ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘ব্রোকলির’ চাষে সফল চাষিরা

  চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:৫১

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘ব্রোকলির’ চাষে সফল চাষিরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে উচ্চ মূল্যের পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ সবজি ‘ব্রোকলির’ চাষ। বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছেন চাষিরা। অন্য ফসলের চেয়ে কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় ‘ব্রোকলি’ চাষে ঝুঁকছেন এই জেলার অনেকেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্যান্সার প্রতিরোধী অন্যতম এই সবজি চাষে ফিরবে কৃষকের ভাগ্য।

বাণিজ্যিকভাবে সফলতা পাওয়ায় আগামীতে উৎপাদন পর্যায়ে ‘ব্রোকলি’ চাষ জনপ্রিয় ও এর সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলছেন কৃষি বিভাগ।

ফুলকপির মতোই দেখতে এই সবুজ সবজিটির নাম ‘ব্রোকলি’। ক্যান্সার প্রতিরোধী অন্যতম এই সবজি উন্নত বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও, চাঁপাইনবাবগঞ্জে রয়েছে অপ্রচলিত সবজির তালিকায়। তবে অত্যন্ত লাভজনক এই আবাদ ধীরে হলেও সম্প্রসারিত হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

ক্যান্সার প্রতিরোধক এন্টি অক্সিডেন্ট থাকায় ভোক্তা পর্যায়ে এর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। তবে প্রথমদিকে এই সবজি চাষে কৃষকদের তেমন আগ্রহ না থাকলেও স্থানীয় কৃষি বিভাগের উদ্যোগে গত দু’বছর পরীক্ষামূলকভাবে চাষের পর মেলে কাঙ্খিত সাফল্য। এ বছর বাণিজ্যিকভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩ হেক্টর জমিতে ব্রোকলি চাষ করা হয়েছে।

শ্যামপুরের ব্রোকলি চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রোকলির বাজার নিয়ে প্রথমদিকে সন্দেহ ছিল। আমি এক বিঘা জমিতে এ সবজি চাষ করেছি। এক বিঘা জমিতে আমি ৪ হাজার ব্রোকলির চারা লাগিয়েছিলাম। চাহিদা বাড়ায় এবং ভালো দাম পাওয়ায় আগামীতে চাষের পরিমাণ বাড়াবো।’

কামরুজ্জামান নামে আরেক চাষি বলেন, চারা তৈরি থেকে মাত্র ৯০ দিনের মধ্যে উত্তোলনযোগ্য এবং রোগ বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় এটি অনেকটাই কীটনাশকমুক্ত। অন্যান্য কপি গ্রোত্রের মতই এর চাষাবাদ পদ্ধতি এবং বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। যা বিক্রি করে আয় হয়ে থাকে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা।

স্ট্রবেরি, বিভিন্ন জাতের কুল ও পেয়ারা চাষ করে সফলতা পাওয়ার পর এবার ৩ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ব্রোকলির চাষ করেছেন কৃষক নজিবুর রহমান।

তিনি জানান, প্রথমে ব্রোকলি চাষ করে তিনি কাঙ্ক্ষিত সফলতা পাননি। তারপরও হাল ছাড়েননি। এসময় পাশে এসে দাঁড়ান উপজেলা কৃষি বিভাগ। এরপরেই আসে সফলতা। তা দেখে উদ্বুদ্ধ হয় স্থানীয় কৃষকরা। লাভজনক এই সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তারা। এরপর থেকেই এখানে বাণিজ্যিকভাবে ব্রোকলির বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু হয়েছে।

আব্দুল সামাদ বলেন, নজিবুর রহমানের ব্রোকলি চাষ দেখে কৃষকের মাঝে সম্ভাবনাময় এবং নতুন সবজি হিসেবে সাড়া পড়েছে ‘ব্রোকলি’ চাষের।

চাষিরা বলেছেন, ব্রোকলির চাহিদা বাড়ায় এবং দাম ভালো পাওয়ায় আগামীতে জেলায় এ সবজি চাষে বিপ্লব ঘটবে। ফিরবে কৃষকের ভাগ্যও।

শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এস এম আমিনুজ্জামান বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাটি ও আবহাওয়া ব্রোকলি চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায়, জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় ‘ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজী প্রোগাম-২’(এনএটিপি-২) এর আওতায় স্থানীয় কৃষি বিভাগ, কৃষক পযার্য়ে উচ্চ মূল্যের এই ফসল উৎপাদন ও প্রদশর্নীর উদ্যোগ নেয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ মূল্যের পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ ও ক্যান্সার প্রতিরোধি ‘ব্রোকলি’ একটি নিরাপদ সবজি। আর নতুন সবজি হিসেবে এর বাজারজাতকরণেও নেয়া হয়েছে উদ্যোগ।

শিবগঞ্জ উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম আজম কনক বলেন, শিবগঞ্জ উপজেলার সহযোগিতায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ করে এই ব্রোকলি চাষ শুরু করা হয় এবং এখনতা সফল চাষ বলে গণ্য হতে যাচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষি মঞ্জুরুল হুদা বলেন, বাণিজ্যিকভাবে সফলতা পাওয়ায় আগামীতে উৎপাদন পর্যায়ে ব্রোকলি চাষ জনপ্রিয় ও এর ব্যাপক সম্প্রসারণে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এবং ব্রোকলি চাষে কৃষকদের সব ধরণের সহযোগিতা দেয়া হবে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে।

বর্তমানে বাজারে প্রতি পিস ‘ব্রোকলি’ বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্রোকলি যে শুধুই স্বাদে, বর্ণে ও গন্ধে অনন্য তা নয়, এর রয়েছে বহুবিধ পুষ্টি উপাদান; যা মানুষের শরীর স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে নানা ভাবে সহায়তা করে।

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত