ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

মহাপরিচালকের পদত্যাগের দাবিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অচলাবস্থা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০১৯, ১৬:২৩

ডিজির পদত্যাগের দাবিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অচলাবস্থা

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাটির পরিচালকরা। সোমবার আগারগাঁওয়ে ইফার কার্যালয়ে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে। এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে একই দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সব মিলে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, শারীরিক অসুস্থতার কারণে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত অফিস করছেন না। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগে কেন তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হবে না, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এমন নোটিশের পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটিতে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা।

সংস্থাটির পরিচালক থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারিরাও চাচ্ছেন—সামীম মোহাম্মদ আফজাল ইফা’র ডিজির পদ থেকে পদত্যাগ করুক। সোমবার (১৭ জুন) সংস্থাটির পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালকরা এ বিষয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে ফাউন্ডেশনের ২৫ জন পরিচালকের মধ্যে ২৩ জন অংশ নেন।

সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে এতে বলা হয়েছে, ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভাবমর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে এবং সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই সংস্থার পরিচালকরা মনে করেন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে সম্পর্ক, এখনকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সৃষ্ট অচলাবস্থা এবং মহাপরিচালকের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে অত্র সংস্থার মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল মহোদয়কে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।’

এছাড়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে নিতে অবিলম্বে বোর্ড অব গভর্নরসের জরুরি সভা আহ্বান করার পক্ষেও সভায় পরিচালকরা মত দেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ও মার্কেট বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদারকে গত ৩০ মে সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল। ওই বরখাস্তের আদেশ বাতিল করতে গত ৩ জুন ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন মহীউদ্দিন।

এ ঘটনায় পরে মহাপরিচালককে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। দুর্নীতির অভিযোগে কেন সাময়িক বরখাস্ত করা হবে না এবং তার নিয়োগ কেন বাতিল করা হবে না- সাত কার্যদিবসের মধ্যে তার জবাব দিতে বলা হয় নোটিসে।

পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ও মার্কেট বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদারকে সাময়িক বরখাস্ত করার আদেশও বাতিল করা হয়।

সোমবারের সভার বিষয়ে ফাউন্ডেশনের পরিচালক (যাকাত বিভাগ) মাহাবুব আলম বলেন, বর্তমান মহাপরিচালক দীর্ঘ দশ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে আছেন। তিনি বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেন যেসব নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিশাল দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গেও দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে বায়তুল মোকাররমের পিলার ভেঙে ফেলার একটি ঘটনায় নিয়ম না মেনে তিনি একজন পরিচালককে অপসারণ করেছিলেন। এটা নিয়েও মন্ত্রণালয় থেকে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। তার চুক্তি কেন বাতিল করা হবে না-তাও জানতে চেয়েছে মন্ত্রণালয়।

এসব ঘটনায় ফাউন্ডেশনে অচলাবস্থার তৈরি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব ঘটনার পর মহাপরিচালক ফাউন্ডেশনে আসেননি। সেখানে অচলাবস্থা চলছে। আজকে এখানে পরিস্থিতি আরও খারাপ। উনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। এখন জুন মাস চলছে। আর্থিক বছরের শেষ পর্যায়। এ অবস্থায় নতুন ডিজি না পেলে আমরা কাজ করতে পারব না। এপিএর টার্গেট পূরণ করতে পারব না। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সভায় পদত্যাগ চেয়ে করা অনুরোধের চিঠি মহাপরিচালকের কাছে পৌঁছানো হলেও এখনও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি বলে জানান মাহাবুব আলম।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সামীম মোহাম্মদ আফজাল জুডিশিয়াল সার্ভিসে ১৯৮৩ সালে যোগদান করেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। অভিযোগ রয়েছে নিয়োগ, পদোন্নতিসহ নানা বিষয়ে অনিয়ম করেছেন তিনি। গত ১০ জুন তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এ নোটিশের পর থেকেই অস্থিরতা শুরু হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে। গুঞ্জন ওঠে, সামীম মোহাম্মদ আফজাল স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন। এরই মধ্যে গত শনিবার (১৫ জুন) বন্ধের দিনে তিনি আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে যান। তার দপ্তর থেকে বিভিন্ন নথিপত্র সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ইফা’র সচিব কাজী নূরুল ইসলামসহ অন্যরা বাধা দেন। তবে পরের দিন রোববার (১৬ জুন) অফিসে যাননি তিনি। এরপর সোমবার (১৭ জুন) অফিসে গেলে সামীম আফজালের দপ্তরের চারপাশে অবস্থা নেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এদিকে ইফা মহাপরিচালকের পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

এসব বিষয়ে জানতে মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালের মোবাইল ফোনে কল এবং এসএমএস করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

ডিপি/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত