ঠাকুরগাঁওয়ে নিহতের ঘটনার তদন্ত শুরু
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:১৫
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বহরমপুর গ্রামে গরু জব্দ করাকে কেন্দ্র করে বিজিবি-গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ ও তিনজন নিহতের ঘটনা তদন্তে গঠিত সাত সদস্যের কমিটি কাজ শুরু করেছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে তিন দিনের মধ্য তদন্ত শেষ করে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি নিহতদের মরদেহ দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়।
এদিকে শনিবার বিকাল ৫টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তদন্ত কমিটির আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নুর কুতুবুল আলম। তদন্ত কমিটির অন্য ছয় সদস্য হলেন, পীরগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ঠাকুরগাঁও সেক্টর সদর দপ্তর বিজিবির সহকারী পরিচালক, ঠাকুরগাঁও পাবলিক প্রসিকিউটর, হরিপুর থানার ওসি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তদন্ত কমিটির প্রধান জানান, বিজিবি-গ্রামবাসী সংঘর্ষে ৩ জন নিহত ও ১৫ জন আহতের ঘটনায় শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু হলো। ঘটনাস্থলের চারপাশ পরিদর্শন করেছে তদন্ত কমিটি। প্রত্যক্ষদর্শীদের স্বাক্ষ্য এক এক করে গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, সংঘর্ষে নিহত ও আহতদের পরিবারের মধ্যে যারা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তাদের স্বাক্ষ্য প্রথমে এবং এলাকার লোকজন যারা ঘটনা দেখেছেন তাদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। ঘটনাস্থলে সাক্ষ্য প্রদানে আগ্রহীদেরকে তালিকায় নাম লেখানোর আহবান জানান তিনি।
তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে পরিদর্শনের সময় কমিটির সদস্য হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এমজে আরিফ বেগ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাবিবুল আলম, হরিপুর থানার ওসি আমিরুজ্জামানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথম দিনে প্রকাশ্যে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ঘটনাস্থলেই ৮ জন রাজি হন। তারা সাক্ষ্য দেন। যা কাগজে লিপিবদ্ধ করা হয়। এছাড়াও যারা গোপনে সাক্ষ্য দিতে ইচ্ছুক তাদের সাক্ষ্যগোপনে নেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়।
এদিকে শনিবার বেলা ১১টার দিকে বিজিবি’র প্রায় ১৫০ জন সদস্য মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে এসে হরিপুরের বহরমপুর গ্রামের হবিবর রহমান ও জসিমকে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তাদের কে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের পর আবার গ্রামে দিয়ে যায় বিজিবি’র সদস্যরা।
হবিবর রহমান জানান, দুপুরে হঠাৎ বিজিবি এলাকায় প্রবেশ করে আমাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। ক্যাম্পে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা শেষে পুনরায় গ্রামে দিয়ে যায় বিজিবি’র সদস্যরা।
ঘটনার পর পুনরায় বিজিবি’র সদস্যরা মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে টহল দেয়ায় আতঙ্কে রয়েছে এলাকার লোকজন। তাদের দাবি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না হতে দেয়ার জন্য বিজিবি’র সদস্যরা দলবেঁধে এসে এলাকার লোকজনকে ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রামে দিয়ে যাচ্ছে। বিজিবির লোকজন যেন ওই গ্রামে না প্রবেশ করে এবং এলাকার লোকজনকে বিনা কারণে ক্যাম্পে ধরে না নিয়ে যায় এ জন্য জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
উল্লেখ যে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বহরমপুর গ্রামে গরু জব্দ করাকে কেন্দ্র করে বিজিবি সদস্য এবং গ্রামবাসীর সংঘর্ষে স্কুলছাত্র, শিক্ষকসহ ৩ জন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন ১৫ জন। গত বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় বিজিবি বাদী হয়ে নিহতরাসহ প্রায় ২৫০ জনের বেশি গ্রামবাসীকে আসামি করে হরিপুর থানায় মামলা করেছে।
বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে
