ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

কোরবানির গরু নিয়ে প্রস্তুত রূপগঞ্জের খামারিরা

কোরবানির গরু নিয়ে প্রস্তুত রূপগঞ্জের খামারিরা
কোরবানির ঈদের জন্য প্রস্তুত নাবিল এগ্রোফার্মের গরু

রূপগঞ্জ উপজেলার খামারপাড়া এলাকার আলমগীর হোসেন ১২টি দেশি গরু পালন করছেন। প্রতিদিন একটি গরুর পেছনে তার খরচ ১শ’৩৫ টাকা । গরুকে তিনি খেতে দেন খৈল, ভুষি, কুড়া, ফিড ও কাঁচা ঘাস। গতবার ঈদে ভাল দাম পেয়েছিলেন। এবারও সেই আশা করছেন তিনি। তার খামারের গরু মানভেদে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকায় বিক্রি হবে।

একই এলাকার ফজুল হক পালন করছেন দু’টি গরু। তিনিও আশা করছেন গরু দুটি ভাল দামে বিক্রি করবেন। তারা জানান, গরু খামার ব্যবসায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অনেকেই এ পেশায় আসতে উৎসাহিত হবেন। পশুর উপযুক্ত দাম পাওয়া গেলে ভারত থেকে গরু আনার দরকার হবে না। স্থানীয় খামারিরাই দেশের মাংসের জোগান দিতে পারবেন বলেও মনে করেন তিনি। শুধু ওই দুই খামারি নয়, রূপগঞ্জ উপজেলায় এবার কোরবানি উপলক্ষে শুধু খামারে ২০ হাজার ৬শ’২৪টি গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। এছাড়া গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই ২/১টি করে গরু কোরবানি উপলক্ষ্যে প্রস্তুত করছেন কৃষকরাও।

একজন আদর্শ খামারি উপজেলার তারাব পৌরসভার যাত্রামুড়া এলাকার তরুন যুবক নাইম ভুইয়া। তিনি নিজ উদ্যোগে গরুর খামার করেছেন। খামারে গিয়ে দেখা যায় গরুর মাথার ওপর ঘুরছে বৈদ্যুতিক পাখা, মশা মাছির উৎপাত থেকে রক্ষার জন্য টাঙানো রয়েছে মশারি। খাবারের তালিকায় আছে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য আর সার্বক্ষণিক চলছে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ধরনের পরিচর্যা। ২৪ ঘণ্টা এমন পরিচর্যা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এসব খামারে বেড়ে ওঠা গরুগুলোও হয়ে উঠছে হৃষ্টপুষ্ট ও সুন্দর।

খামার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, ভারতীয় গরুর চাপে অন্তত পাঁচ বছর তারা এ খাতে কোনো সুফল পাননি। অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। তবে এবার সুফল আসতে শুরু করেছে বলেন খামারিরা। কেননা গত বছর তেমন একটা ভারতীয় গরু আসেনি।

এদিকে স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীরা জানান, যেখানে আগে বিভিন্ন সীমান্ত পথে প্রতিদিন ভারত থেকে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার গরু আসতো। কিন্তু ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ ও বিজিবির কড়াকড়িতে এখন গরু আসছে না। চুরি করে আসলেও তা নগণ্য। এতে আগে যে গরুর দাম ৪০ হাজার টাকা ছিল এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে লাখ টাকারও বেশি। ঈদে নির্ভেজাল গরুর চাহিদা একটু বেশিই। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন ওষুধ এবং খড়, ভূষিসহ দেশীয় খাবার দিয়েই মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি হাতে নিয়েছেন রূপগঞ্জের গরু খামারিরা।

দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করায় এ অঞ্চলের গরুর চাহিদা অনেক বেশি। বাজারে দেশীয় গরুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় এ ঈদে লাভবান হবেন বলে আশাবাদী খামারিরা। তবে কোরবানি ঈদের আগে ভারত থেকে বাজারে পশু প্রবেশ করলে ক্ষতির মুখে পড়ার আশংকায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, অসাধু গরু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ করলেও দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার কৃষক ও খামারিরা। প্রতি বছরই ঈদ এলে গরু বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন এ উপজেলার কৃষকেরা। ছোট বড় খামারের পাশাপাশি প্রতিটি কৃষক পরিবার ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজা করে থাকেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত ক্ষতিকর ইনজেকশন ও ট্যাবলেট পরিহার করে ঘাষ খড়ের পাশাপাশি খৈইল, ভুষি, কুঁড়া, ফেন (ভাতের মাড়) খাদ্য হিসেবে খাওয়ানোর মাধ্যমে মোটাতাজা করা হচ্ছে এসব গরু।

উপজেলার নগরপাড়া এলাকার মোঃ আবুল ভুইয়া বলেন, দেশীয় জাতের গরু লালন পালন করা হয়েছে তার খামারে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এসব গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। দেশীয় গরুর চাহিদা থাকায় এরই মধ্যে খামার পরিদর্শনে আসছেন ক্রেতারা। অনেকে খামার থেকেই গরু কিনে নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বরুনা এলাকার নজরুল ইসলাম জানান,শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়, নিজের কোরবানির গরু সংগ্রহ ও মানুষকে স্বাস্থ্যসম্মত গরু প্রদানের জন্যেই আমার এ উদ্যোগ।

দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজাকরণ করা গরুগুলোর মধ্যে প্রায় অর্ধেক খামারেই বিক্রি হয়ে গেছে। বাজারেও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এসব দেশি জাতের গরুর। উপজেলার চানখালী এলাকার গরু ব্যবসায়ী ইমানউদ্দিন জানান, দফায় দফায় গো খাদ্যের দাম বাড়ায় এবং ভারত থেকে গরু আনার কারণে গত তিন বছর ধরে লাভের মুখ দেখতে পারেনি রূপগঞ্জের গরু ব্যবসায়ীরা। এবছর খামারি ও পালনকারীরা লাভের আশায় বুক বাধতে শুরু করেছেন। এ বছর উপজেলার বিভিন্ন জাতের বিপুল পরিমান গরু পালন করা হচ্ছে। যা দ্বারা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন হাটেও পাঠানো হবে। তাদের আশা এবারের হাটে আশানুরূপ দামও পাওয়া যাবে।

ঈদ উপলক্ষে উপজেলার শতাধিক খামারি ও কৃষক দেশীয় পদ্ধতিতে ৪৫ হাজার গরু মোটাতাজা করছেন উল্লেখ করে এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার এবিএম জাহাঙ্গীর আলম রতন জানান, এবারের কোরবানির ঈদে স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়েও অতিরিক্ত গরু থাকবে। তা উপজেলার বাহিরে বিভিন্ন হাটে বিক্রি করা হবে। আমরা খামারিদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখছি। কেউ যাতে পশুর শরীরে ক্ষতিকারক ইনজেকশন পুশ না করে সেদিকে বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। কোরবানির প্রতিটি হাটে আমাদের মেডিকেল টিম থাকবে। ভারতীয় গরু না আসলে আমাদের কোনো প্রভাব পড়বে না জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হলে খামারিরা লাভবান হবেন।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, এখানে কেউ অবৈধ উপায়ে পশু মোটাতাজাকরণ করছে না। আমাদের তরফ থেকে কড়া নজরদারি রয়েছে। কেউ এমন কাজ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কোরবানির জন্য আবুল হোসেনের খামারে দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে এসব গরু

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত