ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘বাংলাদেশ জার্নালে’ সংবাদ প্রকাশের পর মামলা নিলো পুলিশ

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০১৯, ০৩:২২  
আপডেট :
 ১০ জানুয়ারি ২০১৯, ০৪:৩৫

‘বাংলাদেশ জার্নালে’ সংবাদ প্রকাশের পর মামলা নিলো পুলিশ

দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘বাংলাদেশ জার্নালে’ একটি সংবাদ প্রকাশের পর থানায় মামলা নিয়েছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তুলেছে’ এই শিরোনামে বাংলাদেশ জার্নাল পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। মূলতো এই প্রতিবেদনটি লেখা হয়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়গাঁও চামেশ্বরী চৌধুরী হাট এলাকার আওয়ামী লীগের কর্মী মাহাবুব বাহিনীর নামে।

ওই প্রতিবেদনটিতে ওঠে আসে কিভাবে মাহাবুবের দাপটে চৌরঙ্গী চৌধুরী হাট এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। ভুক্তভোগীরা বাংলাদেশ জার্নালের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি তানভীর হাসানের কাছে মাহবুবের কর্মী বাহিনীর নামে ব্যাপক অভিযোগ তুলে ধরে। তারা বলেন, মাহবুব দিনে দুপুরে রাস্তার পাশে সরকারি গাছ কেটে নিয়ে যায়। এমনকি এলাকার সাধারণ মানুষকে নিয়মিত ভয়ভীতি দেখায় মাহাবুব ও তার কর্মী বাহিনী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, নির্বাচনের আগে থেকেই মাহাবুব ও তার ছোট ভাই ছাত্রলীগের বড়নেতা দাবিদার আসাদুজ্জামান রনি সরকার দলীয় নেতা বলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তুলেছে। সোমবার সবার উপস্থিতিতে মাহাবুবের লোকজন পোস্ট অফিসের সামনের গাছ দুটো কেটেছে। কিছুদিন আগে তাদের লোকজন এই বাজারের প্রতিটি দোকানে ভাঙচুর করে তাণ্ডব চালিয়েছিলো।

এই সংবাদ প্রকাশের পর সরকারি গাছ কাটার অভিযোগে প্রভাবশালী নেতা মাহাবুরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছে ইউনিয়ন ভূমি অফিস। মঙ্গলবার বড়গাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সহকারি ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার অবৈধভাবে গাছ কর্তনের অভিযোগে থানায় লিখিত এজাহার দাখিল করেন।

এজাহারের আসামিরা হলেন- চামেশ্বরী এলাকার মৃত খতিব উদ্দিনের ছেলে আওয়ামী লীগের নেতা মাহাবুর আলম, সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাজেদুর রহমান ও দেবীপুর এলাকার সমশের আলীর ছেলে গোলাম রব্বানী।

এজাহার যা লেখা হয়েছে, সদর উপজেলা বড়গাঁও ইউনিয়নের চামেশ্বরী চৌধুরী হাট এলাকায় রাস্তার পাশে দুটো বড় ইউক্লিপটাস গাছ মাহাবুরের নেতৃত্বে গত সোমবার বিকেলে কেটে ফেলা হয়। খবর পেয়ে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের লোক ঘটনাস্থলে গেলে তাৎক্ষণিক গাছ দুটো সরিয়ে ফেলা হয়। ঘটনাটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন।

গাছ কর্তনের সময় প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই জানান, সরকারি গাছ দুটো কাটার সময় অনেকেই বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবি ভাই মাহাবুব আলমের ক্ষমতার দাপটে দ্রুত গাছ গুলো কেটে সরিয়ে ফেলেন।

মাহাবুব আলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতার ভাই এবং একটি কলেজের প্রভাষকও। তবুও নিজেকে সরকার দলীয় লোক পরিচয়ে ক্ষমতার জোর খাটিয়ে এলাকার গাছ কর্তনসহ বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বড়গাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সহকারি ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘কর্তনকৃত গাছ দুটো সরকারি জমিতে ছিল। অবৈধভাবে সরকারি গাছ কর্তনের নিয়ম নেই। তাই উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় গাছ কাটার সাথে জড়িত থাকায় তিনজনের নামে থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে।’

অভিযুক্ত প্রভাবশালী নেতা মাহাবুব আলমের সাথে গাছ কর্তনের বিষয়ে জানার জন্য বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাত সিং বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘গাছ কাটার কথা শুনেছি। ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।’

উপেজলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘টেন্ডার ছাড়া ব্যক্তিগত ভাবে কেউ সরকারি গাছ কাটলে সেটা আইনত দণ্ডনীয়। যেহেতু দাগ খতিয়ানে সেহেতু গাছগুলো সরকারি বিবেচিত। তাই ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে অভিযোগ উঠেছে গাছ কর্তনের বিষয়টি আড়াল করার পাঁয়তারা করছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান। তিনি বাংলাদেশ জার্নালের কাছে গাছ কর্তনের অভিযোগ দায়েরের ব্যাপারটি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘গাছ কর্তনের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।’

কিন্তু ৮ ডিসেম্বর সদর থানায় জমা দেয়া লিখিত এজাহারে ডিউটি অফিসারের সাক্ষর রয়েছে। এজাহারের রিসিভ কপি ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা জব্বারের কাছে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত