ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

পুলিশের ভুল

বিনা অপরাধে ১৭ দিন কারাভোগ করেন রুহুল

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০৮:৫৪  
আপডেট :
 ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০৮:৫৮

বিনা অপরাধে ১৭ দিন কারাভোগ করেন রুহুল

কোনোরকমে চাষাবাদ করে সংসার চালান রুহুল আমিন। মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের উয়াইল গ্রামে স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে টিনের ঘরেই তাদের বসবাস।

প্রতিদিনের মতো ২৪ জুন রাতেও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। রাত ২টার দিকে বাইরে থেকে দরজায় টোকা পড়ে। ঘুমন্ত চোখে দরজা খুললেন রুহুল। এ সময় মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মামুন অর রশিদসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঘরে প্রবেশ করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হুঙ্কার ছেড়ে বলেন, ‘ওই বেটা বাগেরহাট থেকে ৫০ লাখ টাকা দাদন এনেছিস ইটভাটায় লোক পাঠাবি বলে। কিন্তু লোক দিস নাই কেন। তোর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বাগেরহাটে। ওয়ারেন্ট আছে।’ এরপরই হাতকড়া পরিয়ে নির্দোষ রুহুলকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশের এই দল।

অনেক কাকুতিমিনতি করে পুলিশ কর্মকর্তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন রুহুল, আমি নির্দোষ স্যার। টাকা নেওয়া তো দূরের কথা, জীবনে কখনই আমি বাগেরহাটে যাইনি। আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নাই। আমাকে ধরছেন কেন? কোথাও ভুল হচ্ছে আপনাদের।

থানায় নেওয়ার আগে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করতে বহু কাকুতিমিনতি করেন রুহুল। কিন্তু কে শোনে তার কথা। কোনো মামলার আসামি না হয়েও ভুয়া ওয়ারেন্টে রুহুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিনা দোষে কারাভোগ করতে হয় ১৭ দিন। পরে বাগেরহাট আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাটি ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় ১১ জুলাই কারাগার থেকে মুক্তি পান রুহুল।

ভুয়া ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার ও কারাভোগের নেপথ্যে আপন ছোট ভাই আজাদ মিয়া এবং ভাগ্নে কাজী মুক্তাদির পলাশের হাত থাকতে পারে বলে ধারণা রুহুল আমিনের।

তিনি বলেন, পৈতৃক সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে আজাদের সঙ্গে বিরোধ ছিল তার। এর জেরেই অর্থের বিনিময়ে পুলিশ পরিদর্শক মামুন অর রশিদকে হাত করে তাকে গ্রেপ্তার করানো হয়। তাকে গ্রেপ্তারের পর আজাদ ও পলাশের সঙ্গে তার কোনো বিরোধ আছে কিনা তা জানতে চেয়েছিলেন মামুন। তাদের বিরুদ্ধে পরে কোনো প্রকার কথা না বলতেও রুহুলকে হুমকি দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

বিনাদোষে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও জেল খাটানোর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রুহুল আমিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে ১৬ জুলাই লিখিত অভিযোগ করেন। তবে অভিযোগ তুলে নিতে রুহুল ও তার স্বজনদের নানা ধরনের প্রস্তাব দিচ্ছেন পরিদর্শক মামুন। এমনকি প্রতিশোধ হিসেবে আজাদ ও পলাশকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে ঢোকানোর আশ্বাস দিচ্ছেন রুহুলকে। প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন থানায় আজাদ ও পলাশের বিরুদ্ধে চুরি-ডাকাতিসহ ১০-১২টি মামলার আসামি করার ব্যবস্থাও করে দেবেন বলে আশ্বাস দিচ্ছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বাগেরহাটের আদালতে দায়ের করা যে মামলার ওয়ারেন্টে রুহুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো, ওই মামলার আসামির নাম হাজরা রেজা পাহলভী রুম্মান। এটি অর্থ আত্মসাৎ মামলা। বাগেরহাট আদালতের মামলা নম্বর সিআর-৭৪/১৮। আসামি রুম্মানের বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়া থানার টেংরাখালী গ্রামে। রুহুল গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার স্বজনরা বাগেরহাট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যোগাযোগ করে ভুয়া ওয়ারেন্টের বিষয়টি জানতে পারেন। তারা সেখানকার আইনজীবীর মাধ্যমে বিষয়টি সংশ্নিষ্ট আদালতকে জানান। এরপর ৯ জুলাই বাগেরহাট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক রুহুলকে কারামুক্তির আদেশ দেন। আদেশনামায় বিচারক বলেন- এই আদালতে বিচারাধীন সি আর ৭৪/১৮ নম্বর মামলায় রুহুল আমিন নামে কোনো আসামি নেই। এই আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়নি। ৯ মে এই আদালত থেকে রুহুলের বিরুদ্ধে যে ওয়ারেন্ট ইস্যুর তারিখ দেখিয়ে সিল-স্বাক্ষর করা হয়েছে তা সঠিক নয়। অন্য কোনো মামলায় রুহুলকে গ্রেপ্তার করা না হলে অনতিবিলম্বে ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দেন বিচারক।

রুহুলের ভাইরা শাহাদাত হোসেন বলেন, বাগেরহাট আদালতের আদেশের কপি মানিকগঞ্জে কারাগারে পৌঁছানোর কথা ছিল ১১ জুলাই। কিন্তু ওইদিন মানিকগঞ্জ কারাগার থেকে রুহুলকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাগেরহাট কারাগারে। পরে একই দিন সন্ধ্যায় আদালতের আদেশনামা দেখিয়ে বাগেরহাট থেকে তাকে মুক্ত করা হয়। গ্রেপ্তারের পর থেকে কারামুক্ত হওয়া পর্যন্ত মামলা সংক্রান্ত ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে রুহুলের। এই টাকা জোগাড় করতে আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা এবং ১৫ হাজার টাকা সুদে নিতে হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুয়া ওয়ারেন্টে রুহুলকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপারের নির্দেশে দুই সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান মানিকগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ডিএসবি) হামিদুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, পরিদর্শক মামুন বাগেরহাট আদালতে রুহুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি ওয়ারেন্টের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে পারতেন। তা না নিয়ে তিনি রুহুলকে গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান করে দেন। এটি তার দায়িত্বে অবহেলা, ত্রুটি ও ভুল। এমনকি তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানাননি। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে সিলেটে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি। সূত্র: সমকাল

  • সর্বশেষ
  • পঠিত