ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

বাসের টিকিট পাচ্ছে না বেনাপোলসহ ভারত ফেরত যাত্রীরা

  বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১১ জুন ২০১৯, ০১:১৪

বাসের টিকিট পাচ্ছে না বেনাপোলসহ ভারত ফেরত যাত্রীরা

ঈদের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করতে এসে ও ভারতে যাওয়া বাংলাদেশিরা দেশে ফিরে পড়ছেন মহাবিপাকে। সীমানা পেরিয়ে দেশে ঢুকে নিজের গন্তব্য যেতে মিলছে না বাসের টিকিট। তারপর বিগত দিনের চেয়ে যাত্রীদের সৌখিনতার সঙ্গে বেড়েছে সক্ষমতা। এতে করে দ্বিগুণ চাহিদা বেড়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাসের।

যার কারণে ঈদে নাড়ির টানে গ্রামে আসা মানুষের কর্মস্থলে ফিরে যেতে এসি বাসের টিকিট পাচ্ছে না। স্থানীয় লোকজন বেনাপোল চেকপোস্ট, বাজার, নাভারন ও বাগআঁচড়ার বিভিন্ন বাস কাউন্টার ঘুরে কিছু মানুষ চেয়ার কোচের টিকিট সংগ্রহ করে কর্মস্থল ঢাকা, চট্টগ্রামে ফিরছে। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে ভারত ফেরত যাত্রীরা।

পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের ছুটি ও স্বজনদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করে দেশে ফিরে গন্তব্যে যেতে কোনো বাসের টিকিট পাচ্ছে না। এতে মারাত্মক ভোগান্তিতে যাত্রীরা। সেই সঙ্গে টিকিটের দামও বাড়িয়েছে বাস মালিকরা। ১৩০০ টাকার এসি বাসে নেওয়া হচ্ছে ১৪৫০ টাকা এবং ৫০০ টাকার নন এসিতে নেওয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা।

গত শুক্রবার (৭ জুন) সকাল থেকে বেনাপোল থেকে দেশের অভ্যন্তরে দূরপাল্লার গন্তব্যের যাত্রীদের দুর্ভোগ ছিল চোখে পড়ার মতো। সোমবার তা অনেকটা বেড়ে যায়। ঢাকার দক্ষিণখানের সাইফুল ইসলাম ঈদের লম্বা ছুটি পেয়ে পরিবার নিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য।

তিনি জানান, রোববার সকালে ভারত থেকে ফিরছিলেন। কিন্তু বেনাপোল থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য পরিবহনে টিকিট না পাওয়ায় ওই দিন হোটেলে থেকে যান। সোমবার সকাল থেকে চেষ্টা করে রাতে বাসের টিকিট অনেক কষ্টে পেয়েছি।

ভারত ফেরত যাত্রী গাজীপুরের সৈয়দ বদরুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসা শেষ করতে এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। ছুটি শেষে অফিস খুলেছে। এখন জরুরি ঘরে ফেরা প্রয়োজন। বাসে তো টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। যশোর থেকে কোনো এয়ারলাইন্সেও টিকিট নেই। যে ভাবে হোক গন্তব্যে ফিরতে হবে।

বেনাপোলের বাহাদুনপুর গ্রামের শামছুল আলম জানান, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে এসে আর কর্মস্থলে ফিরতে পারছি না। কোনো টিকিট নেই বাসের।

বেনাপোর স্থলবন্দরের এয়ার টিকিট এজেন্ট টাইম ট্রাভেল আ্যান্ড ট্যুারজসের প্রতিনিধি হাসান বলেন, সড়কপথে বেহাল অবস্থার কারনে দিন দিন আকাশপথে যাত্রীর চাপ বাড়ছে। চাপ বাড়ায় এবার ঈদে এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট সংখ্যাও বাড়িয়েছে। তারপরেও সংকট থেকে যাচ্ছে। ঈদের পরের দিন থেকে অধিকংশ প্লেনের টিকিট নেই। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে স্বাভাবিক হবে বলেও জানান তিনি।

বেনাপোল চেকপোস্টের রাজা বাদশা মানি চেঞ্জারের স্বত্ত্বাধিকারী আবুল বাশার বলেন, চিকিকৎসা ও ভ্রমণের কাজে এ পথে দিন দিন যাত্রী যাতায়াত বাড়লেও চাহিদা অনুযায়ী দূরপাল্লার বাসের সংখ্যা বাড়েনি। প্রতিবছর ঈদে, পূজাসহ বিশেষ উৎসবের সময় এ রুটে বাসের টিকিট না পেয়ে যন্ত্রণা ভোগ করতে দেখা যায় পাসপোর্টযাত্রীদের।

বেনাপোল শ্যামলী পরিবহনের ম্যানেজার গিয়াস উদ্দিন বলেন, ঈদের ছুটিতে যারা ভারতে গিয়েছিলেন তাদের অনেকে ফিরতি টিকিট কেটে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া কলকাতা থেকেই অধিকংশ সিট তাদের বুকিং হয়ে গেছে। এখন যারা আসছেন কোনো সিট দিতে পারছি না। তবে সামনের সপ্তাহ থেকে এই সংকট নিরসন হবে।

বেনাপোলের সবচেয়ে বেশি বাস চলাচলকারী সোহাগ পরিবহনের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম জানান, ঈদের ছুটিতে যারা কর্মস্থল ঢাকা থেকে বেনাপোল ও শার্শায় এসেছেন তারা ছুটি শেষে আবারো কর্মস্থলে যোগদানের জন্য ছুটা শুরু করেছেন। আমাদের টিকিট অনলাইনে বিক্রি করি বিধায় সব কাউন্টার অগ্রিম টিকিট বিক্রি করে ফেলেছেন। আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত কোনো টিকিট নেই। এসি বাসের টিকিট ভারত থেকে বিক্রি হয়ে যাওয়ায় আমরা স্থানীয়দের কোনো টিকিট দিতে পারছি না। কর্মস্থলে ফিরতি যাত্রীদের নিয়ে তার কম্পানির প্রায় ১৫টি এসি নন এসি বাস প্রতিদিন ঢাকার উদ্দেশে বেনাপোল ত্যাগ করছে। ভাড়া রাখা হচ্ছে এসি ১৪৫০ টাকা ও নন এসি চেয়ার ৬০০ টাকা। তবে অনেকে এসি বাসের টিকিট না পেয়ে চেয়ার কোচে টিকিট সংগ্রহ করেছেন।

তিনি বলেন, আগে চেয়ার কোচের চাহিদা ছিল বেশি। কিন্তু এখন এসি বাসের চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে দ্বিগুণ। সবাই একটু আরামে যাতায়াত করতে চায়। তারা খরচের দিকে না তাকিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে তাকায়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের শার্শা উপজেলা কমিটির সভাপতি সাজেদুর রহমান বলেন, এক শ্রেণির মানুষ হঠাৎ অর্থ সম্পদের মালিক বনে গেছেন। তাদের বিলাসিতা সব ক্ষেত্রেই বেড়েছে। স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতের জন্য তারা ঝুট ঝামেলা এড়িয়ে এসি বাসে যেতে আগ্রহ দেখায়। এদের কারণেই এসি বাসের টিকিটের চাহিদা বেড়েছে। তাছাড়াও বিগত দিনের চেয়ে বেনাপোল শার্শার মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। ঢাকামুখী কর্মসংস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়েছে। সঙ্গে মানুষের আয়ও বেড়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বেনাপোলে এসি বাসের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত