ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

ভাতের টাকা যোগাতে বের হয়ে পুড়লেন রিকশাচালক মোস্তফা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:৫৪

ভাতের টাকা যোগাতে বের হয়ে পুড়লেন রিকশাচালক মোস্তফা

২০১০ এর নিমতলী থেকে ২০১৯ এর চকবাজার। পুরান ঢাকাতে যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। প্রতিদিনের মতো বুধবার রাতেও সেখানে আর দশটা দিনের মত স্বাভাবিক প্রাণচাঞ্চল্য ছিল। রাত পোহালেই একুশে ফেব্রুয়ারি, তারপর শুক্র আর শনিবার মিলিয়ে তিন দিনের ছুটি। সে কারণে ঢাকার পাইকারি পণ্যের বাজারের মধ্যে এ এলাকায় বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ক্রেতাদের ভিড় ছিল তুলনামূলক বেশি।

রাত ১০টার পর ঝাঁপ ফেলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন স্থানীয় দোকানিরা। শহরের বিভিন্ন এলাকা স্থানীয় বাসিন্দারাও ঘরে ফিরছিলেন। চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের সামনে চার রাস্তার মোড়ে তখন বেশ ভিড়। রিকশা, অটোরিকশা, প্রাইভেট কার আর পিক-আপ ভ্যান মিলিয়ে শতাধিক যানবাহনের ভিড়ে যানজটের মত একটা অবস্থা ছিল সেখানে। এর মধ্যেই হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ, তারপর যেন নরক নেমে আসে চুড়িহাট্টা মোড়ে।

রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই বিস্ফোরণের পর প্রথমে রাস্তায় থাকা যানবাহনে এবং পরে আশপাশের পাঁচটি ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট রাতভর সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যায়।

অগ্নিকাণ্ড শুরুর ১৫ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার দুপুরে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস। ততক্ষণে বডিব্যাগে ভরে ৬৭টি লাশ পৌঁছায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। পোড়া লাশগুলোর মধ্যে ২৭টি এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

তাদের মধ্যে একজন রিকশা চালক মোস্তফা। তাকে প্রতিদিন ভাতের টাকা জমা দিতে হয়। সেই টাকা হাতে ছিলনা বলে শরীর খারাপ নিয়েও রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু টাকা নিয়ে আর বাড়ি ফেরা হলো না মোস্তফার। পুরান ঢাকার এই রিকশাচালক নিহত হয়েছেন অগ্নিকাণ্ডে। গত দু'দিন ধরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মোস্তফার মরদেহ খুঁজছেন তার ভায়রা নিলু মিয়া। ৩ সন্তানের জনক ছিলেন মোস্তফা। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরে। পুরান ঢাকায় থাকতেন কেল্লামোড় বেঁড়িবাধের মেসে।

ঘটনার দিন বুধবার দুপুরে স্ত্রীর সঙ্গে কথা হইয়েছিল তার। স্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘শরীর ভাল লাগছে না, তাই আজকে রিকশা নিয়ে বের হব না।’ তারপরেও ভাতের টাকা জমা দিতে রিকশা নিয়ে নেমে পড়েন রাস্তায়।

ওইদিন অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেলে রিকশার গ্যারেজের মালিক গ্যারেজের অন্যান্য রিকশাচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, বিকেলে রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন মোস্তফা। মেসের ভাড়া ২৮শ’ টাকা তার জমা দেওয়া ছিল। কিন্তু ভাতের টাকা প্রতিদিন জমা দিতে হয়। সেই টাকা হাতে ছিল না বলে শরীর খারাপ নিয়েও বের হয়েছিলেন মোস্তফা।

চুড়িহাট্টার মোড়ে যখন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, রিকশা নিয়ে তখন সেখানেই ছিলেন তিনি।

নিলি মিয়া বলেন, আমরা দুই দিন ধরে হাসপাতালে লাশের সন্ধানে আছি। এখনো পাচ্ছি না। আজ সকালে জানলাম নিহতের বাবা-মা অথবা সন্তানের নমুনা লাগবে। এখন মোস্তফার মা রংপুর থেকে আসছেন নমুনা দেওয়ার জন্য।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত