ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

পিরোজপুরে জমে উঠেছে পেয়ারার ভাসমান হাট

  পিরোজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:৫৯  
আপডেট :
 ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৫৩

পিরোজপুরে জমে উঠেছে পেয়ারার ভাসমান হাট

পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদের আটঘর কুড়িয়ানায় জমে উঠেছে পেয়ারার ভাসমান হাট। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার পেয়ারা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এশিয়ার অন্যতম কুড়িয়ানার পেয়ারার বাগানগুলোতে এ বছর ভালো ফলন হয়েছে। মৌসুমী এই ফল সংরক্ষণ করা গেলে এ থেকে কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পেয়ারা ব্যবসায়ীরা। তবে পেয়ারার ভালো ফলন হলেও এ বছর ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাশ চাষিরা।

স্থানীয় পেয়ারা চাষিরা জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় পেয়ারার ফলন বেশ ভালো হয়েছে। প্রথম দিকে প্রতি মন ৮ থেকে ৯ শ’ টাকা করে বিক্রি করলেও এখন প্রতিমন বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ২ থেকে আড়াই শ’টাকা দরে। গাছ থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করার জন্য শ্রমিককে দৈনিক ৫/৬ শত টাকা করে মজুরি দিতে হয়। আর একজন শ্রমিক দৈনিক ২/৩ মন পেয়ারা সংগ্রহ করতে পারে। তাই পেয়ারার এখন যে দাম তা দিয়ে শ্রমিকের মজুরিও হচ্ছে না।

স্থানীয়রা চাষিরা জানান, প্রায় আড়াই শত বছর পূর্বে পূর্ণ চন্দ্র মণ্ডল নামের এক ব্যাক্তি ভারতের গয়া থেকে একটি পেয়ারা এনে পিরোজপুরের নেছারাবাদে রোপন করেন। যা স্থানীয় ভাবে গয়া বা গইয়া নামে পরিচিত। এই উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নে বিভিন্ন জাতের পেয়ারার চাষ করে আসছেন স্থানীয় চাষিরা। উপজেলার আটঘর, কুড়িয়ানা, জিন্দাকাঠী, কঠুরাকাঠী, আলতা,সৈয়দকাঠি, ইন্দ্রে ও পূর্ব জলাবাড়ীসহ প্রায় ২৬টি গ্রামে পেয়ারা চাষ হয়। উপজেলার পেয়ারা বাগানের সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছে প্রায় দেড় হাজার পরিবার।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চপল কৃষ্ণ নাথ জানান, এ উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ২৬টিরও বেশী গ্রামের ৬৫৭ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হচ্ছে। এসব জমিতে ২ হাজারেরও বেশি পেয়ারার বাগান রযেছে। আর প্রায় সাড়ে ১২ শত পরিবার পেয়ারা চাষের সাথে জড়িত। এখানে পেয়ারা চাষিরা তাদের জীবিকা নির্বাহ করে এর মাধ্যমে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চাষিরা বাগান থেকে এসব কাঁচা-পাঁকা পেয়ারা সংগ্রহ করে বিক্রি করতে নৌকায় করে আনছেন স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে। উপজেলার পশ্চিম কুরিয়ানা, জিন্দাকাঠী, আটঘর, আদমকাঠী, ব্রাহ্মনকাঠী, আতা, কঠুরাকাঠী, ঝালকাঠী, মাদরা, ঝিনুহার বাজারে পেয়ারার ভাসমান হাট বসে। সকাল ৭টায় বসা হাটগুলোতে বিকাল ৩টা পর্যন্ত পেয়ারা বেঁচা-কেনা হয়। পাইকাররা স্থানীয় এ সব বাজার থেকে তা ক্রয় করে ট্রলার, লঞ্চ, ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেন।

খুলনা থেকে পেয়ারা কিনতে আসা পেয়ারা ব্যবসায়ী মো. জহিরুল ইসলাম জানান, খুলনা অঞ্চলে থাই পেয়ারাসহ বিভিন্ন জাতের পেয়ারার চাষ হলেও পিরোজপুরের আটঘর কুরিয়ানার পেয়ারার চাহিদা ভোক্তাদের কাছে খুবই বেশি।

স্থানীয় চাষী সঞ্জয় কুমার জানান, ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় পেয়ারার ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। তাই সরকারের কাছে স্থানীয় চাষিদের দাবি দ্রুত যোগাযোগের ব্যবস্থা উন্নত করে এটি একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন,পেয়ারা সংরক্ষণ ও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে এটি হতে পারে লাভজনক ব্যবসা। পেয়ার থেকে কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। যদি উন্নত মানের সংরক্ষণ ও বাজারজাত করণের ব্যবস্থা থাকে তাহলে কুড়িয়ানায় পেয়ারাভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠতে পারে।

স্থানীয় চাষিরা জানান, এখন চলছে পেয়ারার মৌসুম। ফলন ভালো হলেও সরকারি, বেসরকারী কোনো আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় পেয়ারা সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। তবে ঐতিহ্যবাহী এ মৌসুমী ফলের ন্যায্য মূল্য পাবে এমনটাই প্রত্যাশা পেয়ারা চাষিদের। এ ছাড়া এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশি ভালো নয়। কেননা, সড়ক পথে এসব পেয়ারা বাগানে ক্রেতাদের আসা-যাওয়ার তেমন কোন সুব্যাবস্থা নেই। একমাত্র নৌপথেই এখানে আসতে হচ্ছে।

নেছারাবাদের ঐতিহ্যবাহী পেয়ারা সংরক্ষণ ও চাষিদের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বাবু। তিনি জানান, এখানে পেয়ারার মৌসুমে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা পেয়ারা বাগান পরিদর্শনে আসেন। তাই এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ সারা বছর ধরে এসব পেয়ারা যাতে সংরক্ষন করে রাখা যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে।

ওই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরো জানান, সেখানে সড়ক পথে যেতে সেখানের রাস্তা সংস্কারের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আশা করি আগামী ৬ মাসের মধ্যে সেখনে সড়ক পথে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত