ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

আমন চাল সংগ্রহে অনিয়ম

  জামালপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:২৭

আমন চাল সংগ্রহে অনিয়ম

জামালপুরে আমনের চাল সংগ্রহে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চালের বরাদ্দ নিয়ে সক্রিয় রয়েছে অসাধু সিন্ডিকেট। প্রকৃত মিল মালিকরা বরাদ্দ কম পেলেও কাগজে থাকা মিলগুলো বরাদ্দ পেয়েছে অনেক বেশি। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের এক কর্মচারী এই সিন্ডিকেটের মুল হোতা। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ার থাকা ওই কর্মচারীর কাছে জিম্মি পুরো জেলার মিল মালিকরা।

জানা গেছে, চলতি আমন মওসুমে জামালপুর জেলায় সরকারিভাবে চাল সংগ্রহের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৭ হাজার ৬৪০ মেট্রিক টন। জেলার ৭টি উপজেলার ৮টি এলএসডি গুদামে ক্রয় করা হচ্ছে এসব চাল।

সদর উপজেলাসহ সাতটি উপজেলার বিভিন্ন মিল মালিকদের অভিযোগ, তাদের মিলের পাক্ষিক অনুযায়ী প্রাপ্ত প্রতিটি মিল থেকে ৪/৫ টন করে বরাদ্দ কেটে কাগুজে মিলের নামে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে অর্থের বিনিময়ে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের গাড়ী চালক ফারক হোসেনসহ কিছু অসাধু কর্মচারী ও কিছু ব্রীফকেসধারী মিলার সিন্ডিকেট এই অনিয়মের সাথে জড়িত। এমনই একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে সরিষাবাড়ি উপজেলার মালিপাড়ায় অবস্থিত দুই বোন রাইচ মিলের নামে। চলতি আমন মওসুমে ওই মিলের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪০ টন।

জানা গেছে, এই মিলটি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের গাড়ী চালক ফারুক হোসেন পরিচালনা করে। কাগজে থাকলেও বাস্তবে এই মিলের কোন অস্তিত্ব নেই। মিলের লাইসেন্সে প্রদর্শিত পাক্ষিক অনুযায়ী চলতি আমন মওসুমে এই মিলের বিপরীতে বরাদ্দ পাবার কথা ৬ টন। অথচ মিলটি বরাদ্দ পেয়েছে ৪০ টন।

জামালপুর পৌরসভাস্থ বেলটিয়ার পলিশা গ্রামে অবস্থিত দুলাল উদ্দিনের বে/দুলাল রাইস মিলের বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৬ হাজার ৯৮০ কেজি চাল। বাস্তবে এই মিলের কোন অস্তিত্ব খোঁজে পাওয়া যায়নি। মশলা ভাঙ্গানোর এই মিলের বিপরীতে বরাদ্দটি দেয়া হয়েছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের অসাধু কর্মচারীদের যোগসাজশেই। দীর্ঘদিন থেকে এই অসাধু কর্মচারী ও ব্রীফকেসধারী চাল ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট জেলার প্রকৃত মিলারদের বঞ্চিত করে এই অপকর্ম করলেও মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না কেউ।

জানা গেছে, বিগত বোরো মওসুমের মত চলতি আমন মওসুমেও এই চক্রটি পুনঃ বরাদ্দের নাম করে বিভিন্ন মিলারদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতি কেজি বরাদ্দের বিপরীতে ৪ টাকা করে ৫ হাজার মেট্রিক টন চাল পুনঃ বরাদ্দ আনার পায়তারা করছে। এর জন্য দুই কোটি টাকার ফান্ড তৈরি করা হয়েছে। পুনঃ বরাদ্দ এলে মুষ্টিমেয় মিলারদের মাঝে এই বরাদ্দ বিতরণ করা হবে প্রকৃত মিলারদের বঞ্চিত করে। এ নিয়ে প্রকৃত মিলারদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সরকারি বিধি অনুযায়ী পুনঃ বরাদ্দ এলেও তা বণ্টন হওয়ার কথা তালিকাভুক্ত মিলারদের মাঝেই। কিন্তু অতিতেও তা না হয়ে এই অসাধু চক্রের কারসাজিতে সিন্ডিকেটের বাণিজ্যে হয়েছে। এবার যাতে প্রকৃত মিলাররা বঞ্চিত না হয় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন প্রকৃত মিলাররা।

অভিযোগ রয়েছে, জামালপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের গাড়ী চালক সিন্ডিকেট প্রধান ফারুক হোসেনকে গত বোরো মওসুমে বরাদ্দে নানা অনিয়মের অভিযোগে মুন্সিগঞ্জে বদলী করা হয়। খাদ্য বিভাগের সিন্ডিকেট ব্যবসার মুলহোতা ফারুক মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে আমন মওসুম শুরুর আগেই পূর্বের কর্মস্থল জামালপুরে যোগদান করেই পুনরায় সিন্ডিকেট সক্রিয় করেছে।

এ বিষয়ে তবে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের গাড়ী চালক অভিযুক্ত ফারুক হোসেন তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তার সাথে কোন মিল মালিকের সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও দাবি করেছেন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান খান এর সাথে একাধিক বার মোবাইলে যোগাযোগ করে তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত