ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঈদে ভাঙ্গা সড়কই ভরসা

  রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০১৯, ১২:৩১

ঈদে ভাঙ্গা সড়কই ভরসা

উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার কালাদি এলাকার বাসিন্দা রানা হামিদ। পেশায় রাজমিস্ত্রি। রূপসী-কাঞ্চন সড়কেই যাতায়াত করতে হয় তাকে।

স্ত্রী সন্তানদেরকে নিয়ে যাচ্ছেন ঈদের বাজার করতে। দুঃখের সাথে তিনি বলেন, বাজান আর কইয়েন (বলবেন) না, রূপসী-কাঞ্চন সড়ক আমাদের দুর্ভাগ্যের আরেক নাম। প্রতিদিন ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

রানা হামিদ বলেন, গরু বোঝাই ট্রাক নিয়ে বেপারীরা প্রায় বিপাকে পড়ে যান। সড়ক তো নয় যেন ধানের জমি। অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে পুকুরে পরিণত হয়ে যায়। অসংখ্য গর্ত। গাড়ি যেন চলতে চায় না। গাড়ি চলে হেলেদুলে।

তিনি বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাগো এ রাস্তায়ই চলতে হচ্ছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। ভাইগো আমাদের দুঃখ দেখার কেউ নাই। কত নেতা, এমপি মন্ত্রী এলো গেলো আমাগো ভাগ্যের পরিবর্তন হলো না।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাটাব এলাকার ওমর ফারুক বলেন, আমাদের কপালে আছে দুর্ভোগ। তাই সইতে হচ্ছে। ঈদের মধ্যে বউ বাচ্চা নিয়ে এ রাস্তা দিতে যেতে ভয় লাগে। তাই অনেকে ১০/১২ কিলোমিটার ঘুরে তিনশ ফোট রাস্তা দিয়ে বহু কষ্টে যাতায়াত করছেন।

আরেকজন ব্যবসায়ী উপজেলার হাটাব এলাকার কামাল হোসেন। তিনি বলেন, কাজের তাগিদে প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকাতে যাতায়াত করতে হয় নিরুপায় হয়ে এ সড়কেই। এতগুলো বছর চলে গেলো কোনো রাজনৈতিক নেতার চোখে এটা পড়ল না। এটাই সবচেয়ে দুঃখের বিষয়। লোকমুখে শুনি গোটা দেশে উন্নয়নের জোয়ার। বিগত ১২ বছরে রূপসী-কাঞ্চন সড়কে একটি ইটের খোয়াও পড়ল না। উন্নয়নটা হলো কোথায়?

কামাল হোসেন বলেন, প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির পুরো অংশেই বড় বড় গর্ত। পিচ উঠে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে ধুলাময় সড়কটি সামান্য বৃষ্টিতেই ডোবায় পরিণত হয়। গত এক যুগে বড় কোনো সংস্কারকাজ না হওয়ায় রূপগঞ্জের রূপসী থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত এই সড়ক এখন দুর্ভোগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রূপসী বকুল চত্বর থেকে কাঞ্চন মায়ার বাড়ি এলাকা পর্যন্ত সড়কটি খানাখন্দে ভরা। এবড়োখেবড়ো সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে গরু বোঝাই ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ নানান যানবাহন। ধুলায় ধূসর সড়কটিতে নাকেমুখে রুমাল চেপে চলতে হয় পথচারীদের। ধুলা থেকে বাঁচতে অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে সড়কে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছেন।

কয়েকজন পথচারীর সঙ্গে কথা হলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বছরের পর বছর এমন অবস্থা চললেও জনপ্রতিনিধিরা কিছুই করছেন না। কালেভদ্রে মেরামতের নামে গর্ত ভরাট করা হয়। তবে মাস না পেরোতেই ফিরে আসে আগের চিত্র। ফলে বছরজুড়ে ধুলা আর কাদার অত্যাচারের সঙ্গে দুর্ঘটনা এবং যানজটের শিকার হতে হয় পথচারীদের।

রূপসী এলাকায় কথা হয় স্কুল ছাত্র তাহমিদের সাথে। তিনি বলেন, রাস্তা ভাল না দীর্ঘ দিন। তাই প্রতিদিন হেটেই স্কুলে যাই। দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কে চরম ভোগান্তিতে আছি। নির্বাচনের সময় হলে কত নেতা আসে। এখন মন্ত্রী, মেয়র, কমিশনার কেউ এ রাস্তার কাজ করছে না। আমাদের কষ্টের কোনো খবর তারা রাখেন না। ১৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ও সাড়ে ৫ মিটার প্রস্থের সড়কটির দুই পাশে গড়ে উঠেছে ৩০টিরও বেশি ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এ ছাড়া সরকারি মুড়াপাড়া কলেজ, মুড়াপাড়া স্কুল, গর্ন্ধবপুর উচ্চবিদ্যালয়, রূপসী নিউ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাটাব আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়সহ ১৫টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চলাচল এই সড়ক ধরে।

মুড়াপাড়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম বলেন, বিদ্যালয়ে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও শুধু বেহাল সড়কের কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে চায় না।

স্থানীয় একটি পেপার মিলের ট্রাকচালক জমির উদ্দিন জানান, সড়কের গর্তের কারণে কিছুদিন আগে একটি কাগজবোঝাই ট্রাক উল্টে যায়। তা ছাড়া গর্তে ট্রাক বা অন্য কোনো যান আটকে গেলে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

মুড়াপাড়া বাজারে কথা হয় দোকানদার আমজাদ মিয়ার সঙ্গে। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি জানান, বেহাল সড়কের কারণে উপার্জন কমেছে তার। ভাংগাচোরা সড়কে লোকজন বাজারেও আসতে চায় না।

ভ্যানচালক জুলহাস মিয়া বলেন, তিন বছর আগে ভ্যান উল্টে ডান পা ভেঙে যায় তার।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মতিয়ার রহমান ও জয়নাল আবেদিন বলেন, খারাপ রাস্তায় চলাচলের সময় গাড়ির বেশি ক্ষতি হয়। ফলে ভাড়া বেশি নিতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে চলাচল করা গেলেও এখন বর্ষায় গাড়ি (সিএনজি) বের করা যায় না।

মুড়াপাড়া কলেজের এক শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রতিদিন লাখো মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। সড়কটি সংস্কারের দাবিতে আমরা বেশ কয়েকবার মানববন্ধন করেছি, সড়কে ধানের চারা লাগিয়ে প্রতিবাদ করা হয়েছে। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। ফলে মানুষ যেমন কষ্ট পাচ্ছে, তেমনি এই এলাকায় প্রত্যাশিত শিল্পায়ন হচ্ছে না।

এক যুগেও কেন সড়কটি সংস্কার হয়নি জানতে চাইলে কাঞ্চন পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, আমি নতুন এসেছি। আমার প্রথম কাজই হবে কাঞ্চন-রূপসী সড়কের উন্নয়ন। আমার নেতা গোলাম দস্তগীর গাজী পাট ও বস্ত্র মন্ত্রীকে নিয়ে এ পৌর সভার সার্বিক উন্নয়ণে কাজ করে যাব। উন্নয়ণের রোল মডেল হবে কাঞ্চন পৌরসভা।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদ পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক) বলেন, রূপগঞ্জে অনেক রাস্তাঘাট করেছি। আরো নতুন নতুন রাস্তা হচ্ছে। এ রাস্তার টেন্ডার হয়ে গেছে। খুব শীঘ্রই এ রাস্তার কাজও শুরু হবে। তখন আর মানুষের দুর্ভোগ থাকবে না। তাছাড়া রাস্তা আরো প্রশস্ত হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত