ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

নবাবগঞ্জে পানিবন্দি ১২ গ্রামের মানুষ

  নবাবগঞ্জ (দোহার) প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০১৯, ১৭:৫৬

নবাবগঞ্জে পানিবন্দি ১২ গ্রামের মানুষ

প্রবাহমান পদ্মা নদী সংলগ্ন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদ জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন। যা দোহার ও নবাবগঞ্জবাসীর নিকট বেড়িবাঁধ এলাকা হিসেবে পরিচিত। চলমান বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর প্রবল বর্ষণ ও পানি বৃদ্ধির ফলে গত কয়েক দিনে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত ১২টি গ্রামের প্রায় ২৫’শ মানুষ পানি বন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ইতিমধ্যে প্রবল বর্ষণে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে অধিকাংশ গ্রামীণ জনপথসহ কৃষি ফসল। তলিয়ে গেছে বসত বাড়ি এবং বিভিন্ন গ্রামীণ অবকাঠামো। ফলে আতংক আর উৎকণ্ঠার মধ্যে রাত দিন পার করছে অধিকাংশ গ্রামবাসী।

সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি ও প্রবল বর্ষের কারণে, জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের, রায়পুর,চারাখালি, বালেঙ্গা, রাজাপুর, কান্তারটেক, কেদারপুর, আশয়পুর, পানি কাহুর,আর ঘোষাইল, ঘোষাইল, তিকপালদিয়া ও সোনাবাজু।

গ্রামে অবস্থিত বসত ভিট বাড়ি, কৃষিজমি, মসজিদ, মন্দির, স্কুল ও হাট বাজারে অবস্থিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া জনসাধারণের চলাচলের সকল গ্রামীণ কাঁচা সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে আছে ৪টি সেতু। বন্য কবলিত পানিবন্দি গ্রামবাসী এখন নৌকায় যাতায়াত করছেন। পূর্ব রায়পুর এলাকায় অবস্থিত রায়পুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাশের এলাকার রাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। বালেঙ্গা, ঘোসাইল ও রায়পুর বাজারের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। গ্রামগুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে ঘরবাড়ি রেখে পরিবার পরিজন গবাদিপশু পাখি নিয়ে অনত্র নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, তারা এখনো কোন সরকারী ত্রাণ কিংবা কর্মকর্তার দেখা পাননি এখনো। আজ কয়েকদিন যাবত পানির সাথে যুদ্ধ করে তাদের বাঁচতে হচ্ছে। কথা হয় বন্যা কবলিত আশয়পুর গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক শামসুল হকের সাথে, তিনি বলেন, আজ প্রায় ১০ দিন হলো আমাদের এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। আমরা পানিবন্দি অবস্থায় বসবাস করছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ ভাই ছাড়া কোন নেতা-নেত্রী বা সরকারী লোক আমাদের কোন খোঁজ খবর নিতে আসেনি। এসময় কৃষক বাচ্চু মিয়া বলেন আমার ৫ বিঘা পাট ও শাক সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েকদিন ধরে নৌকা চালিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে। পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে আছি আমাগো দেখার কেউ নাই।

বন্যা কবলিত জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মাসুদুর রহমান বলেন, ঢাকার নবাবগঞ্জ ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলটি একটি অবহেলিত এলাকা। পদ্মার পানি ও ভাঙ্গন থেকে নবাবগঞ্জ উপজেলাকে রক্ষায় ৯৭-৯৮ অর্থবছরে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এই এলাকায় বাধনির্মাণ করে। এতে করে এই ইউনিয়নের একটি বিরাট অংশ ভাঙ্গন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পায়। অন্যদিকে পদ্মা নদী সংলগ্ন এই ইউনিয়নের প্রায় ১২ থেকে ১৫টি গ্রাম প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পানিতে ডুবে যায়। ফলে স্থানীয় কৃষক ও সাধারণ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তিনি রক্ষাবাঁধে পরিকল্পিতভাবে আরো বেশ কয়েকটি সুইজগেট নির্মাণের দাবিসহ সরকারের সংশিষ্ট দপ্তরকে বন্যা কবলিত পানিবন্দি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান।

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইসএম সালাউদ্দিন মনজু বলেন, নিয়মিত খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত এলাকাটি পরিদর্শন করা হবে।

অপরদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে দোহার উপজেলার পদ্মা নদীর নিকটবর্তী নয়াবাড়ি, মাহমুদপুর ও বিলাশপুর ইউনিয়নে মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি এভাবে বাড়তে থাকলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঐসব ইউনিয়নের আরো অনেক নতুন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত