ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ (ভিডিও)

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ২১:১৩

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ (ভিডিও)

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের টানা দ্বন্দ্ব শেষ পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দিনভর সংঘর্ষের পরও ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগের একাংশ। রোববার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রায় আধঘণ্টা টানা সংঘর্ষ চলাকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৭০-৮০ রাউন্ড টিয়ারশেল, ৪০-৫০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপসহ, জলকামান ব্যবহার ও ব্যাপক লাঠিচার্জ করে পুলিশ। সংঘর্ষে ৬ পুলিশ সদস্যসহ ১৯ ছাত্রলীগকর্মী আহত হন এবং দুই ছাত্রলীগকর্মীকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উসকানি দেওয়া এক শিক্ষককে শোকজ করেছে চবি প্রশাসন।

দেশীয় অস্ত্র মামলায় আটক ছয় ছাত্রলীগকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পদত্যাগ এবং ওসি বেলালের প্রত্যাহারের দাবিতে রোববার সকালে থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্রধর্মঘটের ডাক দেয় চবি শাখা ছাত্রলীগের একপক্ষের নেতাকর্মীরা। এ লক্ষ্যে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টের মেইন গেট তালা দিয়ে ধর্মঘটে বসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল যানবাহন, দোকানপাট, ক্লাস বন্ধ করে দেয়। আন্দোলনকালে পুলিশ প্রায় ২ ঘণ্টা তাদের ঘিরে রাখে। পরে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে জড়ায় চবি ছাত্রলীগের বগি ভিত্তিক গ্রুপ সিএফসি ও বিজয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা। ফেসবুকে এক পক্ষের নামে অন্য পক্ষের বাজে মন্তব্য করাকে কেন্দ্র গত ৩১ মার্চ থেকে তিন দিনব্যাপী দফায় দফায় সংঘর্ষ ও দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দেয় চবি শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক গ্রুপ সিএফসি ও বিজয় গ্রুপের কর্মীরা। এই তিন দিনে ছাত্রলীগের ২০ নেতাকর্মী আহত হয়। সংঘর্ষ চলাকালীন এক পক্ষের আহতদের অনেককে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা করতে দেয়নি অন্য পক্ষ।

এসব ঘটনায় পরদিন দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পাঁচটি আবাসিক হলে তল্লাশি চালিয়ে দুইটি পাইপগান ও ১২৮ রাউন্ড গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়। পরে গ্রুপ দুটি ২ এপ্রিল ফের সংঘর্ষে জড়ালে ৬ ছাত্রলীগকর্মীকে আটক করে পুলিশ । আটককৃতদের পরদিন দেশীয় অস্ত্র মামলায় কোর্টে চালান দেয় চট্টগ্রামের হাটহাজারী মডেল থানা-পুলিশ। আটকের ঘটনার পর থেকে ছাত্রলীগের বিবাদমান দুই পক্ষ এক হয়ে আন্দোলনে নেমে যায়।

সংঘর্ষের সূত্রপাত যেভাবে: তিন দফা দাবিতে আন্দোলন চলাকালে সকাল ১১ টা ৫০ মিনিটের দিকে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ সময় পুলিশ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে জলকামান নিক্ষেপ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট, চবি ক্লাব, আমানত হল, সোহরাওয়ার্দী হল এবং এ এফ রহমান হল এলাকায় প্রায় আধঘণ্টা যাবৎ চলে মুখোমুখি এ সংঘর্ষ। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৭০-৮০ রাউন্ড টিয়ারশেল, ৪০-৫০ রাউন্ড রাবার বুলেট, জলকামান ব্যবহারসহ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে পুলিশ। সংঘর্ষ চলাকালে ৬ পুলিশ সদস্য, ৩ জন শ্রমিক এবং ১০ জন ছাত্রলীগকর্মী আহত হন। এ সময় দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করে পুলিশ।

আহত ও আটক হলেন যারা: পুলিশ-ছাত্রলীগের মুখোমুখি সংঘর্ষ চলাকালে মাসুম, আজাদ, প্রান্ত, আরিফুল ইসলাম, নাছিম, ইমরান, সাদাফ নামে সিএফসির কর্মীরা আহত হন। এছাড়া এতে আকাশ, মুজাহিদ, আল আমিন নামে বিজয় গ্রুপের কর্মীরা আহত হন। এছাড়া ৬ পুলিশ সদস্য, ৩ জন শ্রমিকও আহত হন। তবে আহত পুলিশ ও শ্রমিকদের নাম জানা যায়নি।

এ সময় মুখলেছুর রহমান এবং সাদি খান নামের দুই ছাত্রলীগ কর্মী আটক করে পুলিশ। আহত ও আটক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সবাই শিক্ষা উপমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

শাটল ট্রেনের লোক মাস্টার অপহরণ ও যানবাহন ভাঙচুর: ধর্মঘট সফল করতে রোববার সকালে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার সকল প্রবেশপথ, দোকানপাট বন্ধ করে দেয় আন্দোলনকারীরা। চট্টগ্রাম ষোলো শহর স্টেশনে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটলট্রেনের হুইসপাইপও কেটে দেয় তারা। এসময় শাটল ট্রেনের লোক মাস্টারকে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া সংঘর্ষ চলাকালে বিশ্ববিদ্যায়ের জিরো পয়েন্টের ওয়াচ টাওয়ার ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের সামনে থাকা একটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। এর আগে শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সকল বাসের ইঞ্জিনের সুইচে গাম লাগিয়ে ও চাকা কেটে দিয়ে বাসের স্টিয়ারিং খুলে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ফলে শাটল ট্রেন ও শিক্ষক বাস বন্ধ বন্ধ থাকায় কার্যত অচল হয়ে পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়ে প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে শোকজ: এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উসকানিমূলক স্ট্যাটাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের উসকে দেওয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে শোকজ করেছে চবি প্রশাসন। অভিযুক্ত শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খ. আলী আর রাজী। তার বিরুদ্ধে এ কারণে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।

এবিষয়ে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে শোকজ করার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতি দ্রুত তার বিরুদ্ধে মামলায় দায়ের করবে।

যা বললো পুলিশ: সার্বিক ঘটনার বিষয়ে চট্টগ্রাম পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মশিউদ্দৌলা রেজা বলেন, তাদের সঙ্গে আমরা বেশ কয়েকবার কথা বলেছি। কিন্তু বিনা উসকানিতে কিছু ছাত্র পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা জলকামান ব্যবহার, হালকা লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করি। এঘটনায় আমাদের ছয় পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে ২ ছাত্রলীগ নেতাকেও আটক করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ছাত্রলীগের: আন্দোলনকারী ছাত্রলীগের বগি ভিত্তিক গ্রুপ সিএফসি গ্রুপের নেতা মির্জা খবির সাদাফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দাবি না মেনে নিয়ে পুলিশ দিয়ে হামলা করা হয়েছে। আমরা আমাদের ছাত্রলীগের ৬ কর্মীর মুক্তি ও ওসি বেলালের প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর যা বললেন: এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেন, কিছু অছাত্র, বহিরাগত ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত সিনিয়র ছাত্র নেতারা অসৎ উদ্দেশ্য পূরণে এগুলো করছে। এসব অছাত্র, বহিরাগত, বহিষ্কৃতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত দুই মাসে তাদের সাথে ৫-৬ বার আমরা বসেছি। কিন্তু তারা বারবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পরেছে। তারা আমাদের কথা দিয়েছিল তারা কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা করবে না তবে তারা শাটল ট্রেনে লোক মাস্টারকে অপহরণ, ট্রেনের হুইসপাইপ কেটে দিয়েছে। এছাড়া তারা ‘শিবিরের স্টাইলে’ জিরো পয়েন্ট গেটে তালা, বাসের ইঞ্জিনের সুইচে গাম লাগিয়ে দেয়। এসব না করে তারা যদি সঠিক উপায়ে তাদের দাবি জানায় তাহলে দাবি মেনে নেওয়া হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কি কেউ গায়ের জোরে দাবি আদায় করতে পারে?

যা বললেন চবি উপাচার্য: সার্বিক বিষয়ে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ছাত্রদের উপর যদি কোন অবিচার হয়ে থাকে, তাহলে তারা দাবি দাওয়া জানাতে পারে। কিন্তু সহিংস আন্দোলনে জড়াতে পারে না। এরপরেও তারা সহিংসতা চালায় তাহলে পুলিশকে আমরা অনুরোধ করেছি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সন্ত্রাস, জঙ্গি ও মাদকের বিরুদ্ধে সব সময়ই কঠোর।

ভিডিও...

  • সর্বশেষ
  • পঠিত