ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

প্রাথমিক শিক্ষিকাকে মারধর: ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত

প্রাথমিক শিক্ষিকাকে মারধর: ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত

বাগেরহাটে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে দায়িত্বরত অবস্থায় এক প্রাথমিক শিক্ষিকা ও তার স্বামীকে মারধরের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত রামপাল উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ( ইপ-১ অধিশাখা) উপসচিব মো. ইফতেখার আহম্মেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে এই আদেশ দেওয়া হয়।

গত সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) স্বাক্ষর হওয়া ওই প্রজ্ঞাপনের কপি সাংবাদিকের হাতে পৌঁছায় রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে। একই সঙ্গে তাকে কেন চূড়ান্তভাবে অপসারণ করা হবে না ১০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তার কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, পেড়িখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুলকে বাগেরহাট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ জিআর ৯৪/২০১৪ নং (রামপাল) মামলায় দণ্ডবিধির ৩৩২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ১ বছর ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং তিন হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো ৩০ দিন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করায় জনস্বার্থে তাকে দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ বিবেচ্য নয় বলে সরকার মনে করে। সেহেতু রফিকুলকে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯ এর ৩৪ (১) ধারা অনুযায়ী ইউপি চেয়ারম্যান পদ থেকে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রমে তথ্যসংগ্রহকালে রামপাল উপজেলার বড় কাটালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বেগম খাদিজা ইয়াসমিন ও তার স্বামী মো. রবিউল আলম খোকনকে ওই বছরের ১৪ জুন পেড়িখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুল বেধড়ক মারধর করেন। এ ঘটনায় তথ্য সংগ্রহকারী খাদিজার স্বামী রবিউল অভিযোগ করলে ওই বছরের ১০ জুলাই রামপাল থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

নির্বাচন কমিশন ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যান রফিকুলের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে রামপাল থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করার অনুরোধ জানিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবদের এ নির্দেশনার চিঠি দেন তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপ-সচিব মু. আবদুল অদুদ। পরে তৎকালীন বাগেরহাট পুলিশ সুপারের নির্দেশে এই আলোচিত মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। আদালত ১০ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি শেষে গত ১ আগস্ট বাগেরহাটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া বেগম পেড়িখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুলকে দেড় বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে আদালত তাকে তিন হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেন। পরে এদিন তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহকারী শিক্ষিকার স্বামী ও মামলার বাদী মো. রবিউল আলম খোকন বলেন, ইউপি চেয়্যারম্যান রফিকুল স্থানীয় মজীদ মীর নামে এক ভোটারের স্থান পরিবর্তনের জন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজে নিয়োজিত শিক্ষিকা তার স্ত্রী খাদিজাকে নির্দেশ দেন। আমার স্ত্রী চেয়ারম্যানকে তার সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে ভোটার তালিকায় নাম স্থানান্তর করার ক্ষমতা নির্বাচন অফিসের জানিয়ে তাকে সেখানে যোগাযোগের অনুরোধ করলে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর গত ১৪ জুন দুপুরে চেয়ারম্যান খোকনের দোকানে ঢুকে আমার স্ত্রী খাদিজাকে কিল, ঘুষি ও লাথি শুরু করে। একপর্যায়ে স্ত্রীকে বাঁচাতে আমি এগিয়ে গেলে আমাকেও চেয়ারম্যান বেধড়ক মারধর করে। পরে স্থানীয়রা আমাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রামপাল থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া ওই চেয়ারম্যান কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা, ড্রেজার মাস্টার, ডাক্তার, নারী ইউপি সদস্যকেও মারধর করেছেন। এমন লোককে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা উচিত।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত