ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঘুষ নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে তোলপাড়

  জামালপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:২৭

ঘুষ নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে তোলপাড়

জামালপুরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ৬ হাজার টাকা ঘুষ দিতে না পারায় দুই মুক্তিযোদ্ধা দলিল লেখকের লাইসেন্স নবায়নের কাগজ পত্র জমা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে এলাকায়।

পরিস্থিতির মুখে সদর সাব-রেজিস্ট্রার ঘুষের টাকা ফেরতের অঙ্গীকার করলেন।

জানা যায়, সদর উপজেলার রানাগাছা ইউনিয়নের দড়িহামিদপুর গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান (৭০) ও তুলশীর চর ইউনিয়নের কাজিয়ার চরের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন (৬৫) র্দীঘদিন ধরে জামালপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখকের পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

দলিল লেখক লাইসেন্স নবায়নে ২৫০ টাকা ব্যাংক চালান ও ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা ভ্যাট দেয়ার পরও সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কাগজপত্র জমা নিতে সাব-রেজিস্ট্রারের সহকারী মমতা চৌধুরী ৩ হাজার টাকা করে দুই মুক্তিযোদ্ধার কাছে ৬ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন।

তারা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাদের কাগজপত্র জমা নেয় নি। কাগজপত্র জমা দিতে দুই মুক্তিযোদ্ধা দুই সপ্তাহ ধরে ঘুরছেন রেজিস্ট্রি অফিসের বারান্দায়।

কর্মহীন হয়ে পড়ার আশংকায় তাদের চোখে মুখে অনিশ্চয়তার ছাপ। অভিযোগকারী ১১নং সেক্টরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান বলেন, ৪৫ বছর যাবত জামালপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখকের কাজ করছি। নিয়মমাফিক ব্যাংক চালান জমা দিয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে লাইসেন্স নবায়ন সংক্রান্ত কাগজ পত্র জমা দিতে গেলে আমার কাছে ৩ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে। আমি সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সহকারীকে বলেছি, দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি অনৈতিক ঘুষ দিয়ে কাজ করার জন্য নয়। একটি টাকা ঘুষ দিতে পারবোনা। আমার কাগজ জমা না নিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে ঘুষ আদায়ে টালবাহানা করছে।

ঘুষ ছাড়া লাইসেন্স নবায়নের কাগজপত্র জমা নেয়া ও এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি।

একই অভিযোগ করেন অপর ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিনও। এছাড়াও সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরত দলিল লেখকরা অভিযোগ করেন, প্রতিবছর ব্যাংক চালান জমা দেয়ার পরও অফিস খরচের নামে লাইসেন্স নবায়নে লাইসেন্স প্রতি ৩ হাজার টাকা করে উৎকোচ গুণতে হয়। এখানে কর্মরত ২৭০ জন দলিল লেখকের মধ্যে প্রভাবশালী নেতৃস্থানীয় দলিল লেখক ছাড়া সিংহভাগ দলিল লেখকের লাইসেন্স নবায়নে ৩ হাজার করে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হয়েছে।

এভাবেই লাইসেন্স নবায়নের নামে প্রায় ৭লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ হাতিয়ে নিয়েছেন জামালপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

শুধু লাইসেন্স নবায়ন নয়, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে টাকা ছাড়া কোন সেবা মিলেনা। জমি ক্রয়-বিক্রয়ে রেজিস্ট্রিসহ অন্যান্য কাজ সম্পাদনে গলাকাটা ফি আদায় করছে সাধারণ মানুষের কাছে।

জেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, অনেকের কাছে নেয়, আমার ও আমার ছেলের দিতে হয় নাই। মুক্তিযোদ্ধা দু’জনের কাছে টাকা চেয়েছে, বিষয়টি আমি শুনলাম, তারা আমার কাছে আসলে সমিতির সভাপতি হিসেবে তাদের পাশে দাঁড়াবো।

সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কথা হয় সাব-রেজিস্ট্রার মো: সাখাওয়াত হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, দলিল লেখক লাইসেন্স নবায়নে ব্যাংক চালান ছাড়া অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সুযোগ নেই। কেউ নিয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগকারী দুই মুক্তিযোদ্ধার লাইসেন্স নবায়নের কাজ দ্রুত করে দিচ্ছি।

অপর প্রশ্নে, অন্যান্য দলিল লেখকের কাছে তার সহকারী ৩ হাজার টাকা করে ঘুষ আদায় করেছে জেনে সহকারী মমতা চৌধুরীকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করেন। মমতা চৌধুরী অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করলে আগামী রোববারের মধ্যে ঘুষের টাকা দলিল লেখকদের ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেন সদর সাব রেজিস্ট্রার।

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত