ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা

  নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:০৭

গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা

নোয়াখালীতে যৌতুকের কারণে গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তৃতীয় তলার ৩নং ওয়ার্ডে দগ্ধ ৩ সন্তানের জননী রেনজিনা বেগমের (২২) আর্তনাদ শুনে হাসপাতালের নার্স, রোগী ও স্বজনদের চোখ দিয়েও পানি ঝরছিল। বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর চাহিদা মতো যৌতুক আনতে অপারগতা প্রকাশ করায় এই হাল হয়েছে তার।

রেনজিনার অভিযোগ, সোমবার গভীর রাতে শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধারিয়ে দিয়ে তাকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেন স্বামী মাওলানা শাহাদাত হোসেন আফসার। পরে মঙ্গলবার সকালে তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে তার বাবার পরিবারের লোকজন।

স্থানীয়রা জানান, জেলার হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের পূর্ব বিরবিরি গ্রামের নুর রহমানের মেয়ে রেনজিনা বেগমের সঙ্গে ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর পাশ্ববর্তী উপজেলা চট্টগ্রামের স্বন্দীপের মুসাপুর গ্রামের সিদ্দিক টেন্ডরের ছেলে কোরআনের হাফেজ মাওলানা শাহাদাত হোসেন আফসারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এরপর তাদের সংসারে জন্ম নেয় ২ ছেলে ও এক মেয়ে।

রেনজিনার বড় ভাই দিদার উদ্দিন ও রহমত উল্যাহ বলেন, বিয়ের পর আফসার সৌদিআরব, কাতার ও আবুধাবিতে প্রবাস জীবন-যাপন করেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন মসজিদে ইমামতি করেন। প্রবাসে যাওয়ার সময় তাকে দফায় দফায় রেনজিনার পরিবার আর্থিক সহযোগিতা করে। ২০১৬ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি নোয়াখালীর কবিরহাটে একটি মসজিদে ইমামতির চাকরি নেন। এ সময় আফসার রেনজিনার কাছে পুনরায় যৌতুক দাবি করেন। রেনজিনা এর প্রতিবাদ করে অপারগতা প্রকাশ করলে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে।

দগ্ধ রেনজিনা বেগম জানান, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে আফসার প্রায়ই তাকে নির্যাতন করতেন। পৌষ মাসের শীতে তাকে কম্বলও গায়ে দিতে দিতেন না। গত রোববার সকালে আফসার রেনজিনাকে বাবার বাড়ি থেকে কম্বল ও টাকা আনার জন্য চাপ দেয়। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। রোববার রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে রেনজিনা বেগম তার তিন সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সোমবার ভোর ৪টার সময় আফসার রেনজিনাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন এবং আগুন পোহানোর প্রস্তাব দেন। রেনজিনা এ প্রস্তাবে অসম্মতি জানিয়ে পুনরায় ঘুমাতে যান। এ সময় আফসার রেনজিনাকে মারধর শুরু করেন।

এক পর্যায়ে তাকে একটি রুমে নিয়ে আটকে রাখেন। কিছুক্ষণ পর বোতলভর্তি পেট্রোল এনে রেনজিনার মাথায় ও শরীরে ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় তার চিৎকার শুনে প্রতিবেশী কামাল সওদাগর, তার স্ত্রী এবং আরেক প্রতিবেশী নাসিমা এগিয়ে ঘটনাস্থলে এসে পানি দিয়ে আগুন নেভান। ততক্ষণে তার মাথা, চোখ, গলা, বুক, পিঠ ও বাম হাত পুড়ে যায়।

তিনি জানান, প্রতিবেশীরা সোমবার সকালে তাকে স্বন্দ্বীপ মেডিকেলে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তার বাবার পরিবারকে খবর দেয়। খবর পেয়ে ভাই দিদার উদ্দিন ও রহমত উল্যাহ তাকে উদ্ধার করে মঙ্গলবার ভোরে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহাবুবুল আলম চৌধুরী বলেন, গৃহবধুর পুরো মাথা, একটি হাত, পিঠ ও বুকে দগ্ধ হয়েছে। পেট্রোলে দগ্ধ রোগীগুলো ঝুকিপূর্ণ হয়ে থাকে। এ হাসপাতালে পোড়া রোগীদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় তাকে ঢাকা সরকারি বার্ন হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত