ঝুঁকি নিয়েই চলছে হিমাগার শ্রমিকদের কাজ
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০১৯, ০৯:৫০
হিমাগারগুলোতে চাষিদের আলু সংরক্ষণে শ্রমিকদের ঝুঁকি কমাতে তাদের সুবিধার জন্য ৮০-৮৫ কেজির পরির্বতে ৫০ কেজি বস্তার আইন শুধু মাত্র ব্যানারে ঝুঁলানো হয়েছে বাস্তবায়নের কোন উদ্দ্যোগ নাই ঠাকুরগাঁওয়ের।
বড় বস্তায় চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন আলু সংরক্ষণে। চাষিদের দাবী তারা বড় বস্তা থেকে ছোট বস্তার আইনের বিষয়ে কোন কথা শুনেনি।
একাধিক হিমাগারের স্থানীয় ও অন্য জেলা থেকে আগত শ্রমিকেরা বলেন, কয়েক বছর থেকে শুনে আসছি বড় বস্তার পরিবর্তে ছোট বস্তায় আলু সংরক্ষণ হবে কিন্তু আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
বড় বস্তায় ৮৪ কেজি আলু থাকার কথা থাকলেও ১শ কেজির বেশি আলু নিয়ে আসেন চাষিরা।
কাজ নাই তাই টাকার জন্য বাধ্য হয়ে কাজ করছি। তবে দু:খজনক হলেও সত্য নিচ থেকে ১শ কেজি আলুর বস্তা নিয়ে ৫তলায় উঠলে জীবন বের হয় হয় অবস্থা। ছোট বস্তা হলে টাকা কম পাবো তবে জীবনের ঝুঁকি কমবে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে জেলায় প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। আর দেশে আলু চাষে ঠাকুরগাঁওয়ের স্থান দ্বিতীয়। মুন্সিগঞ্জের পরেই এ জেলার স্থান।
চাষিদের আলু সংরক্ষণের জন্য ১৩ টি ব্যক্তি মালিকানায়, ১ টি সমবায় সমিতির ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের ( বিএডিসি) ১ টি হিমাগার রয়েছে।
শ্রম বিধিমালা ২০১৫ ও বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০১৬ বাস্তবায়নে শ্রমিকের অধিকার রক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে দেশের হিমাগার সমূহে ৫০ কেজির অধিক ওজনের বস্তায় আলু সংরক্ষণ না করার জন্য মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশনা জারি করেছেন কিন্তু হিমাগার মালিক পক্ষ কোন উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেননি।
বরং হিমাগারের মালিক পক্ষ বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের নামে ছোট একটি ব্যানারে নিজেদের দায় ঢাকতে লিখে ঝুঁলিয়ে রেখেছেন ৫০ কেজি ওজনের অধিক বহন করা বেআইনী, মানবাধিার লংঘণ ও শাস্তি যোগ্য অপরাধ।
৮০-৮৫ কেজির বস্তা হিমাগারের বিভিন্ন চেম্বারে উঠানো-নামানো শ্রমিকদের জন্য কষ্টসাধ্য। ৫০ কেজির অধিক ওজনের বস্তা বহন করলে ঘাড় ও কোমড় ভেঙ্গে যাওয়ার ভয় থাকে।
এছাড়াও অকালে স্বাস্থ্যহানি, কোমড়ের হাঁড় ক্ষয়, শ্বাসষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। ৫০ কেজির বস্তা বস্তা পরিবহনে সুবিধা হয় এবং খাবার আলু ও বীজ আলুর মান ভাল থাকে।
হিমাগারে ৫০ কেজির বস্তায় আলু সংরক্ষণের সুবিধায় বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) চাহিদা অনুযায়ী ৫০ কেজি বস্তার উৎপাদন ও সরবরাহ করবে।
মানবাধিকার কর্মী শাহিন ফেরদৌস বলেন, আইন শুধু পাশ করলে হবে না বাস্তবায়নের জন্য উদ্দ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। চাষিরা যাতে বড় বস্তার পরিবর্তে ছোট বস্তায় আলু রংরক্ষণ করতে আগ্রহী হয় সে জন্য মৌসুম শুরুর আগে এলাকায় মাইকিং করতে হবে।
প্রয়োজনে বড় বস্তায় চাষিদের আলু ফেরত পাঠাতে হবে। প্রশাসনকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে হবে। তবেই শ্রমিকদের জন্য ঝুঁকির আইন বাস্তবায়ন হবে।
ঠাকুরগাঁও কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল্লাহ বলেন, শ্রম বিধিমালা ২০১৫ ও বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০১৬ বাস্তবায়নে শ্রমিকের অধিকার রক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে দেশের হিমাগার সমূহে ৫০ কেজির অধিক ওজনের বস্তায় আলু সংরক্ষণ না করার জন্য মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশনা জারি করেছেন।
সে আইনকে সম্মান জানিয়ে চাষিদের বিভিন্ন ভাবে সচেতন করে যাচ্ছি। ৫০ কেজি বস্তার ব্যবহার শুরু হয়েছে আশা করি আগামীতে এর ব্যবহার বাড়বে।
ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা: আবু মো: খায়রুল কবীর বলেন, প্রতিদিন ৫০ কেজির বেশি পিঠে বা মাথায় বস্তা উঠা-নামা করাটা অমানবিক।
টাকার জন্য শ্রমিকরা না বুঝে এ কাজ করছে। এতে তাদের শরীরের অনেক ক্ষতি হচ্ছে যেমন কোমড়ের হাঁড় ক্ষয়, স্বাস্থ্যহানী, শ্বাসষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। এজন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/টিপিবি