ডা. আকাশ সম্পর্কে বলতে ১০ মিনিট সময় চান মিতু
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:৫৪
সংবাদকর্মীদের সামনে আনা হলেও কোনো কথা বলেননি ‘আত্মঘাতী’ ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতু। তবে তিনি পুলিশের কাছে স্বামীর আত্মহত্যা এবং দাম্পত্য জীবন নিয়ে ‘কিছু কথা আছে’, যেটি বলার ইচ্ছেপোষণ করেছেন।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডা. মিতুকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের (সিএমপি) কার্যালয়ে আনা হয়। এ সময় আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং ১০ মিনিটের জন্য ফটোস্যুটের সুযোগ দেয়া হয়। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মিতুকে কোনো কথা বলতে দেয়া হয়নি। ফটো তোলার পরপরই যে পুলিশভ্যানে আনা হয়, সেটিতে করেই মিতুকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে সিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে নগরীর নন্দনকাননে খালাতো ভাইয়ের বাসা থেকে মিতুকে আটকের পর প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বেশিরভাগ প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছেন।’
ইতোমধ্যে মিতুর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আমানত শাহ মাজার এলাকা থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। আত্মঘাতী চিকিৎসক আকাশের ব্যক্তিগত মোবাইলটিও জব্দ করা হয়েছে। দুটি মোবাইলই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অবশ্য ডা. আকাশের ফেসবুক থেকে স্ত্রী মিতুর ‘বহুগামিতা’ এবং এ-সংক্রান্ত যেসব ছবি ও মেসেঞ্জার চ্যাটের স্ক্রিনশট আপলোড করা হয়েছিল, সেগুলো ডিলিট করে দেয়া হয়েছে।
কে বা কারা এ কাজটি করেছেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলেও জানান মিজানুর রহমান।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মিতু পারিবারিক কলহ, দাম্পত্য জীবন এবং ডা. আকাশের আত্মহত্যার বিষয়ে তারও কিছু বলার আছে বলে জানান। আমরা তার বক্তব্য আদালতের মাধ্যমে রেকর্ড করব।’
মিজানুর রহমান বলেন, ‘মিতু এটা নিশ্চিত করেছেন, তার স্বামী আকাশ আত্মহত্যা করেছেন। তাকে কেউ হত্যা করেনি।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্তা বলেন, ‘মৃত্যুর আগে ডা. আকাশ নিজের ফেসবুকে যেসব তথ্য দিয়েছেন, সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে। স্ত্রী, শাশুড়ি ও বন্ধুদের বিষয়ে তার অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তদন্তে যদি ডা. আকাশের আত্মহত্যার বিষয়ে স্ত্রী মিতু ছাড়াও তার ব্রয়ফ্রেন্ডদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’
শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ডা. আকাশের আত্মহত্যার ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। মিতুর বিরুদ্ধে ডা. আকাশের আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগ এনে চান্দগাঁও থানায় পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
পরিবার মামলা না করলে ডা. আকাশের দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসের ‘ডায়িং ডিক্লারেশন’ অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
একইসঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আকাশের স্ত্রী ডা. তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (জনসংযোগ) মির্জা সায়েম মাহমুদ, সিনিয়র সহকারী কমিশনার (পাঁচলাইশ জোন) দেবদূত মজুমদার, চান্দগাঁও থানার ওসি আবুল বাশার, পরিদর্শক (তদন্ত) জোবায়ের সৈয়দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকার ২ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাসা থেকে বৃহস্পতিবার সকালে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ডা. আকাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগে চিকিৎসা কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি চন্দনাইশ উপজেলার বাংলাবাজার বরকল এলাকার মৃত আবদুস সবুরের ছেলে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই গ্রেফতার হন তার স্ত্রী তানজিলা হক মিতু। মৃত্যুর এক ঘণ্টা আগে ডা. আকাশ নিজের ফেসবুকে স্ত্রীর উদ্দেশে একটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসটিতে স্ত্রীর প্রতি তার অভিমান ও ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে।
ডা. আকাশ স্ট্যাটাসে স্ত্রীর উদ্দেশে লেখেন- ‘ভালো থেকো, আমার ভালোবাসা তোমার প্রেমিকাদের (প্রেমিকদের) নিয়ে।’
প্রসঙ্গত, ৭ বছরের প্রেমের পরিণতি হিসেবে ২০১৬ সালে তানজিলা হক মিতুকে বিয়ে করেন আকাশ। কিন্তু বিয়ের তিন বছর না যেতেই সেই ভালোবাসা ফিকে হয়ে যায়।
আকাশের ভাই নেওয়াজ মোরশেদ জানান, আকাশের স্ত্রী মিতুর মা-বাবা আমেরিকায় থাকেন। মিতুও মাঝেমধ্যে মা-বাবার কাছে যান। ১৬ জানুয়ারি তিনি দেশে আসেন। বিয়ের বছর না যেতেই পরকীয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আকাশের সঙ্গে মিতুর দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। পরকীয়া থেকে মিতুকে ফেরাতে না পেরে আমার ভাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, যা মৃত্যুর আগে তার দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকেই স্পষ্ট।
ডা. আকাশ বিয়ের আগেই কিছুটা আচ করতে পেরেছিলেন মিতুর খোলামেলা জীবন সম্পর্কে। কিন্তু ততক্ষণে বিয়ের দিন তারিখ পাকা হয়ে গেছে। এ ছাড়া তিনি মিতুর শরীরী সৌন্দর্যকে অস্বীকার করতে পারেননি। সবাইকে দাওয়াত দেয়া হয়ে গেছে বিয়ে ভাঙলে তারা কী ভাববে সেটি ভেবে বিয়েটা ভেঙেও দিলেন না। স্ত্রীর চরিত্রের চেয়ে, সাংসারিক শান্তির চেয়ে ঠুনকো সামাজিক মান-মর্যাদাকেই গুরুত্ব দিলেন বেশি।
মৃত্যুর আগে ডা. আকাশ নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন- ‘২০১৬-তে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক দিন আগে জানতে পারি- কিছু দিন আগে শোভন নামে চুয়েটের ৮ম ব্যাচের এক ছেলের সাথে ও হোটেলে রাত কাটায়; আর কত কি লজ্জা লাগছে সব লিখতে। ততদিনে সবাইকে বিয়ের দাওয়াত দেয়া শেষ। আমাকে যেহেতু চট্টগ্রামের সবাই চিনে, তাই বিয়ে কেনসেল (বাতিল) করতে পারিনি লজ্জাতে।’
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রের সঙ্গে মিতুর পরকীয়া তুলে ধরে ডা. আকাশ লেখেন- ‘ওর মোবাইলে দেখি, ভাইবারে দেখতে পাই মাহবুব নামে কুমিল্লা মেডিকেলের ব্যাচম্যাটের সাথে হোটেলে ...শত শত ছবি। আমি তো বেঁচে থেকেও মৃত হয়ে গেলাম। তার পর ক্ষমা চাইল (স্ত্রী) শবেকদরের রাতে কান্না করে পা ধরে আর কখনো এমন হবে না। আমিও ক্ষমা করে দিয়ে এক বছর ভালোভাবেই সংসার করলাম।’
স্ত্রী সম্পর্কে ডা. আকাশ লেখেন- ‘তারপর ও দেশের বাইরে আমেরিকা গেল, মাঝখানে একবার ঈদ পালন করতে আসল সেপ্টেম্বরে ২০১৮ আবার চলে গেল ইউএসএমএলই এর প্রিপারেশন নিচ্ছিল। সাথে ফেব্রুয়ারিতে ২০১৯ এ আমারও ইউএসএ যাওয়ার কথা।’
আরো পড়ুন: আত্মহত্যার আগে মিতুর সঙ্গে যা হয়েছিল ডা. আকাশের
মিতুর বন্ধুদের প্ররোচনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ
সেই চিকিৎসকের স্ত্রী গ্রেপ্তার
পুলিশকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলো মিতু
স্ত্রীর পরকীয়া, আত্মহত্যার আগে যা লিখেছেন চিকিৎসক