ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

কেমিক্যাল পেলেই কল করুন ‘৯৫৫৬০১৪’ নম্বরে: সাঈদ খোকন

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:২৭

কেমিক্যালের তথ্য গোপন করলে কঠোর শাস্তি, মজুদ সরানো শুরু

পুরান ঢাকার সমস্ত কেমিক্যাল গোডাউন অপসারণে নেমেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। যতক্ষণ পর্যন্ত এই এলাকায় কেমিক্যালের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত অপসারণ বা উচ্ছেদ কার্যক্রম চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।

সেই সঙ্গে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, সর্বস্তরের নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ যদি কেউ গোডাউনে কেমিক্যাল স্টোর করতে দেখেন বা কেমিক্যাল রাখতে দেখেন আপনারা আমাদের কন্ট্রোল রুম ‘৯৫৫৬০১৪’ নম্বরে জানান। যে কেউ তার বাড়ির আশাপাশে পাড়া-মহলায় কেমিক্যাল রাখছে এমন দৃশ্য দেখেন তাহলে আমাদের কন্ট্রোল রুম, পুলিশ কন্ট্রোল রুম, কাউন্সিলর অফিসে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জানান, আমরা তাৎক্ষনিকভাবে ব্যবস্থা নেব।

শনিবার পুরান ঢাকার ওয়াহেদ ম্যানশনের কেমিক্যাল অপসারণের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযানের উদ্বোধনকালে মেয়র একথা বলেন। একই সঙ্গে ওই দিনের অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের ভিডিও ফুটেজ আছে বলেও জানান মেয়র। পরে মেয়র নিজেই ওই ভবনে মজুদ থাকা কেমিক্যাল সন্দেহে সকল পদার্থ অপসারণ করেন মেয়র।

তিনি বলেছেন, আমরা প্রতিটি বাড়ি পরিদর্শন করব, যেখানেই কেমিক্যালের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে সেসমস্ত কেমিক্যাল অপসারণ করা হবে। অভিযানে কোনো বাড়িতে কেমিক্যাল গোডাউন পাওয়া গেলে সর্বপ্রথম বাড়ির মালিককে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করার ঘোষণাও দেন মেয়র।

সাঈদ খোকন বলেন, ওয়াহেদ ম্যানশনের গোডাউনে যেসমস্ত কেমিক্যাল রয়েছে, সেই কেমিক্যাল অপসারণের মধ্য দিয়ে পুরনো ঢাকার সম্পূর্ণ এলাকার যত কেমিক্যাল গোডাউন আছে সমস্ত গোডাউন থেকে কেমিক্যাল অপসারণের কার্যক্রম শুরু করা হলো।

এ সময় মেয়র বলেন, গত বুধবার এই ওয়াহেদ ম্যানশনে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এর আগে সোমবার আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কেমিক্যাল অপসারণ কাজ শুরু করি, দু:খজনক হলেও সত্য মাত্র দুই দিনের মাথায় ঘটনাটি ঘটে। আমরা পুরো এলাকা থেকে কেমিক্যালগুলো সেসময় অপসারণ করতে পারিনি। কাজেই যতক্ষণ না পর্যন্ত পুরনো ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউন আমরা অপসারণ করতে পারছি ততক্ষণ পর্যন্ত এই কাজ অব্যাহত থাকবে। নগরবাসীর জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে নগর কর্তপক্ষ এ ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞ।

অপসারণ কাজে সকলের সহযোগিতা চেয়ে মেয়র বলেন, স্থানীয় নাগরিক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ সকল শ্রেণির নাগরিক রয়েছেন। এখানে হাজার হাজার বাড়িঘর রয়েছে যদি কোন একটি বাড়িতে ২০টি কেমিক্যাল কার্টুন ওঠায় তাহলে কারো পক্ষেই সেটা খুঁজে বের করা খুব দূরহ হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ তার নিরাপত্তার স্বার্থে যতক্ষণ পর্যন্ত বিষয়গুলোকে শক্ত নজরদারির আওতায় নিয়ে না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষে কাজটি করা খুব দূরহ একটি ব্যাপার।

পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে মেয়র বলেন, সেদিনের অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। সেই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত গ্যাস সিলিন্ডার থেকে। গ্যাস সিলিন্ডারের বিষ্ফোরণের সূত্র ধরে অগ্নিকাণ্ডের সূচনা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশের একটি সূত্র আমাকে অবহিত করেছেন। রাস্তায় রাখা একটি গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারে বিষ্ফরণের সূত্র ধরে পরবর্তি বেশ কিছু গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার ছিল সেগুলো থেকে চেইন রিঅ্যাকশনের মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়েছিল।

কতগুলো বাড়িতে কেমিক্যাল রয়েছে এমন তালিকা আছে কি না জানতে চাইলে মেয়র বলেন, এখানে বিষ্ফরোক দ্রব্য অধিদপ্তরের কিছু তালিকা রয়েছে, আমাদের সঠিক তালিকা নেই। আমরা প্রতিটি বাড়িতে এক এক করে পরিদর্শন করব।

বাড়ির মালিকদের সর্তক করে বলেন, এখনো যদি কারো বাড়িতে কোনো রকম কেমিক্যাল গোডাউন থাকে, আপনারা নিজ উদ্যোগে সেটা সরিয়ে নেবেন। আর যদি এই অভিযান পরিচালনার সময় কারো বাড়িতে কেমিক্যালের অস্তিত্ব পাওয়া যায় তাহলে যেই বাড়িরতে পাওয়া যাবে সেই বাড়ির মালিককে আইনের আওতায় এনে আইনানুযায়ী তার বিচার করা হবে। এখনো যদি কারো বাসায় কেমিক্যাল গোডাউন রেখে থাকেন অনতিবিলম্বে নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে সেটা সরিয়ে নেবার উদ্যোগ গ্রহণ করুন। তানাহলে ধরা পড়লে সর্বপ্রথম বাড়ির মালিককে আইনের আওতায় আনা হবে।

উচ্ছেদ করার পর সেসব কেমিক্যাল কি করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, প্রথম অপসারণ করে আমাদের গাড়ি লোড করে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে যাব। এরপর চেক করা হবে যদি ২৯টি দাহ্য পদার্থের মধ্যে কোনোটি পাওয়া যায় তাহলে সেগুলো জব্দ করা হবে। আর যদি দাহ্যে পদার্থের মধ্যে না পড়ে তাহলে এর মালিককে বুঝিয়ে দেব নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেবার জন্য।

ওয়াহেদ ম্যানশনের কেমিক্যাল রাখা অবৈধ কি না এমন প্রশ্নর জবাবে মেয়র বলেন, কেমিক্যাল গোডাউন সবগুলোই আনের বাইরে। বাসাবাড়িতে কেমিক্যাল মজুদ করা আইনানুযায়ী এটা এমনিতিই অবৈধ। এখন আমরা দেখব যদি ঝুঁকিপূর্ণ থাকলে জব্দ করা হবে।

বুধবার রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ে ভয়াবহ ওই আগুনে চার তলা হাজী ওয়াহেদ মঞ্জিলসহ পাঁচটি ভবন পুড়ে গেছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ গেছে অন্তত ৬৭ জনের।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, একটি পিকআপ ভ্যানের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে আশপাশের দোকান আর ভবনে থাকা রাসায়নিক এবং প্লাস্টিক ও প্রসাধনীর গুদাম চুড়িহাট্টার আগুনকে ভয়াবহ মাত্রা দেয় বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ধারণা।

ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচটি ভবনের মধ্যে ওয়াহেদ মঞ্জিলের নিচতলায় ডজনখানেক দোকান, আর দোতলায় পারফিউম ও প্লাস্টিক সামগ্রীর গোডাউন ছিল। আগুনে ওই দুটি ফ্লোরের পুরোটাই পুড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার সকালে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ওই বাড়ির বেইজমেন্ট খুলে সারি সারি রাসায়নিকের ড্রাম ও বস্তার স্তূপ দেখতে পান। আগুন বেইজমেন্টে পৌঁছালে পরিস্থিতি আরও কতটা ভয়াবহ হতে পারত, তা অনুমান করে আঁৎকে ওঠেন তারা ।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত