ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

রপ্তানি বাড়লেও লাভের মুখ দেখছেনা টমেটো চাষীরা

  জামালপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:৩১

রপ্তানি বাড়লেও লাভের মুখ দেখছেনা টমেটো চাষীরা

জামালপুরের টমেটোর বাজার নান্দিনা। খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় মুখরিত বাজারটি। ভোর সকাল থেকে ক্ষেত থেকে ছোট ছোট ভ্যানগাড়িতে করে বাজারে আসতে থাকে টমেটো। টমেটো নামানো, বাছাই, বাক্সভর্তি ও ট্রাকে উঠানোয় শ্রমিকদের দম ফেলানোর ফুসরত নেই।

এখান থেকে প্রতিদিন অর্ধ শতাধিকের উপরে ট্রাক ভর্তি টমেটো যাচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। হাইড্রোজ ও ফরমালিনমুক্ত এখানকার উৎপাদিত টমেটোর চাহিদা দেশের সিমানা পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। শুরুর দিকে ১২শ থেকে ১৮শ টাকা মণ, বর্তমানে সাড়ে ৪শ টাকা মণ দরে টমেটো বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে টমেটোর দাম নেমে আসবে মণ প্রতি ১শ থেকে ৮০ টাকায়। মানে প্রতি কেজি ২ টাকা ধরে টমেটো বিক্রি হবে এ বাজারে। চাহিদা থাকলেও সংরক্ষণের অভাবে টমেটো চাষিরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেনা। এ অঞ্চলে টমেটো সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছে টমেটো চাষি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় টমেটো চাষি ও কৃষি অফিস সুত্র জানায়, জামালপুরের সদর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বেশকটি ইউনিয়নের অসংখ্য চরে টমেটোর আবাদে ঝুঁকে পড়েছে এখানকানকার চাষিরা। বেলে, দোআঁশ মাটি টমেটো চাষের জন্য উর্বর। এবার সদর উপজেলায় ১৩শ হেক্টর জমিতে সফল, বিউটিফুল, উদয়ন ও উন্নয়ন জাতের টমেটোর আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ১শ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়। প্রতিবিঘায় উৎপাদন হয় প্রায় দেড়শ মণ টমেটো । বিঘাতে খরচ হয় ৪০ হাজার টাকা। আসল দামও উঠে আসছেনা দাবি কৃষকদের।

সদর উপজেলার লক্ষীরচর ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের টমেটো চাষি শেখ মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া (৪৫) জানান, দেড় বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করেছি। বিঘায় দেড়শ মণ টমেটো উৎপাদন হয়েছে। পলিথিন দিয়ে বিজতলার সেড তৈরি, বীজ রোপন, জমি তৈরি, ভিটি তৈরি, চারা রোপন, প্রতি চারার সাথে বাঁশের খুঁটি লাগানো, নিড়ানি, প্রতি সপ্তাহ পোকামাকড় দমনে কীটনাশক, কোয়াশা থেকে রক্ষায়ও কীটনাশকসহ দফায় দফায় কামলা খরচ ও পরিবহনে ব্যায় সব মিলিয়ে যা খরচ হয় আসলও উঠেনা।

চর যথার্থপুরের ভাটি পাড়ার টমেটো চাষি লাল মিয়া আকন্দ (৪০) বলেন, বর্তমানে ৪শ থেকে ৫০ টাকা মণ দরে টমেটো বিক্রি করছি। সপ্তাহ খানিকের মধ্যে দাম নেমে যাবে। ২ টাকা কেজি টমেটো বিক্রি হলে টমেটো উঠার কামলা খরচ ও পরিবহন খরচ মিটিয়ে পকেটে টাকা থাকবেনা। তখন ক্ষেতের টমেটো ক্ষেতেই পচেঁ নষ্ট হবে।

তুলশির চরের টমেটো চাষি আব্দুল মোতালেব (৫৫) বলেন, টমেটোর ফলন ভাল হলেও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় লাভের মুখ দেখছিনা। ১শত মন টমেটো বাজারে এনেছি। পাইকাররা যা দাম ধরবে তাই দিয়ে বিক্রি করতে হবে। ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। সরকারী ও বেসরকারী উদ্দোগে সবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপন হলে সেখানে রেখে সঠিক মুল্যে টমেটো বিক্রি করতে পারতাম। রপ্তানি বেশি ক্রেতা কম থাকায় পানির দরে টমেটো বিক্রি করছি।

ঢাকার কাওরান বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী হামেদ আলী (৪৫) বলেন, এই বাজার থেকে সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ টাকা মণ কিনে ঢাকায় ৭শ থেকে ৮শ টাকা দরে টমেটো বিক্রি করি। এর মধ্যে পরিবহন খরচ ছাড়াও রোডে পুলিশ ও পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের চাঁদা গুনতে হয়।

আড়ৎদার আনছার আলী বলেন, ফলন ভাল হওয়ায় ব্যবসা ভাল। তবে প্রতি ক্যারেট (বাক্স) ৩ টাকা হিসেবে প্রতি ট্রাকে ৭ হাজার টাকা খাজনা গুণতে হয়। অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ তুলেন বাজার ইজারাদারের বিরুদ্ধে।

অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে ইজারাদার রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর এই রেটেই খাজনা আদায় হয়। বাজার ইজারা ও নিয়ন্ত্রণসহ নানা খাতে খরচ হয়। খুব একটা যে আমাদের থাকে তাও না।

জামালপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাখাওয়াত ইকরাম বলেন, এবার টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা লোকসানের কথা যেভাবে বলছে, আসলে লোকসান হওয়ার কথা নয়। টমেটো সংরক্ষণ করা গেলে তাদের লাভ আরো বেশি হতো। সদর উপজেলায় সবজি হিমাগার স্থাপনে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। হিমাগার স্থাপন হলে টমেটোর চাষিদের শেষ মুর্হুতে দাম কমে যাওয়ায় ক্ষেতের টমেটো ক্ষেতে নষ্ট হবেনা। তাদের মুখে ফুটে উঠবে খুশির ঝিলিক।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত