ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

বিমানে মাতাল যাত্রী সেদিন কী ঘটিয়েছিলো?

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:০৯

বিমানে মাতাল যাত্রী সেদিন কী ঘটিয়েছিলো?

বাংলাদেশ বিমানের বিজি ২০২ ফ্লাইটি গত ৪ঠা জানুয়ারি লন্ডন থেকে যাত্রী বোঝাই হয়ে রওনা দিয়েছিলো সিলেটের উদ্দেশে। সেই ফ্লাইটে যাত্রীদের একজনকে ঘিরেই তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে । তার আসন নাম্বার ছিলো ৪২ডি। বিমানে তিনি উঠেছিলেন ঠিকমতই কিন্তু দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সিলেটে এসে তার বাড়ি যাওয়া হয়নি। কারণ বাড়ির বদলে তাকে যেতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী হেফাজতে। আর এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফেসবুকে রীতিমত ভাইরাল হয়ে গেছে ওই যাত্রীর কাণ্ড। সিলেটে অবতরণের পরপরই তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ বিমানের জেনারেল ম্যানেজার শাকিল মেরাজ বিবিসি বাংলাকে বলছেন ওই যাত্রীর আচরণ ছিলো নিরাপদ উড্ডয়নের জন্য বড় একটি হুমকি।

‘বিমান যখন আকাশে তখন তিনি সহিংস আচরণ করেছেন। পরে ক্যাপ্টেন তার আইনানুগ ক্ষমতা অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছেন। পরে বিমান সিলেটে অবতরণের পর তাকে পুলিশে দেয়া হয়েছে’। বিমানে কি করেছিলেন ওই যাত্রী? ওই ফ্লাইটের কেবিন ইনচার্জের রিপোর্ট বলছে ওই যাত্রী আগে থেকেই প্রচুর মদ পান করেছিলেন। পরে তাকে তল্লাশি করে তার কাছে মদের বোতলও পাওয়া গেছে।

শাকিল মেরাজ বলছেন, ‘বিমানে ২০০৬ সাল থেকে অ্যালকোহল দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। ওই যাত্রী সাথে করে মদের বোতল নিয়ে উঠেছিলেন।’

প্রসঙ্গত, বিমানে ওঠার আগে যাত্রীরা ডিউটি ফ্রি শপ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ মদ কিনতে পারেন এবং সেগুলো তারা সাথে নিয়েই বিমানে উঠতে পারেন।

শাকিল মেরাজ বলছেন, কেবিন ইন চার্জের রিপোর্ট অনুযায়ী লন্ডন থেকে বিমান ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওই যাত্রী মাতলামি শুরু করেন। তিনি কেবিন ক্রুদের প্রচণ্ড বিরক্ত করছিলেন। কেবিন ক্রু ও যাত্রীরাও অনেকে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এক পর্যায়ে বিমানবালাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন ও একজন ক্রুর আঙ্গুলে কামড় দেন। হাতে থাকা প্লেট ছুঁড়ে মারেন।

শাকিল মেরাজ বলেন, ‘ওই যাত্রীকে কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছিলোনা এবং এর পর ক্যাপ্টেনের নির্দেশে কেবিন ক্রুরা যাত্রীদের সহায়তায় তার নিজের আসনের সাথে রশি দিয়ে তাকে বেঁধে ফেলে নিরাপত্তার স্বার্থে। কারণ বিমান তখন আকাশে এবং যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনার আশংকাও ছিলো।’

তিনি বলেন, বিমানের স্টাফদেরও অধিকার আছে নিজেকে রক্ষা করার এবং তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন ওই যাত্রীকে নিবৃত্ত করতে।

কিন্তু বিমান ক্রুরা কি সঠিক ভাবে ঘটনাটি মোকাবেলা করতে পেরেছে?

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলছেন, ‘ঘটনাটি যেভাবে সামাল দেয়া হয়েছে তাতে পেশাদারিত্বের যথেষ্ট অভাব ছিলো।’

‘আমি ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দেখেছি। আমার মনে হয়েছে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উড্ডয়নরত বিমানে একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যদিও এ ধরণের ঘটনা কিভাবে সামাল দেয়া হবে তার গাইডলাইন আছে। দেখতে হবে অন্য যাত্রীদের ন্যূনতম যেনো অসুবিধে না হয়। অথচ এখানে দেখলাম সব ক্রুর সাথে সব যাত্রীও জড়িত হয়ে গেছে।’

মিস্টার আলম বলছেন বিশ্বজুড়ে উড়োজাহাজে প্রতিনিয়তই নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে এবং এয়ারলাইন্স স্টাফরা দক্ষতার সাথেই সেগুলো সামলে নেন।

‘এজন্য ক্রুদের আলাদা প্রশিক্ষণ থাকে যে তারা কিভাবে সহিংস বা অসদাচরণ করে এমন যাত্রীদের সামলাবে। এবং তাতে ব্যর্থ হলেও কিভাবে শেষ পর্যন্ত তাকে বেঁধে রাখবে তারও একটি নিয়ম আছে। এক্ষেত্রে ওই যাত্রীকে বেঁধে রাখা হয়েছে কিন্তু যেভাবে পুরো উড়োজাহাজে সবাই জড়িত হয়েছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত।’

ওয়াহিদুল আলম বলেন ভিডিওতেই দেখা গেছে অন্য যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্কের ভাব তৈরি হয়েছে, যদিও গাইডলাইনে বলা আছে ন্যুনতম সংখ্যক মানুষ এতে জড়িত হবে যাতে যাত্রীদের জন্য কোনো সমস্যা না হয়।

‘কিন্তু এক্ষেত্রে পুরো এয়ারক্রাফটের সবাই যেনো জড়িত হয়ে গেছে।’

তবে বিমান ম্যানেজার শাকিল মেরাজ বলছেন ক্রুরা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে এবং অন্য যাত্রীরাও সহায়তা করেছে।

‘তবে এখন থেকে বিমানে হ্যান্ডকাফ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতদিন বিমানে হ্যান্ডকাফ রাখা হতোনা। কিন্তু এখন থেকে রাখা হবে যাতে করে এ ধরণের ঘটনায় ব্যবহার করা যায়’, বলেন তিনি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • পঠিত