ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিলা বৃষ্টিতে তছনছ ফসলের মাঠ

শিলা বৃষ্টিতে তছনছ ফসলের মাঠ

ফাগুনের প্রথম সপ্তাহে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ঝড়ো হাওয়া। সেই সঙ্গে ছিল ব্যাপক শিলাবৃষ্টি। এতে শিলাবৃষ্টি যেন তাণ্ডব চালিয়েছে ফসলি ক্ষেতে। শনিবার (১৬) ফেব্রুয়ারি দিনগত রাত থেকে রোববার (১৭ ফেব্রুযারি) সকাল পর্যন্ত থেমে থেমে বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হচ্ছে। রোববার ভোরে রাজশাহী ও নাটোরে এবং সকালে সিলেট ও হবিগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়। শিলার আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফসলের।

নাটোরে শিলা বৃষ্টিতে গম, ধান, পান, আম, জামসহ উঠতি মৌসুমী ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েক ঘণ্টা ধরে বরফে ঢাকা পড়ে থাকে শত শত হেক্টর রবি ফসলের জমি। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষককুল। রবিবার ভোর রাত ৫টার দিকে হঠাৎ করে বজ্রপাতসহ শিলা বৃষ্টি শুরু হয়। প্রায় ৩০ মিনিটের এই শিলা বৃষ্টিতে জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার নলডাঙ্গার হালতি ও সিংড়ার চলনবিলের বিস্তীর্ণ বোরো ফসলের মাঠ এবং সদর উপজেলার ছাতনী, হরিশপুর, কাফুরিয়া প্রভৃতি গ্রামের গম, পিয়াজ, সবজি ও পানের বরজ সহ উঠতি ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। ব্যাপকহারে শিলা বৃষ্টি হওয়ায় ফসলের জমি বরফে ঢেকে থাকে কয়েক ঘণ্টা। শিলা বৃষ্টিতে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেছে কৃষকদের।

তবে ক্ষতি নিরুপণে মাঠে নেমেছে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলে জানিয়েছেন, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক। সদর উপজেলার ছাতনী গ্রামের কৃষক সাদেক আলী বিলাপ করে বলেন, শিলা বৃষ্টিতে তার আড়াই বিঘা জমির পানের বরজ সম্পন্ন বিধ্বস্থ হয়েছে। এতে তার ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

একই গ্রামের কৃষক মোমিন জানান, তার ভুট্টা ও পিয়াজের জমির কিছুই নেই। বরফ দিয়ে ঢাকা পড়ে সম্পন্ন জমি। কৃষক শাজাহান আলী জানান, তার তিন বিঘা জমির গম সম্পন্ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে পড়া ছাতনী, মোমিনপুর, কেশবপুর, নলডাঙ্গার হালতি, সোনাপাতিল, সিংড়া উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা করছেন বিলাপ। এছাড়া শিলা বৃষ্টিতে জেলার প্রায় অধিকাংশ এলাকার আমের মুকুল ঝড়ে পড়েছে। ভুট্টার গাছ হেলে পড়েছে, পানের বরজের পানও ঝড়ে পড়েছে। এসব গ্রামের অনেকের বাড়ির টিন শিলার আঘাতে বিনষ্ট হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম আকস্মিক শিলা বৃষ্টিতে রবি ফসলের ক্ষতির হওয়ার সম্ভাবনার সত্যতা স্বীকার করলেও তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেন নি। তবে তিনি বলেন, কি পরিমাণ জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা নিরুপনে তিনি সহ কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে রয়েছেন।

রাজশাহীতে হঠাৎ করেই শিলাবৃষ্টি হয়েছে। শনিবার ভোর ৪টা ৪০ মিনিট থেকে ৫টা ১৮ মিনিট পর্যন্ত এই শিলাবৃষ্টি স্থায়ী ছিল। এরপর সকাল পর্যন্ত কোথাও কোথাও শিলা বরফের স্তুপ জমে ছিল। রাজশাহীতে মৌসুমের প্রথম এই শিলাবৃষ্টিতে আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝরে পড়েছে অসংখ্য মুকুল। এতে হতাশায় পড়েছেন চাষিরা।

কৃষি বিভাগ বলছে, এই শিলাবৃষ্টিতে পেঁয়াজ, রসুন, গম ও আমের ক্ষতি হয়েছে। তবে ফল গবেষকরা বলছেন, মুকুল ঝরে পড়লেও চাষিদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। এ বছর আমের উৎপাদন স্বাভাবিকই হবে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, ভোরে ৩৮ মিনিট শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এ সময় তারা ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড কররেছেন। আর বৃষ্টির সময় বজ্রপাতও হয়েছে। তবে সে সময় ঝড়ো হাওয়া ছিল না। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আবারও এমন বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানান পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিলাবৃষ্টির আঘাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর, পবা, পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে মুকুল ঝরে পড়েছে। বিশেষ করে পুঠিয়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামে শিলাবৃষ্টির কারণে বরফের স্তুপ জমে যায়। সকাল ৮টা পর্যন্ত এমন বরফের স্তুপ দেখা যায়।

স্থানীয়রা বলছেন, এমন বরফের স্তুপ তারা আগে দেখেননি। পুঠিয়ার বানেশ্বর এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, এবার আমের গাছে গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। কিন্তু ভোরে শিলাবৃষ্টির আঘাতে প্রচুর মুকুল ঝরে পড়েছে। এতে লোকসান গুণতে হবে। তিনি জানান, শিলাবৃষ্টিতে অন্য ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ চাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

চারঘাট উপজেলার রায়পুর গ্রামের আম ব্যবসায়ী শামসুল হক জানান, আম গাছে মুকুল যে পরিমাণ এসেছিল তাতে অন্যান্য বছরের লোকসান অনেকটা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হতো। কিন্তু আজকের শিলাবৃষ্টিতে তাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আমের উৎপাদন কেমন হবে তা নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, শিলা এবং ভারি বৃষ্টি কারণে পেঁয়াজ, রসুন, গম ও আমের মুকুলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে তারা জরিপ শুরু করেছেন।

তবে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আবদুল আলীম বলছেন, আমের মুকুল ঝরে পড়লেও চাষিদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কেননা, আম হলো বৈরি আবহাওয়ার ফসল। ঝড়, বৃষ্টির মধ্যেই আমের উৎপাদন হয়ে থাকে। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।

এবার আমের উৎপাদন ভালো হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে জানিয়ে ড. আলীম বলেন, এবার প্রচুর মুকুল এসেছিল। অতো মুকুলে শেষ পর্যন্ত আম ধরে না। আবার ধরলেও গাছে থাকে না। ঝরে পড়ে। এবার শিলার কারণে অনেক মুকুল ঝরলেও বৃষ্টি গাছের মুকুলগুলোর জন্য ভালো হয়েছে। তাই আমের কাঙ্খিত উৎপাদন পাওয়া যাবে বলেই মনে করেন এই গবেষক।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত