ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২১ মিনিট আগে
শিরোনাম

কামার পাড়ায় ব্যস্ততা

  সুলতান মাহমুদ , দিনাজপুর

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০১৯, ১৭:০৮

কামার পাড়ায় ব্যস্ততা

আর মাত্র ক’দিন বাকী তাই দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে দিনাজপুরে কামাররা চাপাতি, দা, ছুরি, বটি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কামার পট্টি টুং টুং শব্দে মুখরিত। কয়লায় আগুনে লাল টকটকে লোহা গরম করে পাকা লোহার তৈরি হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরি করতে ব্যস্ত কোরবানীর পশু জবাই করার হাতিয়ার ।

ঈদুল আজহা মানেই পশু কোরবানির ঈদ। পশু কোরবানি ও মাংস তৈরিতে অতি প্রয়োজনীয় এসব ধারালো অস্ত্র সরবরাহের জন্য কামাররা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এই সময়টাতে কামারদের কাজের চাপ অনেক বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় তাদের আয়-রোজগারও।

শহরের বালুবাড়ী মহারাজা স্কুল মোড়, বড়বন্দর, রামনগরসহ কয়েকটি স্থানে কামাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কামারদের প্রয়োজনীয় জ্বালানি কয়লার দাম বেড়ে গেছে। বেড়েছে লোহার দামও। লোহা ও কয়লার দাম বাড়লেও সে তুলনায় কামারদের মজুরি বাড়েনি। ফলে কামার সম্প্রদায় আর্থিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে পৈতৃক পেশা পরিবর্তন করছে।

দিনাজপুর সদর, বিরল, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দরসহ অন্যান্য উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কামার পরিবারের বসবাস। আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে তাদের পেশায় এসেছে দারুণ ব্যস্ততা। তাদের ভাতির ফাসফুস আর হাতুড়ি পেটার ঠুকঠাক, টুং-টাং শব্দে মুখর কামারশালাগুলো।

কামার সম্প্রদায়ের কারিগররা নগেন কর্মকার জানান, প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। কিন্তু তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি।

মহারাজা স্কুল মোড় এলাকার বিজন কুমার জানান, কামার শিল্পের অতিপ্রয়োজনীয় কয়লা, লোহা এবং ফাইলের দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। অথচ তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম আগের মতোই রয়েছে। কুরবানির ঈদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অর্ডারের পর এখন ডেলিভারি শুরু হয়েছে। এ কারণে তাদের ব্যস্ততাও বেড়ে গেছে।

তিনি আরও জানান, কাজের চাপ বেশি থাকলেও বিদ্যুতের সমস্যার কারণে ঠিক সময়ে কাজ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া যন্ত্র তৈরির জ্বালানি কয়লার দামও বাড়তি। বর্তমানে ১ মণ কয়লার মূল্য ৫শ’ টাকার বেশী। যন্ত্রপাতি তৈরির কাঁচামাল কিনতে হয় প্রতি কেজি ১২০ টাকায়। ১ কেজি লোহার তৈরি একটি দা বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়।

কামার কারিগর বিমল রায় জানান, এ পেশায় পরিশ্রমের চেয়ে মুনাফা অনেক কম। দিনরাত সারাক্ষণ আগুনের পাশে বসে কাজ করতে হয়। তারপরেও গ্রাহকদের চাহিদা পূরণে দিনরাত একাকার করে কাজ করে চলেছি। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হলেও তাদের পৈত্রিক পেশাকে এখনো বুকে আঁকড়ে ধরে আছেন। কিন্তু তাদের সমত্মানদের আর এ পেশায় আনবেন না। অনেকেই তাদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। তবে সরকারী প্রষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্পকে টেকসই করে গড়ে তোলা সম্ভব বলে তারা মনে করেন ।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম জানান, আমাদের সমাজে কিছু কামার সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করেন । কামার সম্প্রদায়ের তৈরী জিনিসপত্র আমাদের ঘরগৃস্থলীতে কাজে লাগে । তবে ঈদুল আযাহা উপলক্ষে পশু কুরবানীর জন্য দা ,বটি, ছড়ির প্রয়োজন হয় । এ সমস্ত জিনিসপত্র কামার সম্প্রদায়ের লোকেরা যোগান দিয়ে থাকে ।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত