ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

যেভাবে হাসপাতালের ল্যাব থেকে ময়লার স্তূপে ৩১টি মানব ভ্রূণ

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:৪৭  
আপডেট :
 ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:৫৪

হাসপাতাল থেকে ৩১টি মানব ভ্রূণ ময়লার স্তূপে গেল কীভাবে?

বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ময়লার স্তূপ থেকে ৩১টি মানব ভ্রূণ উদ্ধারের ঘটনায় তোলাপাড় শুরু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এটিকে ‘অমানবিক’ ঘটনা বললেও প্রশ্ন উঠেছে চিকিৎসা গবেষণার কাজে ব্যবহার শেষে এসব মানব ভ্রূণ ডাস্টবিনে ফেলা হলো কেন? আর কীভাবে এরকম মানব ভ্রূণগুলো দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে অপসারণ করা হয়?

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, মায়ের গর্ভে যেসব শিশু মারা যায় তাদেরকে অনেক সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষণ করে থাকে। কারণ এসব অপরিণত ভ্রূণ অনেক সময় পরিবারগুলো নিয়ে যায় না।

সেসব ফিটাস বা ভ্রূণ থেকে শিক্ষার্থীরা যাতে মানব দেহ সম্পর্কে জানতে পারে সেটাই থাকে উদ্দেশ্যে। এসব ভ্রূণ অনেক সময় ১০ থেকে ২০ বছর ধরে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।

শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ড. বাকির হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, এই ভ্রূণগুলো ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল। এগুলোর উপযোগিতা শেষ হয়ে যাওয়াতে ভ্রূণগুলো সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

তবে যে প্রক্রিয়ায় সেটা করা হয়েছে সেটা একেবারেই উচিত হয়নি বলেও তিনি স্বীকার করেন। ড. বাকির হোসেন বলেন, যে প্রক্রিয়ায় ডিসপোজাল (অপসারণ) করার কথা ছিল, সেই প্রক্রিয়াই ডিসপোজাল হয়নি। যার ফলে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা কোনভাবেই কাঙ্ক্ষিত না।

তিনি আরো বলেন, যদি তারা জীবিত থাকতো তাহলে আজ তারা বড় হত। সেই মানব ভ্রূণের প্রতি যে সম্মানটা দেয়া দরকার ছিল সেটা আমরা দিতে পারিনি। সেটা আমাদের ব্যর্থতা।

তবে যেহেতু এইসবগুলো মানব ভ্রূণ, তাই মর্যাদার সাথে সেগুলো কাপড়ে মুড়ে দাফন করা হয় বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক।

ড. বাকির হোসেন বলেন, আমাদের দেশ যেহেতু মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। আমরা লোক সমাগমের মধ্যে করি না। লোকচক্ষুর অন্তরালে করি। আমরা সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে দাফন করে দেই। এটা বাংলাদেশের সব জায়গায় করা হয়।

২ জন বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি গঠন: হাসপাতালটির পরিচালক ড. বাকির হোসেন জানিয়েছেন, ঘটনাটি হয়েছে হাসপাতালের গাইনি বিভাগ থেকে। এর সাথে জড়িত সন্দেহে হাসপাতালের গাইনি বিভাগের দুইজনকে বরখাস্ত করার চিঠি দেয়া হয়েছে।

একই সাথে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ।

যেভাবে ভ্রূণের সন্ধান মিলল: গত সোমবার রাতে হাসপাতালের আবর্জনা স্তূপে ৩১টি ভ্রূণ প্রথম দেখতে পায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী মো. মিরাজ।

তিনি জানান, প্রতিদিনকার মত সন্ধ্যা ৭টা দিকে তিনি হাসপাতালের পূর্ব পাশের ডাস্টবিনে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে যান। সেখানে ময়লার মধ্যে দেখতে পান এই ভ্রূণগুলো।

তিনি বলেন, আমার সাথে আরেকটা ছেলে ছিল, সে দেখে ভয়ে পালিয়ে যায়। আমি ময়লা সরিয়ে দেখি ৩১টি শিশুর ভ্রূণ। এরপর হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টারকে খবর দিলে তারা ভ্রূণগুলো নিয়ে যায়।

বরিশাল জুড়ে তোলপাড়: এদিকে এতগুলো মানব ভ্রূণ এভাবে ময়লার স্তূপের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখে বরিশাল শহরে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিক শাহিনা আজমিন বলেন, খবরটা ছড়িয়ে পরলে অনেক মানুষ, দেখতে ভিড় করেন এবং ঘটনা অত্যন্ত অমানবিক বলে তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করছেন।

তিনি বলেন, এটা ল্যাবে ব্যবহৃত হয়েছে মেডিকেলের স্টুডেন্টদের জন্য। খবরটা শোনার পর থেকে সবাই বলছে এটা একবারেই উচিত হয়নি। একেবারে অমানবিক কাজ হয়েছে এটা। অনেকে বলছেন নখ কাটার পরেও এভাবে ফেলে দিতে হয় না। সেক্ষেত্রে যারা এতদিন এসব জিনিস ব্যবহার করেছেন তাদের শিক্ষার জন্য, তারা কেন এভাবে ময়লা-আবর্জনা বা ড্রেনে ফেলে দেবে? সেটা তো তারা মাটিতে পুতে রাখতে পারতো।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

ডিপি/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত