ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪১ মিনিট আগে
শিরোনাম

লিচুর বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে

  ফরিদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১১ মে ২০১৯, ১৮:০৫

লিচুর বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে

গত একযুগের বেশি সময় লিচুর চাষ করে ফরিদপুরের জাহাপুর এলাকার বৃদ্ধ চাষী কদম আলী (৭২)। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বুকবাধা স্বপ্ন নিয়ে আশায় ছিলো ভাল উৎপাদন হবে আর এতে আসবে অধিক মূনাফা, সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরবে। কিন্ত মৌসুমের শুরুতে গাছে গাছে লিচুর ভাল গুটি থাকলেও শেষ সময় প্রচন্ড তাপদাহে আর সম্প্রতি সময়ে ফণীর আঘাতে সেই স্বপ্ন ফেস্তে যেতে বসেছে।

প্রতিবছর ফরিদপুরে মধুখালী ও বোয়ালমারী উপজেলায় বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে লিচুর আবাদ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। বাজারে লিচু উঠার মাসখানে আগে (আগড়) এ অঞ্চলে লিচু ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। যে কারণে দামও ভাল পায় চাষীরা। কিন্তু চলতি মৌসুমে এবার কৃষকদের কপালে দেখা দিয়েছে চিন্তার রেখা।

বাগানের শত শত গাছের লিচু পুড়ে ঝরে যাচ্ছে। যেগুলো রয়ে গেছে তার মধ্যে অনেকগুলোতে দেখা যাচ্ছে কালো দাগ, অধিকাংশ গাছের লিচু ফেটে নষ্ট হচ্ছে। জেলার সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ জানান, প্রচন্ড গরম আর খড়ায় লিচুর এ অবস্থা হয়েছে।

ফরিদপুরের বোয়ালমারী, মধুখালী, ফরিদপুর সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন জুড়ে গত কয়েক বছরে লিচুর চাষাবাদ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। এ অঞ্চেলে গড়ে উঠেছে লিচুর কয়েক শতাধিক বাগান, কিন্তু চলতি মৌসুমে লিচুর আবাদকারীরা লাভের মুখ দেখতে পারবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

সরেজমিনে মধুখালীর জাহাপুর, বোয়ালমারীর কাদিরদী ও সদর উপজেলার চানপুর এলাকার বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পরিবারের বিভিন্ন বষয়ী সদস্যরা বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করে তার বাছাই করছে। শুধু পুরুষেরাই নয়, নারী ও কিশোরীরাও এ কাজে ব্যস্থ সময় পার করছে।

কিন্তু অধিকাংশ বাজানে প্রচন্ড খড়া আর রোদের তাপে লিচুর একাংশ প্রায় পুড়ে গেছে। বাগানগুলোতে লিচু তাপে শুকিয়ে ঝড়ে পড়ছে। অন্যদিকে সম্প্রতি সারাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ফণীর আঘাতেও বাগান গুলো বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে।

ওই এলাকার চাষিদের কাছ থেকে যে সকল ব্যবসায়ীরা লিচু ক্ষেত কিনেছে তাদের মূলধন তুলতে পারবেন কিনা তা নিয়েও শঙ্কিত তারা। মধুখালীর জাহাপুর এলাকার লিচু চাষি মো. রাশেদুল ইসলাম বাবু জানান, বাগানে কীটনাশক, সার ও ঔষধ ব্যবহার করেও লিচুর ফলনের ভালো মান ধরে রাখা যাচ্ছে না।

একই এলাকার কলেজ শিক্ষক লিচু চাষি সেলিম ভূঁইয়া জানান, এ মৌসুমে অধিক খড়ার কারণে লিচুগুলো ঝড়ে যাচ্ছে এবং যেগুলো গাছে রয়ে গেছে তার গায়ে কালো দাগ পড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ না পেলে বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

বোয়ালমারীর কাদিরদী এলাকার চাষি মো. ফরিদ আহমেদ বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে লিচু চাষে বেশি লাভ থাকায় বেশি করে লিচুর বাগান করেছি। তাছাড়া এই অঞ্চলের কৃষকের আয়ের অন্যতম উৎস লিচু চাষ। ‌‘বেশ কয়েক বছর ধরে লাভের মুখ দেখলেও এবারে পুঁজি তোলা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি,’ বলেন তিনি।

ফরিদপুর সদর উপজেলার ১নং ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম মজনু জানান, গত ৫/৬ বছর ধরে তাদের এলাকায় অনেক লিচু বাগান গড়ে উঠেছে। চলতি মৌসুমে শুরুতে বেশ ভাল ফলন ছিলো বাগান গুলোতে, শেষ সময়ে এসে প্রচন্ড তাপদাহের কারণে বাগানগুলোতে ফলন আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে।

বিষয়টি তিনি উপজেলা কৃষি বিভাগকে অবহিত করেছেন বলে জানান। ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কান্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী লিচুর গায়ে কালো দাগ, ফেটে যাওয়া ও ঝড়ে পড়া প্রসঙ্গে বলেন, প্রচন্ড তাপদাহ থেকে লিচুর ফলন ধরে রাখতে হলে ডায়বেন এন ৪৫ অথবা টিল্ট পানিতে মিশিয়ে লিচু পাকার আগে (সময় মতো) গাছে স্প্রে করতে হবে কমপক্ষে তিন বার। এছাড়াও খড়ার পরিমাণ বাড়লে গাছে সকাল বিকাল পানি দিতে হবে।

ওই কৃষি কর্মখর্তা আরো বলেন, তাপদাহের কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই সৃষ্টি হয়, এজন্য চাষিকে যত্নবান হতে হবে।

কান্তিক চন্দ্র জানান, ফরিদপুরের স্থানীয় জাতের লিচু আগড় (আগে) পেকে যায় বলে এখানকার লিচুর বাজারের অন্য জাতের লিচুর আগে আসে, এই কারণে চাষীরা ভাল দাম পায়। এছাড়াও ফরিদপুরের লিচু রাজধানী ঢাকাসহ বরিশাল, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় এখন পাওয়া যায় । তিনি জানান, চলতি মৌসুমে ৩শ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে, যা প্রতিহেক্টরের ৮ মেট্রিকটন হারে উৎপাদিত হবে। ঢাকার দোহার থেকে আসা লিচু ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ১১ বছর ধরে ফরিদপুর থেকে লিচু নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে । তিনি জানান, এই লিচু বেশ সুস্বাধু, এমনকি একমাস আগর। যে কারনে ক্রেতাদের কাছে চাহিদা রয়েছে। তিনি জানালেন, এবারের সব চেয়ে ভাল লিচু হাজার ১৪ পর্যন্তু আমরা কিনতে পারছি। অনেক ব্যবসায়ী আবার বাগান ধরে কেনে।

এনএইচ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত