ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

সেতুর কী হেতু!

  রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০১৯, ১৩:২১

সেতুর কী হেতু!

রূপগঞ্জে অনেক সেতু, কালভার্ট অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এ উপজেলায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫২৯টি সেতু ও ফুটব্রীজ রয়েছে। এরমধ্যে এ্যাপ্রোচ সড়ক নেই ৫৫টির। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে নিমিত হয়েছে অসংখ্য সেতু। সব মিলিয়ে এ উপজেলায় ছোট-বড় সেতু রয়েছে ৭শ’র উপরে।

এরমধ্যে অধিকাংশই অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এমনও সেতু রয়েছে যার দু’দিকে কোন রাস্তা নেই। একটি খালের উপর নির্মাণ করা হয়েছে এ সেতুটি। আবার এমন সেতু রয়েছে যার মাত্র দশ গজ রাস্তা আছে তারপর শুধু ফসলি জমি আর জমি। এছাড়া এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্য খালের উপর নির্মাণ করা হয়েছে সাতটি সেতু। রয়েছে পাশাপাশি যমজ সেতু। পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালের উপর রয়েছে অসংখ্য ফুটব্রীজ। শুধু বানিয়াদী সেচ প্রকল্পের খালের উপর রয়েছে ৪৫টির মতো সেতু। আর যাত্রামুড়া ও দাউদপুর সেচপ্রকল্প খালের উপর রয়েছে আরো অসংখ্য সেতু।

অব্যবহৃত ও অপরিকল্পিত সেতুর ছড়াছড়ি থাকলেও অনেক এলাকায় বাঁশের সাকোই ভরসা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যেসব সেতু নিয়ে হেতু রয়েছে, সেসব সেতুর কোন ভিত্তিপ্রস্তর নেই। বক্তব্য নিতে গেলেও এক বিভাগের কর্মকর্তা আরেক বিভাগের উপর দোষ চাপিয়ে দেন।

এদিকে, খাল ও নদের উপর অপরিকল্পিতভাবে সেতু গড়ে উঠায় জীব বৈচিত্র্য ঘটছে। শুধু বালু নদের রূপগঞ্জ অংশেই নির্মাণ করা হয়েছে ৩টি সেতু। এছাড়া একটি নির্মাণের অপেক্ষায়, আরেকটি প্রস্তাবনায় রয়েছে। এ দুটি নির্মাণ হলে ৫টি সেতু হবে বালু নদের রূপগঞ্জ অংশে। শীতলক্ষ্যা নদে রূপগঞ্জ অংশে রয়েছে ২টি সেতু। একটির নির্মাণ কাজও প্রায় শেষ। আরো একটি প্রস্তাবনায় রয়েছে।

এদিকে, পূর্বাচল উপশহরের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লেকের উপর নির্মাণ করা হয়েছে ৫৪টি সেতু। এসব সেতুগুলোর দু’পাশে কোন রাস্তা নেই। অপরিকল্পিতভাবেই এসব সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। একেকটি সেতুতে খরচ পড়েছে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণ করা হলেও আবার এমন সেতু রয়েছে যেটির স্প্যান দাঁড়িয়ে আছে গত এক দশক ধরে। এটি নির্মাণের কোন অগ্রগতি নেই। এ সেতু লাখো মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিবে। আর ঝুঁকিপূর্ণ সেতুরতো কোন অভাবই নেই। এসব সেতুগুলো অধিকাংশ নির্মাণ করা হয়েছে বিগত সরকারগুলোর আমলে।

সরেজমিনে সমগ্র উপজেলা প্রায় তিন মাস ঘুরে, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস ও পাউবোর কার্যালয় যোগাযোগ করে অনুসন্ধানে মিলেছে এমন চমকপ্রদ তথ্য।

১৭ বছরেও হয়নি বালু নদের সেতু: বাপ, মরণের আগে বুঝি এ বিরিজ (ব্রীজ) দেইহা যাইবার পারুম না। স্বাধীনের পর থেইক্যা হুইনাছি এহান দিয়া বিরিজ অইবো। সতেরডা বছর অইছে পায়া (স্প্যান) বানাইয়া খাড়া কইরা থুইছে। আর বানানের খবর নাই। এইডা কি সরকারের অফচয় অয় নাই। এভাবেই বালু নদের সেতুর পাশে দাঁড়িয়ে ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলেন তালাশকুর গ্রামের ষাটোর্ধ জয়নাল মিয়া।

জানা যায়, প্রস্তাবিত রামপুরা-কায়েতপাড়া সড়কের বালু নদের উপর তৃতীয় সেতুর প্রকল্প অনুমোদন হয় ২০০১ সালে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সেতুর নির্মাণ শুরু হয় ২০০৩ সালে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে এক বছরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব পান তৎকালীন ঠিকাদার ( বর্তমানে পলাতক) জাহিদ মিয়া। কিন্তু ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে বরাদ্দ মেলে ৫০ লাখ টাকা। এরপর আর কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ফলে চারটি পিলার নির্মাণের পর ব্রিজের নির্মাণ কাজ থমকে যায়। স্থানীয় এলাকাবাসীরা ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, অবরোধসহ নানা কর্মসূচী পালন করেছেন।

স্থানীয়রা বলেন, এ সেতু নির্মাণ হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের সেতু বন্ধন তৈরি হবে। কমে যাবে ঢাকার যানজট। খুলে যাবে লাখো মানুষের ভাগ্যের চাকা। স্থানীয় সমাজকর্মী অ্যাড. জালাল আহমেদ নাগরী বলেন, এ সেতু নির্মাণ হলে ঢাকা যাওয়া যেতো মাত্র ১০ মিনিটে। অথচ গত এক যুগ ধরে সেতুর চারটি পিলার ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।

স্থানীয়রা জানান, সেতুর রড চুরি হয়ে যাচ্ছে। কন্ট্রাক্টর ২০০৩ সালে যে পালিয়ে গেছে, এখনো তার হদিস নেই।

সাড়ে নয় লাখ টাকার সেতুটি পড়ে আছে অব্যবহৃত: সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাড়ে নয় লাখ টাকার একটি সেতু কোনো কাজেই আসছে না। এশিয়ান হাইওয়ের সড়কের নলপাথর এলাকা দিয়ে একটি সরু রাস্তা ফসলি জমিতে গিয়ে মিশেছে। এ রাস্তার ২০ গজ দূরেই একটি সেতু। আর সেতুর ৫ গজ পরে আর কোনো রাস্তা নেই। শুধু ফসলি জমি আর জমি। সেতুটির আশপাশে ৮ থেকে ১০ টি পরিবার রয়েছে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের অর্থায়নে এটি নির্মাণ করা হয়। এর নির্মাণ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে, নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ জেলা ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্প।

স্থানীয়রা বলেন, এ সেতুটি কারো কাজে আসে না। যেখানে রাস্তা নেই, সেখানে সেতু দিয়ে কি কাজ হবে।

সরু রাস্তার জন্য পাশাপাশি ‘যমজ’ সেতু: সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রূপগঞ্জ-ইছাপুরা সড়কের দক্ষিণবাগ এলাকা থেকে একটি রাস্তা ফসলি জমির মাঝখান দিয়ে গিয়ে গুতিয়াবো এলাকায় মিশেছে। এ রাস্তা দিয়ে খুব কম লোকই চলাচল করে। এ সরু রাস্তার মাঝখানেই গত জোট সরকারের আমলে একটি সেতু নির্মাণ করা হয় ৯ লাখ ১২ হাজার ৪শ’ ৩৮ টাকা ব্যয়ে। স্থানীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের বরাদ্দের টাকায় এ সেতু নির্মাণ করা হয়। এর দু’বছর পর এ সেতুটির ৫ গজ দূরে আরো একটি সেতু নির্মাণ করে এজিইডি। এ সেতুটিও নির্মাণে খরচ হয় ৯ লাখ টাকার উপরে। বর্ষা মৌসুমে এ রাস্তা ও সেতু পানিতে ডুবে যায়। স্থানীয় লোকজন এ সেতু দুটিকে জোরা সেতু বলেই চিনে। কথা হয় স্থানীয় কৃষক জহিরউদ্দিন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, রাস্তার অবস্থা ভাঙ্গা-চোরা। অথচ পাশাপাশি দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। বাঁশ-বেত কারিগর কফিলউদ্দিন মিয়া বলেন, বাজান কনতো দেহি, এ জায়গার মইদ্দে দুইডা বিরিজ ক্যান দিলো। রাস্তা দিয়া মানুষ চলবার পারে না। হেরা দুইডা বিরিজ বানাইছে। একটা বিরিজের টেহা দিয়া রাস্তাডা ভালা কইরা বানাইয়া দিত। আর বরষা মাস আইলেতো কতাই নাই। পানিতে হগল ডুইব্বা যায়গা। কি লাভ এমুন বিরিজ কইরা।

এটি ছাড়া আরো একটি যমজ সেতুর সন্ধান মিলেছে। এটি উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের বেলদী বাজার এলাকায়। বেলদী বাজার হতে পলখান যেতে পাশাপাশি দু’টি সেতু রয়েছে। যমজ সেতুর একটির ৯ মিটার স্প্যানের সেতুর ব্যয় দেখানো হয়েছে ৯ লাখ ৪৫ হাজার ৯৯৬ টাকা। এ সেতুটির ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ছিল মেসাস সাগর এন্টারপ্রাইজ। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে এটি নির্মাণ হয়। আর এর ৫ গজ দূরেই রয়েছে আরেকটি সেতু। এটিরও ব্যয় দেখানো হয়েছে ৯ লাখ টাকা।

এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্য খালে ৭ সেতু: অবাক হলেও সত্যি। কাঞ্চন পৌরসভার বিরাব এলাকার এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্য কেন্দুয়া-স্বর্ণখালী খালের উপর নির্মাণ করা হয়েছে ৭টি সেতু। এ সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে জোট সরকারের আমলে। এর কোনটি পৌরসভার অর্থায়নে, কোনটি উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের বরাদ্দে আবার কোনটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে। কোনটি ৯ লাখ, কোনটি ১০ লাখ আবার কোনটি ১৫ লাখ টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে। এ ৭টি সেতুর নির্মাণ করা হয়েছে খালের একপারের লোকজনের আরেক পারে যাওয়ার জন্য। মাত্র ৬০টি পরিবারের জন্য নির্মাণ হয়েছে এ সেতুগুলো। একটি সেতু রয়েছে, যেটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। পৌরসভার অর্থায়নে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ সেতু দিয়ে সারাদিনে ৫ জন লোকও চলাচল করে না বলে স্থানীয়রা জানান।

স্থানীয়রা বলেন, সেতুটির দক্ষিণপাশে কোন রাস্তা নেই। ফসলি জমি। ক্যান যে এউডা বানাইলো বুঝবার পারলাম না। বিরাব এলাকার কৃষক মাহবুবুর রহমান বলেন, একটা ছোড খালে এতডি বিরিজ কি দরকার আছিলো। হুদাহুদি সরকারের টেকা খরচ। কত রাস্তা ভাঙ্গাচোরা। হেগুলাইন মেরামত করার খবর নাই। কাঞ্চন পৌরসভার সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, এ সেতুগুলো করা হয়েছে এক পারের লোকজনের আরেক পারে যাতায়াতের জন্য। একটি সেতুর রাস্তা নেই এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাস্তা করার পরিকল্পনা ছিল। এখন আমি দায়িত্বে নেই।

সড়ক নেই, সেতু আছে: অদ্ভুত ব্যাপার! লুটপাটের একি চিত্র? নিজ চোখে না দেখলে অনেকেরই হয়তো বিশ্বাস হবে না। রূপগঞ্জের সদর ইউনিয়নের নবগ্রাম এলাকায় এক সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যার পাশ দিয়ে চলে গেছে আঁকাবাঁকা রাস্তা। পাশে ক্যানেল খাল। এই খালের উপরই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সেতু। এ সেতু দিয়ে কেউ চলাচল করতে পারে না। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, বিগত সরকারের আমলে এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।

স্থানীয়রা বলেন, এটা কেমন সেতু। আর কি কারণেই বা বানালো। সেতুর পাশ দিয়া রাস্তা আছে। ছোট্ট খালের উপর তাল গাছের মতো দাঁড়িয়ে আছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানান।

একই চিত্র দেখা গেছে তারাবো পৌরসভার দক্ষিণ মাসাবো এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) খালের উপর। এখানে যে সেতুটি করা হয়েছে, সেটি বেড়িবাঁধ থেকে শুরু। তবে সেতুর পশ্চিম পাশে কোন রাস্তা নেই। শুধু কাশফুল বন আর ইরি-বোরো জমি। আর সেতুর ডানে-বামে ফসলি জমির আইল। স্থানীয়রা বলেন, এ সেতু এলাকাবাসীর কোন কাজে আসে না।

এ্যাপ্রোচ নেই ৫৫টি সেতুর: সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ৫৫টি সেতুর এ্যাপ্রোচ সড়ক নেই। তবে উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্র মতে, এ্যাপ্রোচ সড়ক নেই প্রায় ৭৭টি সেতুর। সরেজমিনে দেখা যায়, দাউদপুর ইউনিয়নের হানকুর থেকে জিন্দা যাওয়ার রাস্তায় একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে। এ সেতুর এ্যপ্রোচ সড়ক নেই গত ৮ বছর ধরে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্মিত এ সেতুটি অহেতুক নির্মাণ করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা বলেন। স্থানীয়রা বলেন, ছোট একটা পাইপ লাইন দিলেই চলতো। শুধু শুধু সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ সেতুতে উঠতে গেলে লোকজনকে কষ্ট করে উঠতে হয়।

পূর্বাচলের সৌন্দর্য বর্ধনে ৫৪ সেতু: নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন ঠিকাদার জানান, রাজধানী ঢাকার পাশে রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ৫৪টি সেতু নির্মাণ করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এসব সেতুর অধিকাংশেরই দু’পাশে সড়ক নেই। অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সেতুগুলো। এসময়ের খালের ( রাজউকের প্রস্তাবনায় লেক) উপর এসব সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব সেতু নির্মাণে কোনটির খরচ পড়েছে ১৫ লাখ। আবার কোনটি ২০ লাখ। আবার কোনটি ৩০ লাখ টাকা। এসব সেতু কেউ ব্যবহার না করায় প্রতিটি সেতুতে শেওলা ধরেছে। কোন কোনটির সামনে জঙ্গল হয়ে আছে। স্থানীয়রা বলেন, উপশহরের সৌন্দর্যের জন্যই এগুলো বানানো হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শতে এক ঠিকাদার বলেন, এতগুলো সেতু কোন দরকার ছিল না।

প্রস্তাবনায় রয়েছে আরো ৬৪টি সেতু: জানা যায়, আরো ৬৪টি সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা রয়েছে। এর মধ্যে ২৮টিই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে। আর ২৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের অধীনে। বালু নদের উপর চনপাড়া-ডেমরা ও ইছাপুরা-ডুমনী সেতুটি ভেঙ্গে নতুনভাবে মেরামতের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া বালু নদের নাওড়া-বেড়াইদে আরো একটি নতুন সেতু করার জন্য ইতোমধ্যে পিপি ডিজাইন করা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী এনায়েত কবির বলেন, এলজিইডির কোনো অপরিকল্পিত সেতু নেই। যদিও থেকে থাকে সেগুলো বিগত সরকারগুলোর আমলে নির্মাণ করা হয়েছে সম্ভবত। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মো. আবেদালী ভুঁইয়া বলেন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা সেতুর প্রস্তাব দেন। আমরাতো জানিনা কোথায় সেতু লাগবে। তারাই তালিকা দেন। আমরা কোনো অব্যবহৃত ও অপরিকল্পিত সেতু করিনি। আমার সময়ে যে কয়টা সেতু করেছি। এগুলো একদম সঠিকভাবে করা হয়েছে। যদি কোথাও থেকে থাকে সেগুলো বিগত সরকারের আমলে হয়তো করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এনএনআইটি শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালের উপর যেসব সেতু করা হয়েছে এগুলো লোকজনের পারাপারের জন্য। সরকারিভাবে নির্দেশনা রয়েছে, ৫’শ মিটার পরপর সেতু করা যাবে। আর এরপর যদি কোথাও হয়ে থাকে তবে সেটা বিশেষ কারণে হয়েছে। সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আলীয়ুল হোসেন বলেন, বালু নদের উপর সেতুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এটি নতুন করে করার পরিকল্পনা রয়েছে। অপরিকল্পিত সেতুর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে এর কর্মকর্তারা বলেন, সওজের অপরিকল্পিত কোন সেতু নেই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম বলেন, যেসব সেতুর এ্যাপ্রোচ নেই ও ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আর বেশ কিছু সেতু করা হয়েছে কৃষকদের সুবিধার্থে। কৃষিপণ্য নিয়ে যেন তারা আসা-যাওয়া করতে পারে। তারপরও যদি অপরিকল্পিত ও অব্যবহৃত সেতু থাকে সেগুলো যেন ব্যবহার উপযোগী করা যায় তারও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত