ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

১৫ টাকার ওষুধের দাম ৬০০ টাকা, কাঁদলেন অসহায় রিকশাচালক

  ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ মে ২০১৯, ২১:১৬

১৫ টাকার ওষুধের দাম ৬০০ টাকা, কাঁদলেন অসহায় রিকশাচালক

একজন দরিদ্র রিকশাচালক তার গর্ভবতী স্ত্রীর জন্য ওষুধ কিনতে গিয়েছিলেন ফার্মেসিতে। ওষুধের দোকানদার তার কাছ থেকে ‘সোলাস’ নামের বিদেশি একটি ওষুধের দাম চায় ৬০০ টাকা। অথচ সোলাস ওষুধের দাম মাত্র ১৫ টাকা।

দরিদ্র ওই রিকশাচালকের নাম সিরাজ উদ্দিন। ফার্মেসিতে চড়া মূল্যে ওষুধ কেনার বিষয়ে সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমার সিজারিয়ান স্ত্রীর জন্য রিকশা বিক্রি করে ওষুধ কিনতে ফার্মেসিতে যাই। কিন্তু কত কি দাম ওষুধের তা তো সঠিক জানি না। তারা যে টাকা বলেছেন সেটাই দিয়েছি। বুঝতে পারিনি ১৫ টাকার ওষুধের দাম ৬০০ টাকা রাখবে তারা!’

রোববার এ ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহ শহরের একটি ফার্মেসিতে। ঝিনাইদহে ক্রেতা ও রোগীদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো বিভিন্ন ওষুধের দাম নিচ্ছে ফার্মেসি মালিকরা। বিশেষ করে সিজারিয়ান ওষুধগুলোর গলাকাটা হারে দাম নেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, এভিডিল নামের একটি ওষুধের দাম মাত্র ২৫ টাকা। অথচ এই ওষুধের দাম রাখা হয় ৩০০ থেকে ৫৭০ টাকা পর্যন্ত। কখনো ৬০০ টাকাও রাখা হয়।

রোববার দুপুরে সদর হাসপাতাল সংলগ্ন শহরের হামদহ এলাকার মাতৃছায়া ফার্মেসি, পান্না ফার্মেসি ও সিদ্দিক ফার্মেসি থেকে নাড়ু গোপাল, সিরাজ উদ্দিন ও নাসির বিশ্বাস নামের তিন ব্যক্তি এভিডিল ও সোলাস ওষুধ কিনতে যান।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৫ টাকার এভিডিল ওষুধের দাম ৩০০ টাকা এবং ১৫ টাকার সোলাস ওষুধের দাম ৬০০ টাকা রাখে তিন ফার্মেসি। ওষুধের দাম অতিরিক্ত রাখায় কান্নায় ভেঙে পড়েন নাড়ু গোপাল ও নাসির বিশ্বাস।

সেই মুহূর্তে ওসব ফার্মেসিতে হঠাৎ হাজির হন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওষুধের দাম অতিরিক্ত রাখার প্রমাণ হাতেনাতে পান ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাত্রাতিরিক্ত দাম রাখার দায়ে তিন ফার্মেসিকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে এক মাস করে কারাদণ্ড দেন। তবে ফার্মেসি মালিকরা অপরাধ স্বীকার করে জরিমানা দিয়েছেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেহ মো. হাসনাত। এ সময় র‌্যাব-৬-এর ঝিনাইদহ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলমসহ র‌্যাবের টিম উপস্থিত ছিল।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেহ মো. হাসনাত বলেন, ‘ফার্মেসিগুলোতে ভোক্তা অধিকার আইনের ৪০ ধারা লঙ্ঘন করে চড়া দামে ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে অভিযান চালানো হয়। কয়েকটি ফার্মেসিতে গিয়ে সত্যতা ও হাতেনাতে প্রমাণ পাওয়ায় জেল-জরিমানা করা হয়।’

এদিকে, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে পাঁচ দালালকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল-জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই টিম।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সদর উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের জলিল মালিতার ছেলে সজল মালিতা (৩০), পূর্ব নারায়ণপুর গ্রামের তাসেম আলীর ছেলে জামিরুল ইসলাম (৩৫), দুর্গাপুর গ্রামের আইয়ুব হোসেনের ছেলে রানা (২৫), কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা গ্রামের ভোলার ছেলে সুজন হোসেন (২৮) ও সদর উপজেলার ধোপাবিলা গ্রামের ছবেদ আলীর ছেলে সানাউল্লাহ (৪৫)।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে থাকা র‌্যাব জানায়, সদর হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হচ্ছে এমন অভিযোগে দুপুরে র‌্যাবের একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় পাঁচজনকে আটক করা হয়। পরে আদালত বসিয়ে অভিযোগ স্বীকার করলে সজল, জামিরুল, রানা ও সুজন হোসেনকে পাঁচদিন করে কারাদণ্ড ও ২০০ টাকা করে জরিমানা এবং সানাউল্লাহকে ২০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

অভিযানে র‌্যাব-৬ সিপিসি-২ ঝিনাইদহ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত