ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

মেলায় বেড়েছে বিক্রি, খুশি প্রকাশকরা

  জোবায়ের আবদুল্লাহ

প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২০:০৫  
আপডেট :
 ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২০:২০

মেলায় বেড়েছে বিক্রি, খুশি প্রকাশকরা

অমর একুশে মেলার ১৫তম দিন ছিলো আজ। একই সাথে এবারের মেলার প্রথম পক্ষও শেষ হলো। শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় মেলায় ছিল উপচেপড়া ভিড়। মেলায় আজ দর্শনার্থীদের যেমন ভিড় ছিল, তেমনি ছিল বইপ্রেমীদের। তাই মেলায় বিক্রিও ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি। প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় মেলার দ্বার উন্মোচন হয় বেলা ১১টায়। এ সময় থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। মেলায় যেন ছিল শিশু পাঠকদের মেলা বসেছিল। শিশু প্রহর উপলক্ষে মেলায় দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুরা শিশু চত্বরে হাসিখুশিতে মেতে থাকে। হালুম-ইকরির সাথে অনেক শিশুকে খেলতে দেখা গেছে। বাবা-মায়ের সাথে বইও কিনেছে অনেকে। বরাবরের মতোই শিশু চত্বরের সিসিমপুর স্টলে ভিড় ছিল দেখার মতো।

তবে, বেলা বাড়ার সাথে সাথে বই মেলায় সব বয়সের বইপ্রেমীরা প্রবেশ করতে থাকে। সন্ধ্যায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান উভয় অংশ ঘুরেই বইপ্রেমী, দর্শনাথীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। দর্শনার্থীদের বইমেলা ঘোরাঘুরির চেয়ে বই কিনতে বেশি দেখা গেছে। মেলায় লোক সমাগম এত বেশি হয়েছিল যে, মেলায় প্রবেশকারীদের বের হওয়ার জন্য বিকল্প পথ খুলে দিতে হয়েছিল মেলা কর্তৃপক্ষকে। সন্ধ্যায় মেলায় গিয়ে দেখা যায়, মেলায় আগমনকারীদের একটি বড় অংশই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলার বিপরীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবির হাটের গেইট দিয়ে বের হচ্ছে।

এদিকে, মেলায় আজ বই বিক্রি ছিল অনেক বেশি। প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীদের যেন দম ফেলার সময় নেই। বিক্রি কেমন জানার সুযোগই পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত এক পলক তাকিয়ে মুখে এক চিলতে হাসি রেখে চলন্তিকা প্রকাশনের বিক্রয়কর্মী আহসান বাংলাদেশ জার্নালকে বললেন, আজ বিক্রি মেলার গত দিনগুলোর চাইতে বেশি। এমনটা যেন সামনের দিনগুলোতেও থাকে। এর বেশি কিছু তিনি বলতে পারলেন না। আবার পাঠকদের বই দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

বই বিক্রি বাড়ায় খুশি প্রকাশ করলেন মুক্তধারা প্রকাশনের বিক্রয়কর্মী সাজ্জাদও। বাংলাদেশ জার্নালকে তিনি বললেন, আজ স্টলের ঝাপি খোলার সাথে সাথে ক্রেতারা আসতে থাকে। আজ বিক্রি ভালো। আশা করছি ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন এমন বিক্রি হবে।

মেলায় নতুন বই

অমর একুশে গ্রন্থমেলার পনেরতম দিনে আজ বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে নতুন বই এসেছে ২৭২টি। এর মধ্যে গল্পগ্রন্থ এসেছে ৫৫টি, উপন্যাস ৪১টি, প্রবন্ধ ৯টি, কবিতা ৯৪টি, গবেষণা ৩টি, ছড়ার বই ৮টি, শিশুসাহিত্য ১৩টি, জীবনী ১০টি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই ৪টি, নাটক ৪টি, বিজ্ঞান বিষয়ক বই ৬টি, ভ্রমণ বিষয়ক বই ৫টি, ইতিহাসভিত্তিক বই ৩টি, রম্য বা ধাঁধার বই ১টি, ধর্মীয় ১টি, অনুবাদ ২টি, অভিধান ১টি, সায়েন্স ফিকশন ১টি এবং অন্যান্য গ্রন্থ এসেছে ১১টি।

গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চের অনুষ্ঠান

আজ অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৫তম দিনে মেলা চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১০টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশুকিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত নির্বাচন। এতে ক-শাখায় ১৬ জন খ-শাখায় ১৫জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগীত শিল্পী কল্যাণী ঘোষ, সুজিত মোস্তফা এবং চন্দনা মজুমদার। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি এ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা এবং পুরস্কার বিতরণ করা হবে।

বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী: শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি মোহাম্মদ সাদিক এবং সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন।

প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বেগম আকতার কামাল বলেন, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বাস্তব জগৎ শুধু প্রকৃতি নয়, মূলত মানুষকে ঘিরে; সময়ের মধ্যে হাঁটেন তিনি, মানুষময় ভাবনায় মগ্ন থাকেন। এই মানুষের সঙ্গে আসে সমাজের ক্ষত-ক্ষতি-তমসা, মানবতার সংকট ও বিকৃতি। জীবন আর কবিতার মাঝখানে তিনি কোনো ব্যবধান রাখেন না। বলা হয়েছে, তিনি ছন্দকে চাবুক করে তুলেছেন, অক্ষরবৃত্ত-মাত্রাবৃত্ত-স্বরবৃত্তের বাঁধনে নিজেকে বাঁধেননি। কেননা নীরেন্দ্রনাথ নিত্য খুঁজে গেছেন, ছেঁকে তুলেছেন সেই জীবনকে সেই বাস্তবের মানুষ ও চারপাশকে যা ধারণ করে আছে নিহিত মানবিক সত্তা আর সেই সত্তার কথায়নে তিনি নান্দনিকতা বিনির্মাণ করেছেন। তার দীর্ঘ আয়ু, সৃষ্টিশীলতা আর যেন মৃত্যুও গেঁথে তুলেছে দীর্ঘ আলোর মত হাহাকার আর প্রেমময় বহুস্তর দামিতাকে। এটাই তো কবিতার আরাধ্য।

আলোচকবৃন্দ বলেন, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বাংলা কবিতাকে দিয়েছেন নতুন দিশা। দৈনন্দিন কথ্য বুলিকে তিনি অনায়েসে যেমন কবিতা করে তোলেন তেমনি জীবন ও জগতের নিগূঢ় দর্শনকে কবিতার মধ্য দিয়ে বাক্সময় করেছেন। পূর্ববাংলার মানুষ নীরেন্দ্রনাথ তার আপন মৃত্তিকাকে কখনও বিস্মৃত হননি। তার কবিতায় এবং অন্যান্য লেখায় বারবার ফিরে এসেছে পূর্ববাংলার মাটি ও মানুষের কথা। তারা বলেন, কবিতাকে একই সঙ্গে শৈল্পিক মানসম্পন্ন এবং সাধারণ মানুষের যোগাযোগক্ষম করে তুলতে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সাধনা বাংলা কবিতার পাঠক চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন বলেন, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতা বাংলা কবিতার ভুবনে এক বিশেষ মাত্রা-সংযোজক। অতি সাধারণ বক্তব্য-বিষয়কে তিনি প্রায় আটপৌরে ভঙ্গিতে যেভাবে কবিতা করে তুলেছেন তা সত্যি বিস্ময়কর। এছাড়া কবিতা নিয়ে তাঁর গদ্যও পাঠকের কাছে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন গোলাম কিবরিয়া পিনু, আসলাম সানী, জুলফিয়া ইসলাম, ফারুক আহমেদ এবং পলাশ মাহবুব।

কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি ইকবাল আজিজ এবং হারিসুল হক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল এবং রূপা চক্রবর্তী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল হাসান আব্দুল্লাহ’র পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঘাসফুল শিশুকিশোর সংগঠন’ এবং আতিকুর রহমান উজ্জ্বলের পরিচালনায় ‘ভোরের পাখি নৃত্যকলা কেন্দ্র’-এর নৃত্যশিল্পীবৃন্দের পরিবেশনা।

আগামীকালের অনুষ্ঠানসূচি

শনিবার মেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আগামীকাল মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছে।

সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব

সকাল ১০টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে শিশু-কিশোর সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত নির্বাচন। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর : শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মইনুদ্দীন খালেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ফরিদা জামান, নিসার হোসেন এবং মলয় বালা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন চিত্রশিল্পী হাশেম খান। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত