ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

আর কত মৃত্যু কত কান্না

  জোবায়ের আহমেদ নবীন

প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০১৯, ২৩:৫৫

আর কত মৃত্যু কত কান্না

আগুনে পুড়ে একের পর এক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন আমাদেরই কারো না কারো ভাই-বোন, মা-বাবা ও সন্তান। আমাদের চোখের সামনে এসব দুর্ঘটনা ঘটলেও কিছুই করার থাকছে না। রীতিমতো নির্বাক হয়ে অশ্রু বিসর্জন দেয়া ছাড়ার আর কোন উপায়ও নেই।

গত এক দশকে সারা দেশে ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৮টি অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এসব ঘটনায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাড়ে ৭ হাজারেরও বেশি। এদের মধ্যে কারো ভাই, কারো বোন, কারো সদ্যবিবাহিত স্বামী বা কারো নববধূ পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন। কারো কারো সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার আগেই মায়ের পেটে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতো এতো প্রাণহানি, এতো অশ্রু, এতো শোক তবুও আমাদের জীবনযাত্রা থেমে নেই। মাছের মায়ের মতো আমাদের চোখে আর জল নেই, সব শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। একের পর এক দুর্ঘটনায় আমরা নির্বাক। কিন্তু আর কত? আর কত মানুষ পুড়ে মারা গেলে আমরা সচেতন হবো? আর কত মায়ের বুক খালি হলে আমরা অর্থলিপ্সা ভুলে সঠিক বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন তৈরি করবো? আর কত?

এক দশকে অগ্নিকাণ্ডে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, আসবাব বা স্ট্র্যাকচারাল ড্যামেজ বাবদ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। কিন্তু কারো ভাই-বোন, কারো সন্তান বা কারো স্বামী অথবা পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে ওই পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে তার হিসাব করবে কে? তাদের যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার মূল্য কত?

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ঢাকার বনানীর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এবং চকবাজারের চুড়িহাট্টাসহ চলতি বছরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোর ক্ষতির পরিমাণ যোগ হলে এই হিসাবে নিহত, আহত এবং আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বাড়বে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্র।

এইতো সেদিন ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের বিভীষিকাময় স্মৃতি এখনো তাড়া করে বেড়ায়। সেখানে এখনও শুকায়নি দগদগে ক্ষত। ওই ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা এখনও কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। আহতরা হাসপাতালে লড়াই করছেন মৃত্যুর সঙ্গে। এমন পরিস্থিতিতে সেই ঘটনার ৫ সপ্তাহের মাথায় অভিজাত বনানী এলাকায় আবারো আরেক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। আমরা কী তবে অগ্নিগোলকে বাস করছি? এই শহর কী তবে আগুন থেকে নিরাপদ নয়?

এর আগে ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলী, বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে শপিংমল বসুন্ধরা সিটিতে ২০০৯ ও ২০১৬ সালে দু’দফায়, কারওয়ান বাজারে বিএসইসি ভবনে একাধিকবার, ঢাকার আশুলিয়ায় তাজরিন ও ট্যাম্পাকো গার্মেন্টসে এবং কড়াইল বস্তিসহ ঢাকার বিভিন্ন বস্তির মানুষ আগুনের উত্তপ্ত শিখায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন। এছাড়া কয়েক বছর আগে পুড়ে গেছে ডিসিসি মার্কেট। আগুনে পুড়ে গেছে অভিজাত হোটেল সী সেলসহ তিনটি ভবন। সব মিলে আগুন শেষ করে দিচ্ছে বহু মানুষের স্বপ্ন ও বেঁচে থাকার অবলম্বন।

এদিকে দেশে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ মানুষ আগুনে পুড়ছে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হচ্ছে। গুরুতর দগ্ধ লোকজনের একটি অংশ মারা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া আগুনের দুর্ঘটনা কমানো যাবে না। সরকার, গণমাধ্যম, চিকিৎসক সমাজ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসকেরা পোড়া রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এই ইউনিটে শয্যা আছে ৩৩০টি। প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছে পাঁচ শতাধিক।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, আগুনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে ঢাকায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সারা দেশে ১৯ হাজার ৬৪২টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৮ হাজার ৪৬১টি ঘটনা আবাসিক ভবনে। এর ২০৮৮টি ঢাকায়, চট্টগ্রামে ২৮৫ ও রাজশাহীতে ১১৬টি।

এ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ঢাকায় মানুষের বসবাস বেশি। ভবন ও স্থাপনাদিও বেশি। অনেক অপরিকল্পিত ও অবৈধ বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে। বিপরীত দিকে প্রযুক্তির যুগে নতুন নতুন ইলেকট্রিক গ্যাজেট, ল্যাপটপ, মোবাইল চার্জারসহ অন্যান্য দাহ্য পদার্থের প্রাপ্যতাও বেশি ঢাকায়। তাই রাজধানীতে অগ্নিকাণ্ডসহ অন্যান্য দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি।

গার্মেন্টের আদলে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ ইইউর: বনানী বহুতল ভবন এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করে গার্মেন্টের অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেয়া ব্যবস্থাগুলো অন্যান্য ভবনের ক্ষেত্রেও নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। শুক্রবার ঢাকায় ইউরোপীয় মিশনগুলোর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্মস্থলের নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখে এবং বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতের কর্ম পরিবেশের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০১৩ সাল থেকে ইইউ সরকারের সঙ্গে কাজ করে আসছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন মনে করে বাংলাদেশের অনান্য শিল্প খাত এবং আবাসন খাতেও বাংলাদেশ সরকারের একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত