ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নামবে’

‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নামবে’

বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমে যাবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া এ তথ্য জানান। চলমান বন্যা পরিস্থিতি ও ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

আরিফুজ্জামান জানান,আগামী দুই সপ্তাহ দেশের মধ্যে এবং উজানে দেশের বাইরে ভারী বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। এ সময় বন্যা পরিস্থিতি আর অবনতির কোনো আশঙ্কা নেই।

তিনি বলেন, গত সপ্তাহের শেষ থেকে সারাদেশে এবং দেশের উজানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেছে। এ কারণে দেশের প্রধান নদ-নদীর পানি শনিবার থেকে হ্রাস পাওয়া শুরু করেছে। এ মুহূর্তে সব জায়গায় পানি হ্রাস পাচ্ছে।

পাউবোর এ নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, গত সপ্তাহের শেষদিন বিপদসীমার ওপরে ছিল। গতকাল শনিবার ১৭টি পয়েন্টে, আজ সকাল ৯টায় ১৩টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্টেশন ভেদে বিপদসীমার ১-২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়ায় সব কয়টি পয়েন্টে দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে পানি।

তিনি বলেন, আশা করছি আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব পয়েন্টে পানি নেমে বিপদসীমার নিচে যাবে। তবে যে সব জায়গায় বেশি বন্যা আক্রান্ত ছিল যেমন- জামালপুর, গাইবান্ধায় অনেক ভেতরে পানি ঢুকে গেছে, সে জায়গা থেকে পানি নামতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।

আরিফুজ্জামান আরো বলেন, এ সপ্তাহে দেশে এবং উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই এবং আগামী সপ্তাহেও ভারী বৃষ্টিপাতের লক্ষণ দেখছি না। নদ-নদীর পানি হ্রাস আগামী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। দুই সপ্তাহের মধ্যে বড় বন্যার ঝুঁকি আমাদের দেশে নেই।

এসময় আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামসুদ্দীন আহমেদ জানান, আগামী ১০ দিনে বড় ধরনের বন্যার কোনো পূর্বাভাস নেই। বঙ্গোপসাগরে যে তিন নম্বর সর্তক সংকেত দেওয়া রয়েছে, তা আস্তে আস্তে তুলে নেয়া হবে।

একই সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, এবার ২৮টি জেলা, ১৬৩ টি উপজেলা, ৪৯ টি পৌরসভা ও ৯৬১ টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৬ হাজার ৫৩টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫৬৭টি পরিবার পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৬ লাখ ৩০ হাজার ৩৮৩ জন। বন্যায় বিভিন্ন কারণে মারা গেছেন ৭৫ জন। এর মধ্যে শিশু ৫৬ জন। সব মিলিয়ে সারাদেশের ৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গবাদি পশু-পাখি মারা পড়েছে ২২ হাজার ৪০০। ৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪ হাজার ৮৯৭টি। সারাদেশের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মোট এক লাখ ৭৪ হাজার ৬৫০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন।

এসব ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ৬ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে বন্যার্তদের জন্য ৪ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ হিসেবে দেওয়া হবে তিন হাজার ৯০০ বান্ডেল টিন। এছাড়া দেশের বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করে বরাদ্দ করা চাল ও শুকনো খাবার তুলে দেওয়া হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্র তদারকি, পানিবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ, চলাচলে সহযোগিতাসহ সব দিকে সবধরনের মনিটরিং সর্বক্ষণ ছিলো। সরকারি সব ধরনের ছুটি বাতিল করে বন্যা মোকাবিলায় কর্মকর্তারা কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।

এছাড়াও বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পশু খাদ্যের জন্য ২৪ লাখ টাকা ও শিশুখাদ্যের জন্য ১৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। এখন পর্যন্ত ত্রাণ ব্যবস্থাপনাকে কেন্দ্র করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান তিনি।

ভবিষ্যতে বন্যা দীর্ঘায়িত হলেও সরকার তা মোকাবিলায় প্রস্তুত বলে জানিয়ে এনামুর রহমান দাবি করেন, সমন্বিত প্রচেষ্টায় এবার ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। সফলভাবে এবার বন্যা পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। তিনি জানান, যেসব স্থানে পানি নেমে যাচ্ছে সেসব স্থানে টিউবওয়েল স্থাপন ও পানির জার বিতরণ করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল ও আবহাওয়া অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. সামছুদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত