ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

সেই আবজালের দুই ভাই ও তিন শ্যালককে তলব

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:১৬

সেই আবজালের দুই ভাই ও তিন শ্যালককে তলব

স্বাস্থ্য অধিদফতরে দুর্নীতির চক্রের সাথে জড়িত থেকে শত কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির আরো পাঁচজনকে ২২ জানুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তারা স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার বরখাস্ত হওয়া হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেনের নিকটাত্মীয়। বুধবার দুদকের উপ-পরিচালক শামসুল আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।

উপ-পরিচালক শামসুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। যাদেরকে তলব করা হয়েছে তারা হলেন- ফরিদপুর টিবি হাসপাতালের ল্যাব এটেনডেন্ট বেলায়েত হোসেন, জাতীয় অ্যাজমা সেন্টারের হিসাবরক্ষক লিয়াকত হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালক রকিবুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের উচ্চমান সহকারী বুলবুল ইসলাম ও খুলনা মেডিকেল কলেজের অফিস সহকারী শরিফুল ইসলাম।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, নতুন করে তলবকৃতরা দুর্নীতির দায়ে বরখাস্তকৃত স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেনের ভাই ও শ্যালক। এর মধ্যে বেলায়েত ও লিয়াকত আবজালের ভাই। বাকি তিনজন তার শ্যালক।

একটি সূত্রে জানা গেছে, যাদেরকে তলব করা হয়েছে তারা স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আবজাল হোসেনের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন। তার স্ত্রী রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার সাবেক স্টেনোগ্রাফার। এখন তিনি রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে ব্যবসা করেন।

আবজাল হোসেনের জালিয়াতির বিষয়ে দুদকের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ হাজার টাকার বেতন পেলেও ঢাকার উত্তরায় তিনি ও তার স্ত্রীর নামে বাড়ি আছে পাঁচটি। আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। আর রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ২৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট। দেশে–বিদেশে আছে বাড়ি–মার্কেটসহ অনেক সম্পদ। এসব সম্পদের বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি।

দুদকের অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, আবজাল হোসেন গত এক বছরে সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ২৮ বারেরও বেশি সপরিবারে সফর করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির পর্টার স্ট্রিট মিন্টুতে যে বাড়ি কিনেছেন, তার দাম দুই লাখ ডলারেরও বেশি। এই অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

এ ছাড়া একই ধরনের ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (বাজেট) আনিসুর রহমানকে গত সোমবার দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। অধিদফতরের আরও দুই পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হলেও তারা সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। তারা হলেন-পরিচালক ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন ও অধ্যাপক ডা. আবদুর রশীদ।

দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরে একটি সিন্ডিকেট করে সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বিদেশে অর্থ পাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভুত অর্জনের অভিযোগ রয়েছে উল্লিখিতদের বিরুদ্ধে।

আবজাল হোসেনের বাড়ি ফরিদপুরে। ১৯৯২ সালে তৃতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি তার। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের সুপারিশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৫টি মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে অফিস সহকারী পদে অস্থায়ীভাবে যোগ দেন। ২০০০ সালে প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হলে তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ক্যাশিয়ার পদে বদলি হন। এই ধারাবাহিকতায় তিনি বর্তমান পদে যোগ দেন। সম্প্রতি তাকে সাতক্ষীরায় বদলি করা হলেও দুই মাসের মধ্যে ঢাকা ফিরে আসেন।

তার স্ত্রী রুবিনা খানম একই প্রকল্পে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে যোগ দেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে ব্যবসা শুরু করেন। মূলত স্বামী-স্ত্রী মিলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একচেটিয়া ব্যবসা করার জন্য তারা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

অফিস সহকারী বা কেরানি হিসেবে চাকরি নিলেও আবজাল হোসেন অল্প সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, বিএনপি আমলে নিয়োগ পেলেও সব আমলেই সমানভাবে প্রভাবশালী ছিলেন তিনি। নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, কাজ না করে বিল তুলে নেওয়ার মতো কাজগুলো করেছেন আবজাল। এর মাধ্যমে বিপুল বিত্তবৈভব গড়ে তুলেছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অভিযোগ।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত