ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

জিয়া-এরশাদ পাকিস্তানের লোক ছিলেন: এইচটি ইমাম

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০১৯, ২০:০২  
আপডেট :
 ৩০ জুলাই ২০১৯, ২০:০৪

জিয়া-এরশাদ পাকিস্তানের লোক ছিলেন: এইচটি ইমাম

সাবেক দুই সেনাশাসক জিয়াউর রহমান ও এইচএম এরশাদ পাকিস্তানি মানসিকতার লোক ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরীর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘গৌরবের অভিযাত্রায় ৭০ বছর: তারুণ্যের ভাবনায় আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

এইচটি ইমাম বলেন, প্রতিষ্ঠার পর আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতা এদিক-ওদিক ছুটে গেছেন। কিন্তু এতে আওয়ামী লীগের শক্তি কমেনি, বরং দিন দিন বেড়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারা সবাই ছিলেন বরেণ্য নেতা।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য যদি কেউ কিছু করে থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। জিয়াউর রহমান, এরশাদ ক্ষমতায় ছিলেন। জিয়া-এরশাদ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এরা পাকিস্তানি মানসিকতার লোক ছিলেন। তারা দেশের জন্য কিছুই করেননি। এরশাদ সাহেব কিছু উন্নয়ন করেছিলেন, কিন্তু উনার মন ছিল অন্যদিকে, পাকিস্তানের দিকে। একমাত্র আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জন্য কিছু করেছে।

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচকদের মধ্যে আরও ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও ওয়াসিকা আয়শা খান, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্যানেল আলোচকদের বিভিন্ন প্রশ্ন করেন এবং তারা জবাব দেন।

শেখ হাসিনা একাই সব সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন? অনুষ্ঠানে মিজানুর রহমান নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করেন, বঙ্গবন্ধু তো ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণে বিশ্বাস করতেন। তাহলে এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একাই কেন সব সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা দিতে দেখি? সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না কেন?

জবাবে এইচটি ইমাম বলেন, আমাদের দেশে সরকার পরিচালিত হয় সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রীই হচ্ছেন প্রধান। তাকে কেন্দ্র করে অন্যান্য মন্ত্রীরা পরিচালিত হয়। তবে প্রত্যেক মন্ত্রীর তার মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার আছে। শেখ হাসিনা এমন একজন ক্যারিশমাটিক লিডার, উনার ব্যক্তিত্ব এমনই যে অনেক ক্ষেত্রে তিনি পিতা বঙ্গবন্ধুকেও ছাড়িয়ে গেছেন। তার আন্তর্জাতিক খ্যাতিও আছে। এজন্য অনেক সময় মনে হয়, তিনি বোধহয় একাই সব সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দিচ্ছেন। মনে হয়, তিনিই বোধহয় সব ক্ষমতার অধিকারী। আসলে এটি সরকার পরিচালনার বিষয়ে একটি আবছা ধারণা। প্রধানমন্ত্রী একাই সব সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, কেন্দ্র থেকে উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যন্ত সরকারি সব বিভাগের প্রধানরাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

স্বাধীনতার ঘোষক বিতর্ক স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে এখনো বিতর্ক কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নগরীর বেসরকারি পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, জিয়াউর রহমান তার জীবদ্দশায় নিজেকে কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেননি। তার মৃত্যুর পরই এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। বিএনপি যেভাবে তাকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে তা শুনলে জিয়াউর রহমান নিজেই কবরে শুয়ে পড়তেন।

তিনি দাবি করেন, যতই দিন যাচ্ছে, বিএনপি নেতারা এই মিথ্যা বক্তব্য থেকে পিছু হটছেন। এরপরও কেউ কেউ বলেন। গ্রামগঞ্জে বলা হয়। হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে বলা হচ্ছে। তবে পাঁচ বছর পর সেগুলো আর থাকবে না। এই বিভ্রান্তি কেটে যাবে।

ছাত্রলীগ নিয়ে মনোকষ্ট অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগসহ সাম্প্রতিক ছাত্ররাজনীতি নিয়ে মনোকষ্টের কথা জানান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও আমিনুল ইসলাম আমিন। সংস্কৃতি থেকে ছাত্রলীগের দূরে সরে যাওয়া নিয়ে এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে দুই নেতার কাছ থেকে এসেছে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য। একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ওয়াসিকা আয়শা খানও বলেছেন হতাশার কথা।

মেয়র আ জ নাছির উদ্দীন বলেন, আমরা বৈষয়িক কোনো চিন্তা থেকে ছাত্রলীগ করিনি। আমাদের সময়ের ছাত্র রাজনীতি আর এখনকার ছাত্র রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য আছে। আমরা চেহারা দেখলে চিনতাম, কারা আমাদের সমর্থক। তারপর তাকে কর্মী বানাতাম। এখন যারা ছাত্রলীগ করতে আসে, তাদের সংগঠনের নীতি-আদর্শ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। কেন তারা ছাত্রলীগকে বেছে নিল, সেই সম্পর্কেও কোনো ধারণ নেই। নীতি-আদর্শ একেবারেই অনুপস্থিত, অথচ সেটা ধারণ করেই ছাত্রলীগ বা ছাত্র রাজনীতি করা উচিত।

আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, ছাত্রলীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে ছাত্রদল। ছাত্রদলের নেতাদের সবাই ৩-৪ সন্তানের বাবা, বয়স ৪০ পার করেছে। একেকটি কমিটি ৬০০ থেকে ১ হাজার জনের। এখানে নীতি-আদর্শের কোনো বিষয় নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ছাত্রলীগও সেদিকে ধাবিত হচ্ছে। ছাত্রলীগ-ছাত্রদল বা বর্তমানের ছাত্র রাজনীতি পরিণত হয়েছে আখের গোছানোর পাঠশালায়। অবশ্য শুধু ছাত্রনেতাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। যে সমাজে একজন শিক্ষক ছাত্রের বাসায় গিয়ে বসে থাকে ভিসি হওয়ার জন্য, সেখানে শুধু ছাত্র রাজনীতির দোষ দিয়ে কী হবে!

ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, আমরা যখন ছাত্রলীগ করতাম, তখন আমাদের পড়তে হতো। পাঠ্যবইয়ের বাইরে অনেক অনেক বই পড়তে উৎসাহ দেওয়া হতো। বিতর্কে অংশ নিতে হতো। সংস্কৃতির সঙ্গে ছাত্রলীগের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। আমরা চাই, এটা ফিরে আসুক।

চট্টগ্রামের উন্নয়ন কয়েকজন শিক্ষার্থী চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রসঙ্গে সড়কে যানজট, উন্নয়ন ভোগান্তি এবং জলাবদ্ধতার অবস্থা তুলে ধরে এ থেকে পরিত্রাণের কথা বলেন। এর জবাবে মেয়র নাছির বলেন, সিটি করপোরেশনসহ ৩২টি সেবা সংস্থা আছে। সবগুলোই সরকারের অংশ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারের প্রকল্পগুলো নেওয়া হচ্ছে। কর্ণফুলী গ্যাস, চউক, সিটি করপেরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতা অস্বীকার করা যাবে না। প্রকল্প গ্রহণ সবসময় এককেন্দ্রিক হয় না। একমাত্র জনপ্রতিনিধি হিসেবে সব কাজের প্রত্যাশা সিটি মেয়রের কাছে। কিন্তু তখন আমাদের কিছুই করার থাকে না।

সমন্বয়হীনতার কথা স্বীকার করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বুধবার চট্টগ্রামের সকল মন্ত্রী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সমন্বয় সভা হবে এবং তাতে চট্টগ্রামের সমস্যা নিরসনে আলাপ হবে।

ডিপি/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত