ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

দূর নিয়ন্ত্রিত লালবাতি কমাতে পারবে ঢাকার যানজট?

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৪:৩৬

দূর নিয়ন্ত্রিত লালবাতি কমাতে পারবে ঢাকার যানজট?
দূর নিয়ন্ত্রিত রিমোট কন্ট্রোল ট্রাফিক সিগনাল লালবাতি (ফাইল ফটো)

যানজটের শহর বলে পরিচিত রাজধানী ঢাকাতে ট্রাফিক সামলাতে দূর নিয়ন্ত্রিত (রিমোট কন্ট্রোল) সিগনাল ব্যবস্থা চালু হতে যাচ্ছে শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় বা ইন্টারসেকশনে।

বিবিসি বাংলা তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পুরোপুরি ভাবে তৈরি করেছে এ ধরনের ছয়টি সিগনাল বাতি। এ সপ্তাহেই ডিজিটাল সিস্টেমের এই সিগনাল বাতিগুলো মেট্টোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের হাতে তুলে দেয়া হবে।

এই রিমোট কন্ট্রোল সিগনালের মূল বিশেষত্ব হল- একটা ক্রসিংয়ের কোন দিকে যানবাহনের চাপ কত- সেই অনুযায়ী দূর থেকেই স্থির করা হবে, লাল বা সবুজ বাতির মেয়াদ কোনদিকে কতটা হবে। ফলে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে দেখেই গাড়ির চালকরা বুঝতে পারবেন ওই সিগনালে তাকে ঠিক কতটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।

বর্তমানের ট্রাফিক সিগনালে যেমন আগে থেকেই ঠিক করা থাকত কোনদিকে লালবাতি কতক্ষণ থাকবে, এখানে তা হবে না- বরং দিনের কোন সময়ে কোন দিকে যানবাহনের চাপ কত সেটা বুঝে ‘রিয়েল টাইমে’ সেই মেয়াদটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

তবুও কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়, তা হলো- ঢাকা এই ধরনের ব্যবস্থার সঙ্গে কতটা অভ্যস্ত হতে পারবে? ট্রাফিক সিগনালে যদি পুলিশকর্মীরা না থাকেন, তাহলে কি শহরের চালকরা শুধু ডিজিটাল ইশারায় সিগনালের নিয়মকানুন মেনে চলবেন?

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান আফসানা হক জানান, ‘এটা আসলে নির্ভর করবে রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমটি কতটা নিখুঁতভাবে কাজ করবে তার ওপর।’

তিনি আরো বলেন, ‘যদি চালকরা ডিসপ্লেতে দেখতে পান তাদের ১২০ সেকেন্ড অপেক্ষা করতে হবে। এবং ঠিক দুই মিনিটের মাথাতেই গাড়ির চাকা চলতে শুরু করল, তাহলে তারা সেটা সানন্দে মেনে নেবেন। কিন্তু এটা যদি না হয় তাহলে তখন তারা কিন্তু ধৈর্য রাখবেন না, একটা বড় গন্ডগোল বেঁধে যাবে।’

তবে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন এই ডিজিটাল সিগনালের ব্যাপারে এখনই অতটা আশাবাদী হতে রাজি নন। তিনি মনে করেন, ‘ঢাকায় তীব্র যানজটের পেছনে মূল কারণটা হল যথেষ্ঠ পরিমাণ রাস্তার অভাব।’

তিনি বলেন, ‘একটা আধুনিক শহরে মোট জমির অন্তত ২৫ বা ৩০ শতাংশ রাস্তা থাকার প্রয়োজন। সেই জায়গায় আমাদের ঢাকাতে আছে মাত্র ৯ থেকে ১০ শতাংশ। যার ফলে এই যানজটের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুবই মুশকিল।’

ড. এস এম সালেহ উদ্দিনের ধারণা, ‘রিমোট ট্রাফিক সিগনাল প্রথম প্রথম কিছুটা স্বস্তি দেবে। শহরের কোনও কোনও জায়গায় যাতায়াত হয়তো একটু মসৃণও হতে পারে। কিন্তু আমার ধারণা অল্প দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি আবার যা ছিলো সেটাই হয়ে যাবে।’

এর কারণ হিসেবে পরিবহনের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন যে পরিমাণে নতুন গাড়ি যোগ হচ্ছে সেই তুলনায় এক ইঞ্চিও রাস্তা বাড়ছে না। কাজেই সিগনাল অ্যানালগই হোক বা ডিজিটাল, তাতে মূল সমস্যাটার খুব একটা সুরাহা হবে না।’

ঢাকার ট্রাফিক সমস্যা নিরসনে যে কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, ড. এস এম সালেহ উদ্দিনে সেই কমিটির অন্যতম সদস্য। ইতোমধ্যে ওই কমিটি তাদের রিপোর্টে জোর দিয়েছে শহরে বাস চলাচল ব্যবস্থাপনায় সংস্কার আনার ওপর, কারণ তারা দেখেছেন ঢাকায় যানজট সৃষ্টির পেছনে প্রধান কারণ হল বাসগুলো কোনও নিয়মকানুন মেনে চলে না।

এ ব্যাপারে কিছুটা আক্ষেপের সুরে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘গাজীপুর থেকে শুরু করে একই রুটে প্রায় ৩৫টি কোম্পানির বাস ঢাকাতে চলছে। মুনাফার জন্য তারা একে অন্যের সঙ্গে জঘন্য কম্পিটিশনেও মেতে আছে। গাড়িগুলো হয়তো ড্রাইভারদের কাছে লিজ দেওয়া। যার ফলে তারা নিজেদের বাড়তি লাভের আশায় একই রুটে, একই সময়ে গুঁতোগুঁতি করছেন। এমনকি বিপজ্জনকভাবে যত্রতত্র যাত্রী তুলছেন। আবার ওভারটেকও করছেন। রিমোট কন্ট্রোল সিগনাল কীভাবে তাদের সামলাবে?’

শহরের যে সব মোড়ে রিমোট কন্ট্রোল সিগনাল চালু হচ্ছে, সেখানে ডিজিটাল লালবাতির পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশও যান চলাচল তদারকির জন্য মোতায়েন থাকবে কি না তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু বুয়েটের অধ্যাপক আফসানা হক মনে করছেন, ‘পুলিশের লাঠির ভয় না থাকলেও ঢাকার গাড়ি চালকরা ট্রাফিক সিগনালের নিয়ম মেনে চলার জন্য প্রস্তুত কি না, এটা একটা দেখার মতো বিষয় হবে।’

অধ্যাপক আফসানা হকের ধারণা, ‘আমরা প্ল্যানিংয়ের ভাষায় একটা কথা বলি, কোনও প্রকল্প ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হলে সেটা কিছুতেই কাজ করবে না। কিন্তু যদি সেখানকার মানুষের ব্যবহার বা আচরণ অনুযায়ী সেই প্রকল্পের নকশা করা হয় তাহলেই তা কেবল ফলপ্রসূ হতে পারে। ফলে আমার মনে হয়, বার্লিনে যে ট্রাফিক সিগনাল সিস্টেম কাজ করবে, হুবুহু একই ধরনের সিস্টেম ঢাকাতে ব্যর্থও হতে পারে।’

তবে হাসতে হাসতে আফসানা হক বলেন, ‘কিন্তু ঢাকার প্রয়োজন, পরিস্থিতি অনুযায়ী সেটাকে ইম্প্রোভাইজ করা গেলে হয়তো এটা হিটও করে যেতে পারে।’

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, এ সপ্তাহের মধ্যেই শহরের কদম চত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, মৎস্য ভবন, কাকরাইল মসজিদ, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ও শাহবাগ এলাকায় ইন্টারসেকশনে রিমোট কন্ট্রোল সিগনাল চালু হবে।

কিন্তু এই আধুনিক ও নতুন ব্যবস্থা রাজধানীর যানজট নিরসনে ও ট্রাফিক চলাচলকে কতটা মসৃণ করতে সাহায্য করবে, তার কোনও স্পষ্ট উত্তর এখনও জানা যায়নি।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত