ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে অনশনে প্রতিবন্ধী তরুণী

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০১৯, ১৭:২১

প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে অনশনে প্রতিবন্ধী তরুণী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চেয়ে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন চাঁদের কনা নামে এক প্রতিবন্ধী তরুণী। তার হুইল চেয়ার ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন বার্তা লেখা ২০টির মতো প্লাকার্ড। গলায় ঝুলছে, ‘আমি আমার মা প্রধানমন্ত্রীর ভালোবাসা চাই। তার সঙ্গে দেখা করতে চাই’।

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত বিয়াড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের মেয়ে চাঁদের কনা। বয়স ৩১। শিশুকাল থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার। হাতের উপর ভর দিয়ে হেঁটেই নানা চরাই উৎরাই পার হয়ে ২০১৩ সালে ইডেন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর যোগ্যতা অনুযায়ী একটি সরকারি চাকরির জন্য ছুটে বেড়িয়েছেন এ দুয়ার থেকে ও দুয়ার। কিন্তু সেই চাকরি আর ধরা দেয়নি। তাই নিরুপায় হয়ে বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন সেই চাঁদের কনা।

মাত্র নয় মাস বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে দুটি পায়ের কার্যক্ষমতা হারায় চাঁদের কনা। তবুও বাবা-মায়ের সচেতনতা আর নিজের প্রতিবন্ধিকতা জয়ের অদম্য চেষ্টায় চলতে থাকে হাতে হেঁটে পড়ালেখা।

চাঁদের কনা যখন অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী, তখন তার মা হাসনা হেনা বেগম মারা যান। এর কয়েক বছর পর ব্রেইন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তার বাবা। পরিবারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এবং বাবার অসুস্থতাজনিত কারণে তার জীবনে প্রতিবন্ধিতার সঙ্গে নেমে আসে চরম দারিদ্রতা। অবশেষে পড়ালেখার খরচ যোগাতে একটি বেসকারি টিভি চ্যানেলে সামান্য বেতনে চাকরি নেন তিনি। শত কষ্টের মাঝেও গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে সফলতার সঙ্গে অর্জন করেন উচ্চতর ডিগ্রি।

চাঁদের কনা বলেন, সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তিনি মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। অর্জন করেছেন প্রথম বিভাগ। শুধু তাই নয়, পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলেছেন। ভাড় উত্তোলন থেকে শুরু করে টিভি-রেডিওতে সংবাদ পাঠ; টিভি প্রোগ্রাম গ্রন্থনা, উপস্থাপনা ও পরিচালনা; নাটক, গল্প ও কবিতা লেখা; অভিনয় করা ও কবিতা আবৃতি করা; গল্প বলা; ছবি আঁকা এবং কম্পিউটারে সকল কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তিনি।

চাঁদের কনা আরো বলেন, রাজশাহী মাদার বক্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে তিনি অনার্স পড়েছেন। পঞ্চম তলায় তার ক্লাস হতো। অন্যসব ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজে আসতেন ৯টার দিকে। অথচ তিনি কলেজে যেতেন সকাল ৭টার দিকে। কারণ হাতে ভর দিয়ে পঞ্চম তলায় উঠতে তার দের ঘন্টার মতো সময় লেগে যেতো। স্কুল জীবন থেকে শুরু করে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন পর্যন্ত এমন হাজারো বাধা পেরিয়ে তিনি প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন; শুধুমাত্র তার স্বপ্ন একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার জন্য। এরপর যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেছেন তিনি।

চাঁদের কনা বলেন, এত কিছুর পরেও আমি কি সফল হতে পেরেছি? সবাই বলে শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড । তাই না খেয়ে, না ঘুমিয়ে জীবনের সবটুকু পরিশ্রম দিয়ে পড়াশোনা করেছি । কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুক্তি মিলবে কি আমার? এই কষ্টের জীবনের দেহের অর্ধেক অংশ বাদ দিয়ে হাজারো কষ্ট আর আর্থিক অভাবের মধ্যে হাতের উপর ভর দিয়ে এতটা পথ হেঁটেছি শুধুমাত্র একটি সরকারি চাকরির আশায়। কারণ জীবনের শেষ দিনগুলো নিশ্চিন্তে থাকতে চাই। আত্মনির্ভরশীল হয়ে বাঁচতে চাই।এখন দেহে শক্তি আছে কাজ করার আগ্রহ আছে কিন্তু আজ থেকে ২০ বছর পর এই শক্তি আর থাকবে না।তখন আমায় কে দেখবে? আমার কোন পৈত্রিক সম্পত্তি নেই। নিজের একাউন্টে কোন টাকা নেই। তাহলে ২০ বছর পর আমার অবস্থানটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। আমি শিশু না যে এতিমখানায় নেবে । আমি তো বৃদ্ধ না যে আমাকে বিদ্যাশ্রম নেবে। তাহলে আমার শেষ আশ্রয় কোথায় হবে?

তিনি বলেন, আমি হাটতে পারি না এটা কি আমার দোষ? আমার অর্থের জন্যেই দেহের সুস্থতা নেই তবে কি আমি মরে যাবো কিন্তু না আমি মরে যাব না আমি শিক্ষিত হয়েছি নিজে চাকরি করে উপার্জন করে খাওয়ার জন্য তাই আমার একটি সরকারি চাকরি দরকার সেই জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে চাই।

তিনি আরো বলেন, আমার প্রয়াত মা হাসনা হেনা একজন শিক্ষিকা ছিলেন। তার পেনশনের টাকা দিয়ে কোনোরকম ভাবে পরিবার চলে । আমার বাবা একজন অসুস্থ মানুষ তিনি ব্রেন স্টক করে বিছানায় পড়ে আছেন। এই মুহূর্তে আমার একটা চাকরি না হলে আমাদেরকে না খেয়ে মরতে হবে। এ বছরই আমার সরকারি চাকরির বয়স শেষ। বাধ্য হয়ে আমরণ অনশনে বসেছি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত