সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরে নতুন আইন
অবশেষে আগামী ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হচ্ছে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮। বহুল প্রতীক্ষিত আইনটি কার্যকরের তারিখ নির্ধারণ করে বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি আদেশ জারি করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইনের গেজেট জারি হয়। সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য আইন প্রণয়নের বাধ্যবাধকতা থাকলেও ইতোপূর্বে কোনো সরকারই এ আইন প্রণয়ন করেনি। তারা বিধি, নীতিমালা ও প্রয়োজন মতো নির্দেশনাপত্র জারি করে সরকারি কর্মচারীদের পরিচালনা করে আসছেন।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ২০০৯ সালের ১৪ দলীয় জোট সরকারের সময় এই আইনটি প্রণয়নের কাজে হাত দেয় সরকার। প্রায় দশ বছর পর আইনটির গেজেট প্রকাশ করা হয়। আইনটি প্রণয়নে প্রায় ৫৭ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যা আইন প্রণয়নের ইতিহাসে বিরল ঘটনা বলে অভিহিত করেন অনেকেই। প্রথম দিকে সরকারি কর্মচারি আইন, তারপর সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারি আইন, তারপর প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারি আইন নামে খসড়া প্রণয়ন করা হয়। সবশেষে সরকারি চাকরি আইন নামে আইনটির নামকরণ করা হয়।
আইনটির দ্বাদশ অধ্যায়ে সরকারি চাকরিজীবীদের অবসর ইস্তফা প্রদানের বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, একজন কর্মচারি ৫৯ বছরে এবং মুক্তিযোদ্ধা কর্মচারিরা ৬০ বছর বয়সে অবসরে যাবেন। চাকরির বয়স ২৫ বছর হলে একজন কর্মচারি স্বেচ্ছায় অবসরে যেতে পারবেন। ২৫ বছর চাকরিপূর্ণ হলে সরকার জনস্বার্থে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করতে পারবে। তবে আইনের কোথাও জনস্বার্থের সংজ্ঞা দেওয়া নেই। জনস্বার্থ বলতে কি বোঝানো হয়েছে তা এখানে অস্পষ্ট।
সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর প্রথম অধ্যায়ের ৫ ধারায় বলা হয়েছে সরকার সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে তারিখ থেকে নির্ধারণ করবে সেই তারিখ থেকে এই আইন কার্যকর হবে। আইনটিতে মোট তেরোটি অধ্যায় রয়েছে। আইনটির একাদশ অধ্যায়ে সরকারি কর্মচারিদের ফৌজদারি অপরাধ বিষয়ে বলা হয়েছে। একাদশ অধ্যায়ের ৪১ এর (১) উপধারায় বলা হয়েছে, কোন সরকারি কর্মচারির দায়িত্বপালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র গ্রহণ হওয়ার আগে তাকে গ্রেফতার করতে হলে সরকারের বার নিয়োগকারি কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে। দুই উপধারা বলা হয়েছে, কোন সরকারি কর্মচারির বিরুদ্ধে আদালতে ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন থাকলেও বিভাগীয় মামলা দায়ের বা নিষ্পত্তিতে কোন বাধা থাকবে না। ৪২ এর (১)উপ ধারায় বলা হয়েছে, কোন সরকারি কর্মচারি ফৌজদারি মামলায় মৃত্যুদণ্ড অথবা এক বছর মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে ওই দণ্ড আরোপের রায় বা আদেশের তারিখ থেকে তিনি চাকরি থেকে তাৎক্ষনিক বরখাস্ত হবেন।
তবে রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন তাকে অনুরূপ তাকে শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিশেষ কারণ বা পরিস্থিতি রয়েছে তা হলে তিনি তাকে শাস্তি থেকে অব্যাহতি দিতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি শাস্তি মওকুফ করলে তিনি চাকরিতে পুনবহাল হবেন। বরখাস্ত ব্যক্তি মামলার আপিলে খালাসপ্রাপ্ত হলে তাকে চাকরিতে পুনবহাল করা হবে। দন্ডিত ব্যক্তি আপিল আদালতে খালাসপ্রাপ্ত হলে আরোপিত দণ্ডাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। খালাসপ্রাপ্ত কোন কর্মচারি অবসরে যাওয়ার সময় হলে তিনিও আর্থিক সুবিধাদি পাবেন।