ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

পাঁচ মাদ্রাসা ছাত্রকে অপহরণের চেষ্টা

  পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:২৮

পাঁচ মাদ্রাসা ছাত্রকে অপহরণের চেষ্টা

পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায় একটি হাজেজিয়া মাদ্রাসার ৫ ছাত্রকে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি চক্রের বিরুদ্ধে। বুধবার বিকেলে অপহরণ চক্রের স্থানীয় মূল হোতা শালিসে ক্ষমা শিকার করলেই তাকে ছেড়ে দেন স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা ও প্রভাবশালীরা। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

ঘটনাটি ঘটে জেলার বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামে। অপহরণ চেষ্টার স্বীকার মাদ্রাসা ছাত্ররা হলেন, চিলাহাটি ইউনিয়নের ভুজারিপাড়া গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে নুরুল হুদা (১৬), একই গ্রামের ইসাহাক আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম শিপন (১৯), একই এলাকার এমদাদুল হকের ছেলে রাসেল (১৬), ফজলুল হকের ছেলে সেলিম হোসেন (১৬) ও বানিয়াপাড়া এলাকার মৃত আনসারুল ইসলামের ফরহাদ হোসেন (১২)।

স্থানীয়রা জানায়, বড়শশী শেখপাড়া নূরানী তা'লীমুল কুরআন মাদ্রাসার ৫ জন শিক্ষার্থীকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে ঢাকায় পাঠানোর চেষ্টা করেন ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য রহুল আমিন প্রধান (৬৫) ও তার লোকজন।

সোমবার রহুল আমিন ঢাকায় পাঠানোর জন্য দেবীগঞ্জ উপজেলার ভাউলাগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী নাদের এন্টার প্রাইজের একটি বাসে তুলে দেন ওই পাঁচ শিক্ষার্থীকে। বলে দেন ঢাকায় তার ছেলে হুমায়ুুন কবির বাদশা তাদের নিয়ে যাবে। গাড়িটি ওই পাঁচ ছাত্রকে নিয়ে ভাউলাগঞ্জ থেকে দেবীগঞ্জ পৌছালে ওই ছাত্রদের এক স্বজন বাসের মধ্যে ছাত্রদের দেখতে পেয়ে পরিবারের লোকজনকে বিষয়টি অবহিত করেন।

পরে পরিবারের লোকজন বাস থেকে তাদের নামিয়ে নিয়ে যান। এ সময় রহুল আমিন প্রধান ও তার লোকজন পালিয়ে যান। ওই সকল ছাত্রের পরিবারের দাবি তাদের অনুমতি না নিয়েই গোপনে মাদ্রাসা থেকে ওই ছাত্রের ঢাকায় অপহরণের চেষ্টা করেছিল রহুল আমিন প্রধান। কিন্তু স্থানীয়দের মাধ্যমে কয়েকজন অভিভাবক টের পেয়ে যাওয়ায় তার উদ্দেশ্য সফল হয়নি।

বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ওই মাদ্রাসা ছাত্রদের অভিভাবকরা এ বিষয়ে পুলিশের আশ্রয় নিতে চাইলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা তাতে বাঁধা দেন। এমনকি তারা বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য শালিসের আয়োজন করে। বুধবার শালিসে পাচার চক্রের মূল হোতা রহুল আমিন প্রধান ও তার ছেলে খোকন ইসলাম তাদের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়েই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

শালিসে উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, বড়শশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য মউর রহমান, বড়শশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আফাজ উদ্দিন, সিনিয়র সহসভাপতি আবুল হোসেন মাষ্টার, বড়শশী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম, ইউপি সদস্য জাকির হোসেন। নাম মাত্র শালিসের মাধ্যমে অপরাধীদের ছেড়ে দেয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগেও ওই এলাকা থেকে কয়েকজন কিশোরকে চাকরি নাম করে ঢাকা নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পায় ওই কিশোররা।

অপহরণ চেষ্টার স্বীকার মাদ্রাসা ছাত্র নুরুল হুদা জানান, আমাদেরকে রহুল আমিন ঢাকায় ভাল বেতনে চাকরি দেয়ার কথা বলে ঢাকার গাড়িতে তুলে দেন। বিষয়টি আমাদের পরিবারকে না জানানোর জন্য বলে দেন। পরে আমাদের এক প্রতিবেশী গাড়িতে আমাদের দেখতে পেয়ে আমাদের নামিয়ে নেন। মাদ্রাসা ছাত্র সাইফুল ইসলাম শিপন বলেন, আমাদেরকে গাড়িতে তুলে দিয়ে রহুল আমিন চাচা চলে যায়। তিনি বলে যান ঢাকা গাবতলী থেকে তার ছেলে আমাদেরকে নিয়ে যাবে। আমরা সেখানে অনেক টাকা বেতনে চাকরি পাবো।

অভিভাবক ইসাহাক আলী বলেন, আর একটু দেরী হলেই আমার ছেলেকে আমি আর ফিরে পেতাম না। পাচার করে দিতো আমার ছেলেকে। আমরা এই চক্রের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। যেন আর কেউ এমন কাজ কোনদিন করতে না পারে। স্থানীয়ভাবে যে শালিস হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট না। বড়শশী শেখপাড়া নূরানী তা'লীমুল কুরআন মাদ্রাসার মুহতামিম ক্বারী মাওলানা এনামুল হক এনাম বলেন, আমাকে বিপদে ফেলার জন্য কাউকে না জানিয়ে আমার পাঁচ ছাত্রকে অপহরণ করে ঢাকায় পাঠানোর চেষ্টা করেন রহুল আমিন প্রধানসহ তার লোকজন। পরে টের পেয়ে আমরা তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসি। আমি এই ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

চিলাহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল মোস্তাহারুল হাসান নয়ন জানান, আমার ইউনিয়নের পাঁচ ছাত্রকে অপহরণ করে ঢাকায় পাঠানোর চেষ্টা করে রহুল আমিন ও তার লোকজন। এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এরা ঢাকায় নিয়ে এদের নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করে দেয় কিংবা তাদের জিম্মি করে টাকা আদায় করে। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। আমি চেয়েছিলাম তাদের বিরুদ্ধে শক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হোক। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীরা শাসিলের মাধ্যমে জড়িতদের ছেড়ে দেয়।

জেলা পরিষদের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মউর রহমান জানান, বিচারে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ায় রহুল আমিনকে সবাই ক্ষমা করে দেয়। এছাড়া বয়স্ক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অন্য কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

বোদা থানার ওসি একে এম নুরুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর জেলা পরিষদ সদস্য মউর ইসলাম বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের কথা বলেন। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান করা হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। তবে আমরা অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত