ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রতিবন্ধী আফজাল নিগৃহীত নয়, সমাজের ভরসা

  মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০১৯, ১৬:২৯

প্রতিবন্ধী আফজাল নিগৃহীত নয়, সমাজের ভরসা

শৈশবেই পিতৃহারা আফজাল হোসেন। শারীরিকভাবে তিনি বিকলাঙ্গ। প্রতিবন্ধী আফজাল নিগৃহীত, ধিক্কৃত হতে থাকেন সমাজে। কিন্তু কোন প্রতিবন্ধকতাই তার সফলতার দরজা বন্ধ করতে পারেনি। কর্ম, শিক্ষা ও সাধনার মাধ্যমে তিনি তার জীবনের চিত্র পাল্টে দিতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমানে তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী।

অদম্য ব্যক্তি আফজাল মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পাট্টাই গ্রামের মৃত ক্বারি আব্দুল লতিফের ছেলে। ছোটবেলা থেকে মেধাবী আফজাল তার মা মোছাৎ ফজিরুন বেগমের প্রচেষ্টায় মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। আফজাল স্থানীয় জামেয়া ইসলামিয়া কর্মধা টাইটেল মাদ্রাসা থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে সিলেট খাস্তবীর দারুস সালাম মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন। এরপর সিলেট বিশ্বনাথের জামেয়া ইসলামিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসা থেকে টাইটেল (মাস্টার্স) পাস করে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন।

পড়াশোনা থাকাকালীন সময়ে তার জন্য কয়েকটি লজিং বাড়ি দেখা হয়। কিন্তু শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী আফজালের কোন লজিং বাড়িতে ঠাঁই হয়নি। একপর্যায়ে বিপদকালীন চারমাসের জন্য বিশ্বনাথের একটি বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা হয়। আর পেছনে তাকাতে হয়নি। তার আচার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে ওই বাড়ির কর্তাব্যক্তি তাকে টানা ৮ বছর বাড়িতে রাখেন।

পড়াশোনা শেষ করে মায়ের অনুরোধে শুরু করেন ফার্মাসিটিক্যাল ব্যবসা। ২০১০ সালে মাত্র ২৩ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে স্থানীয় কাটালতলী বাজারে ফার্মেসী ব্যবসা শুরু করেন। পাশাপাশি ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর জন্য বিকাশের এজেন্ট ও ফেক্সিলোড ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তার ব্যবসায় ৩ লাখ টাকার পুঁজি রয়েছে। প্রতিমাসে আয় হয় গড়ে ১৫ হাজার টাকা।

সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ফার্মেসী সেবা অব্যাহত থাকলেও স্থানীয় মানুষদের জন্য তার সেবা ২৪ ঘণ্টা। উচ্চ রক্তচাপ, প্রেশার সহ যাবতীয় প্রাথমিক চেকআপ তিনি করতে পারেন। দিচ্ছেন প্রাথমিক চিকিৎসা। অন্যদিকে বিকাশ ও ফ্লেক্সিলোড সেবা চলছে বিকলাঙ্গ হাতের আঙ্গুলের চাপে। তার উদ্যোমী কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ হচ্ছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

আফজাল বলেন, শৈশবে বাবাকে হারাই। পরে মায়ের প্রচেষ্টায় আমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। প্রতিবন্ধী হওয়ায় বিভিন্ন সময় অবহেলার পাত্রে পরিণত হয়েছি। কিন্তু আমার চেষ্টা থেকে আমি সড়ে দাঁড়াইনি। দুই বছর সিলেট জিন্দাবাজারস্থ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছি।

সমাজকর্মী ও ব্যবসায়ী হাজী মারুফ আহমেদ বলেন, আফজাল প্রতিবন্ধী হয়েও সমাজের মানুষদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তার ব্যবসাকে আমরা সেবা হিসেবে দেখছি। রাত ১টা হলেও ফোন দিলে ওষুধ পাচ্ছি। এটা এলাকায় একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

স্থানীয় লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. গোলাপ মিয়া বলেন, প্রতিবন্ধী হওয়া মানেই সমাজের বোঝা নয়। আফজাল নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আজ প্রতিষ্ঠিত হয়ে এর প্রমাণ দিয়েছে। শুধু শারীরিক প্রতিবন্ধীই নয়, বিকলাঙ্গ একটি হাত দিয়েই সে সাধারণ মানুষের মতোই কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। সত্যিই প্রশংসনীয়।

কুলাউড়া উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার নুরুল মাহমুদ ভূঁইয়া জানান, প্রতিবন্ধী আফজাল সরকারি ভাতা নিয়মিত পাচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত