ঠিক হয়নি, ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ আর হবে না।

জানতে চাইলে অনুষ্ঠানের আরেক অতিথি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শাহজান কবির বলেন, আমরা ফুল-টুল নিতে চাই না। কিন্তু বোঝেন তো, রাজনীতি করি-কতো জায়গায় যাই। সবখানেই নেতা কর্মী আর আয়োজকদের চাপ থাকে। এলাকাতে যখন এমপি আসেন তখন সবাই চায় তাকে সম্মান জানাতে। তারই অংশ হিসেবে এমপি সাহেবকে তারা ফুল দেয়। তারাই চাপ সৃষ্টি করে ফুল নেওয়ার জন্য, তাই নিতে বাধ্য হয়েছি বলেন তিনি । তিনি আরও বলেন, বোঝেন তো সামনে নির্বাচন, এগুলো মেইনটেইন করতেই হয়।

সাবেক ছাত্রনেতা ও কলামিস্ট লীনা পারভীন এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বলেন, প্রথম কথা শিশুদের দিয়ে এমন প্রভুভক্তি আপত্তিকর। তাছাড়া যে গান ব্যবহার করে কোরিওগ্রাফি করা হয়েছে সেটা দেশকে অপমান করা। একজন জনপ্রতিনিধি যদি এমন বিষয়কে উদ্বুদ্ধ করেন তবে তা দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। কী শিখবে প্রজন্ম প্রশ্ন করে তিনি বলেন, এমন ঘটনায় রাজনীতিবিদের প্রতি সবার শ্রদ্ধাবোধ উঠে যাবে। দেশ আর নেতা সমান নয়, বলেন লীনা পারভীন।

এদিকে, এমপি মনিরুল ইসলাম মনিরের মেইল থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার যশোরের চৌগাছা উপজেলা হাকিমপুর ইউনিয়নে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এমপি মনিরুল ইসলাম মনির। উদ্বোধন করা কাজগুলোর মধ্যে এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চারতলা ভিত বিশিষ্ট একতলা ভবন, ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে দেবীপুর-বকশীবাজার ১১শ মিটার পাকাসড়ক নির্মাণ, ইউনিয়নের পাতিবিলাসহ বিভিন্ন বাজারে স্থাপিত সোলার স্ট্রিট লাইট উদ্বোধন উল্লেখযোগ্য।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির সঙ্গে সংসদ সদস্যের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ওই ফুলেল শুভেচ্ছার দিক নির্দেশনা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক (বিএনপি সমর্থিত) শাহজাহান কবীর। ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বিএনপি থেকে নির্বাচিত স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান। স্থানীয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন ভবনের উদ্বোধন করতেই সংসদ সদস্য অ্যাড. মনিরুল ইসলাম মনির ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ভিডিওটির কারণে কারো মনে অযাচিতভাবে আঘাত দিয়ে থাকলে সংসদ সদস্য অ্যাড. মনিরুল ইসলাম মনির আন্তরিকভাবে দুঃখিত!

আরো পড়ুন: এক শিক্ষকের প্রেমের ফাঁদে দুই শিক্ষিকা!

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত