ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২২ মিনিট আগে
শিরোনাম

শত বছরে পাকশী রেলওয়ে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

  পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০১:০০

শত বছরে পাকশী রেলওয়ে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ শত বছরের মাইলফলকে পা রাখলো পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ঐতিহ্যবাহি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাকশী রেলওয়ে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯১৮ সালে বৃটিশ শাসনামলের পরিকল্পিত নগরী পাকশীর অপরুপ নৈসর্গিক পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই বিদ্যালয়টি। শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে দুইদিনব্যাপী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই শতবর্ষকে কেন্দ্র করে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ম্যানেজিং কমিটি, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী মেতেছে যেন এক উৎসবে।

এই উৎসবে বহু বছর পর তাদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যালয়টির ভবন ও দেয়ালে লাল, সাদা রঙে নানা অলঙ্করনে সাজানো হয়েছে। দেয়াল জুড়ে আল্পনা, আলোকসজ্জা, স্কুলের প্রধান সড়ক সংস্কার করাতে দীর্ঘদিন পর যেন নবযৌবন ফিরে পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

শুক্রবার বিকাল ৩টায় দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন পাবনা-৪ আসনের সাংসদ, ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান শরীফ ডিলু।

এছাড়াও শনিবার দ্বিতীয়দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী রফিকুল আলম। সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় ব্যাবস্থাপক (ডিআরএম) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম।

পাবনা-৪ আসনের শামসুর রহমান শরীফ এমপি’র সহধর্মিণী কামরুন্নাহার শরীফ স্বাধীনতা যুদ্ধের কয়েক বছর আগের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। শত বছর পূর্তির অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার বাবা ছিলেন ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং আমি শিক্ষার্থী ছিলাম। অষ্টম শ্রেনী পাশ করার পরই আমার বিয়ে হয়ে যায়। এই স্কুলের বাউন্ডারির ভেতরই ছিল আমাদের বাড়ি। শৈশব আর কৈশোরের বহু স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে স্কুলটির সাথে। প্রাণের সেই প্রতিষ্ঠানের শতবর্ষ হতে যাচ্ছে ভাবতেই কেমন যেন মনে হচ্ছে। যারা এখনো বেঁচে আছে, তারা শতবর্ষের এই উৎসবে মিলিত হবে। জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলোর স্মৃতিচারণের একটি অপূর্ব সুযোগ বলে মনে করছি।

১৯৮৪ সালের মানবিক বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী সালমা রশীদ শুক্লা। তিনি বর্তমানে পাকশী এমএস কলোনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। তিনি বলেন, শতবর্ষ বিশাল ব্যাপার। আমি গর্বিত ও আনন্দিত যে এই স্কুলের শত বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে আমি এই স্কুলের ছাত্রী ছিলাম। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় স্বাধীনতার পূর্বে ও স্বাধীনতার পর যে আপুরা, সহপাঠিরা আমাদের সাথে লেখাপড়া করতো, বহু বছর পর তাদের অনেককে দেখতে পাবো, যা চিরদিন স্মৃতিতে থাকবে।

ঈশ্বরদী উপজেলা যুব মহিলা লীগের আহবায়ক আফিয়া ফেরদৌস কাঁকলী এই প্রতিষ্ঠানের এসএসসি মানবিক বিভাগের ৮৮ সালের প্রাক্তন ছাত্রী। তিনি তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, শতবর্ষ নিয়ে আমি বেশি আবেগময় ও আনন্দিত। স্কুলে শুধু পড়াশোনা নয়, আমার জন্মই এই প্রতিষ্ঠানের ভিতরে। মা ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা। ছোটবেলা যখন বুদ্ধি হয় নি, তখন হাঁটি হাঁটি পা পা করে আমি সব ক্লাসে ঘুরে বেড়িয়েছি। স্কুলের ভিতরে যে গাছগুলো রয়েছে, তার সাথে আমার শৈশবের এক দুরন্তপনা জড়িয়ে আছে। যা আমার জীবনে আর ফিরে আসবে না। এখন এই স্মৃতিগুলোই ইতিহাস।

বেসরকারী স্যাটেলাইল টেলিভিশন মোহনা টিভির নিউজ পেজেন্টার ও প্রাক্তন ছাত্রী মৌসুম ইসলাম শান্তা ১৯৯৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বলেন, বাবা রেলওয়েতে সরকারী চাকরি করতেন। সেই সুবাদে পাকশীতে ছোটবেলা হতে বড় হয়েছি। আমার স্কুল সেঁজেছে অপরুপ সাঁজে শতবছর পূর্তিতে। এই স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছেন। শতবর্ষ পূর্তিতে এক মনোমুগ্ধকর মিলন মেলা হতে যাচ্ছে, এটাই আনন্দের।

৯৬ সালের মানবিক বিভাগের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও প্রাক্তন ছাত্রী ও সমাজসেবী আইরিন পারভীন সিমি জানান, খুব ভালো লাগছে, এটা ভেবে যে, ছোটবেলার কত স্মৃতি, কখনো ভাবতে পারিনি, তাদের সাথে দেখা হবে, শতবর্ষ পূর্তিতে দুটি দিনের জন্য মিলিত হবো এক উৎসবে।

শতবর্ষ পূর্তি উৎসব উদযাপন পরিষদের আহবায়ক, পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল ইসলাম হব্বুল বলেন, এই প্রতিষ্ঠান এর সকল শিক্ষক শিক্ষিকা, ম্যানেজিং কমিটি, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে, অনেক প্রতিক্ষা যেন শেষ হতে যাচ্ছে। এখন সকলে মেতেছে যেন এক উৎসবে। এই উৎসবে বহু বছর পর তাদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও দেশে ও দেশের বাহিরে ছড়িয়ে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের কৃতি শিক্ষার্থীরা। তাদের সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে এই অনুষ্ঠানে আসার জন্য রেজিস্ট্রেশন করানো হয়েছে। প্রাক্তন ছাত্রী প্রায় ৭ শতাধিক ও বর্তমানে ৩ শতাধিক ছাত্রীদের এক মিলনমেলা ঘটবে দুইদিনের এই আয়োজনে।

পাকশী রেলওয়ে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন পরিষদ এর সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন জানান, এই উৎসবকে ঘিরে বিদ্যালয়টি মূল ভবন ও দেয়ালে লাল, সাদা রঙে সাজানো হয়েছে। দেয়াল জুড়ে আল্পনা আঁকা হয়েছে। এছাড়াও দুই দিনব্যাপী নানা আয়োজন ও সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত