এমপি রনজিতের স্ত্রীর স্বর্ণের ভরি ৭৫০ টাকা!
যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:০৮ আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:০৯
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর উপজেলা ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) সংসদ সদস্য রনজিত কুমার রায়ের হলফনামায় স্ত্রী নিয়তি রানী রায়ের ৬০ ভরি (তোলা) স্বর্ণের দাম ৪৫ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। সে হিসেবে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৫০ টাকা। আর সাংসদের ৬০ ভরি (তোলা) স্বর্ণের দাম ১ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।
সেই হিসেবে এক তোলা স্বর্ণের দাম প্রায় ১৭শ’ টাকা। স্বামী ও স্ত্রীর স্বর্ণের দাম অবিশ্বাস্য হলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় এই তথ্যই দেওয়া হয়েছে।
দুইবার সাংসদ নির্বাচিত হয়ে ‘আলাদিনের চেরাগ’ পেয়েছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য রনজিত কুমার রায় ও নিয়তি রানী রায় দম্পতি। অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ ৬ লাখ ৪৫ হাজার থেকে বেড়ে ৫ কোটি ৯১ লাখ ৬২ হাজার টাকা হয়েছে। এরমধ্যে টিনের ঘর থেকে ৩ কোটি ২৯ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন সাংসদ। আয়ের উৎস না থাকলেও শূন্য থেকে ২ কোটি ৬২ লাখ টাকার সম্পদের মালিক সাংসদের স্ত্রী। রনজিত রায়ের বাৎসরিক আয় ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৩৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৯৫ টাকা হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন রনজিত কুমার রায়।
নির্বাচন কমিশনের জমা দেওয়া ২০০৮ ও ২০১৮ সালের হলফনামা বিশ্লেষণে এই সব তথ্য পাওয়া গেছে।
২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় রনজিত কুমার রায় উল্লেখ করেন, অস্থাবর সম্পদ নগদ ১ লাখ টাকা, স্বর্ণ ও অন্যান্য ধাতব ১ লাখ টাকা, ইলেকট্রনিকস সামগ্রি ৩০ হাজার টাকা ও আসবাবপত্র ৩০ হাজার টাকা। আর স্থাবর সম্পদ পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া ১ লাখ টাকা মূল্যের ৪ বিঘা জমি ও খাজুরা বাজারে ৪ শতক জমির উপর ৫০ হাজার টাকা মূল্যের টিনের ঘর। সর্বসাকূল্যে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পাদ ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার। বাৎসরিক আয় ছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। আর স্ত্রী নিয়তি রানী রায়ের নগদ ৭০ হাজার টাকা ও ১৫ হাজার টাকা মূল্যের ৫ তোলা স্বর্ণ ছিল। তার অন্য কোনো আয়ের উৎস নেই।
নবম সংসদ নির্বাচনে রনজিত কুমার রায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দশ বছরের ব্যবধানে রনজিত রায় ও তার স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে বহুগুণ। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় সেই চিত্র ফুটে উছেছে।
২০১৮ সালের হলফনামায় রনজিত কুমার রায় উল্লেখ করেছেন, অস্থাবর সম্পদ নগদ ২ কোটি ২৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ২৩ লাখ টাকা ও ৭৭ লাখ টাকা মূল্যের দুটি জীপ গাড়ি, ১ লাখ টাকা মূল্যের ৬০ তোলা স্বর্ণ, ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিকস সামগ্রি ও ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র।
সাংসদের স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ নগদ ৩৪ লাখ টাকা, ডিপিএস ১৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা, প্রাইভেটকার ১৬ লাখ ১০ হাজার টাকা, ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের ৬০ তোলা স্বর্ণ, ৪০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রি ও ১৫ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র রয়েছে।
রনজিত কুমার রায় স্থাবর সম্পদের তালিকায় উল্লেখ করেছেন, ১ লাখ টাকা মূল্যের ১২ বিঘা জমি, ১০ লাখ টাকার অকৃষি জমি, ৯০ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের দালান, ২৯ লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যের রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।
সাংসদের স্ত্রী নিয়তি রানী রায়ের ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা মূল্যের তিনটি গাড়ি ও ৫০ লাখ টাকা মূল্যের দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যদিও তার আয়ের কোনো উৎস নেই। মোট ৫ কোটি ৯১ লাখ ৬২ হাজার টাকার সম্পদের মালিক রনজিত কুমার রায় ও নিয়তি রানী রায় দম্পতির কোন দায় দেনা নেই।
