ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

ইলিশের বাড়ি আসলে কোথায়: চাঁদপুর না বরগুনা?

ইলিশের বাড়ি কোথায়: চাঁদপুর না বরগুনা?

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার আলাদা ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সেইসঙ্গে স্বীকৃত পণ্য আছে। সে হিসাবে চাঁদপুর জেলা ব্যাপকভাবে সমাদৃত ইলিশ উৎপাদনের জন্য। এজন্য এই জেলাকে ‘ইলিশের বাড়ি’ বলা হয়ে থাকে।

তবে ইলিশের মোট উৎপাদনের হিসেবে এবার বরগুনা জেলা থেকে দাবি তোলা হয়েছে যেন তাদেরকে ‘ইলিশের জেলা’ ঘোষণা করা হয়।

ইলিশের বাড়ি কোথায় এ নিয়ে হঠাৎ এই বিতর্কের কারণ কী?

বরগুনা হতে চায় ইলিশের জেলা

বিতর্কের শুরু হয়েছিলো বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) বরগুনায় অনুষ্ঠিত এক ইলিশ উৎসবে। সেখানে আয়োজকরা দাবি করেন যে বরগুনা জেলার ৬টি উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজার মৎস্যজীবী রয়েছেন, এবং ইলিশ উৎপাদনেও তাদের অবস্থান চাঁদপুরের চাইতে কয়েক ধাপ এগিয়ে।

তারা বলছেন, সেকারণে বরগুনাই ‘ইলিশের জেলা’ হওয়ার দাবিদার।

ওয়ার্ল্ড ফিশের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ইলিশের প্রায় ৮৫% উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন নদী ও সাগর থেকে প্রায় পাঁচ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ করা হয়। খবর বিবিসি বাংলার।

ইলিশ উৎপাদনের হিসেবে বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার স্থান শীর্ষে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই জেলায় মোট ইলিশ আহরণ হয় এক লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টনের মতো। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বরগুনা। গত অর্থ বছরে এই জেলা থেকে আহরিত ইলিশের মোট পরিমাণ ছিলো প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন।

বরগুনার প্রধান তিনটি নদী বিষখালী, বুড়িশ্বর (পায়রা) ও বলেশ্বর নদী থেকে আহরণ করা হয় ৪৯০০ মেট্রিক টন। এবং সাগর থেকে ৯১,০০০ মেট্রিক টন।

অন্যদিকে, একই অর্থবছরে চাঁদপুর থেকে ইলিশ ধরা হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার মেট্রিক টন। ইলিশ আহরণের হিসাবে এই জেলার অবস্থান ষষ্ঠ স্থানে, এবং এই চাঁদপুর ‘ইলিশের বাড়ি’ বলে পরিচিত।

তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

চাঁদপুরকে ইলিশের বাড়ি কেনো বলা হয় এটা নিয়ে কোন আপত্তি নেই বরগুনাবাসীর।

বরগুনা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল বলেন, আমরা বরগুনাকে ইলিশের জেলা হিসেবে দেখতে চাই। কারণ আমরাই সবচেয়ে বেশি ইলিশ উৎপাদন করছি। দেশের প্রায় এক পঞ্চমাংশ ইলিশ এই বরগুনায় আহরিত হয় এবং সারা দেশে যত ইলিশ পাওয়া যায় তার বেশিরভাগ যায় বরগুনা থেকে।

এছাড়া বরগুনার নদী থেকে আহরিত ইলিশের স্বাদ পদ্মার ইলিশের চাইতে অনেক সুস্বাদু বলেও তিনি দাবি করেন।

তিনি বলেন, বরগুনার ইলিশ অন্য যে কোনো জেলার ইলিশের চাইতে সুস্বাদু। আর এই জেলার ইলিশ সাইজেও বড় থাকে। একেকটা ইলিশ প্রায় এক কেজির মতো। তেলও হয় প্রচুর। এখন উৎপাদন, স্বাদ, গড়ন সবদিক থেকে বরগুনা এগিয়ে আছে, আমরাই ইলিশের ভাণ্ডার, তাই ইলিশের জেলা হওয়ার দাবি আমরা করতেই পারি।

জাতীয় মাছ ইলিশকে বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিং করার পেছনে বরগুনা সবচেয়ে বেশি ভূমিকার রেখেছে বলেও দাবি সেখানকার মানুষের।

বরগুনার পাথরঘাটায় রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য পাইকারি ও বাজারকেন্দ্র বিএফডিসি।

এরকম আরেকটি ইলিশ- বন্দর (যেখানে ইলিশ এনে রাখা হয়) স্থাপন এবং একটি ইলিশ গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণের প্রচেষ্টা রয়েছে বলে ইলিশ উৎসবে আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় একজন সংসদ সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু।

মাছ ধরার নৌকা, ঘাটগুলোর আধুনিকায়নের মাধ্যমে বরগুনাকে ইলিশের জেলা হিসেবে ঘোষণা করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করবেন বলেও জানান।

তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে: বগুনার এত অর্জন থাকা সত্ত্বেও এখনও চাঁদপুরকেই কেনো ইলিশের বাড়ি বলা হয়।

চাঁদপুর কেনো ইলিশের বাড়ি

চাঁদপুরের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকি জানান, বরগুনা উপকূলের কাছাকাছি জেলা হওয়ায় সেখানকার জালে মাছ ধরা পড়ে বেশি তবে প্রজননের সময় মা ইলিশগুলো এই চাঁদপুরের আশেপাশের নদীতেই আসে। এ কারণেই এই জেলাকে ইলিশের বাড়ি বলা হয়।

তিনি বলেন, ইলিশ বিচরণ করে লোনা পানিতে, কিন্তু ডিম পাড়ার সময় তারা মিঠা পানির মোহনায় আসে। চাঁদপুরের পদ্মা নদীতে প্রচুর পরিমাণে প্ল্যাঙ্কটন আছে, যেটা মা ইলিশের প্রধান খাবার। এই প্ল্যাঙ্কটন আর অন্য কোনো জেলায় নেই। পানির মান আর খাবার থাকায় মা ইলিশ এখানে ডিম ছাড়তে আসে। তার মানে এটা তাদের বাড়ি।

মা ইলিশের ডিম ছাড়ার সময় ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকায় চাঁদপুরে ইলিশের আহরণ কম হয়।

অন্যদিকে ডিম ছাড়ার মৌসুম শেষে যখন আবার ইলিশ ধরা শুরু হয় ততদিনে এই ইলিশগুলো উপকূলীয় জেলাগুলোর দিকে চলে যাওয়ায় সেখানে স্বাভাবিকভাবে ইলিশ বেশি ধরা পড়ে বলে তিনি জানান।

এদিকে, চাঁদপুরে ইলিশ আহরণ তুলনামূলক কম হলেও ইলিশের সবচেয়ে বড় বাজার এই জেলাতেই।

স্থানীয় সাংবাদিক ফারুক আহম্মদ বলেন, দেশের ৩০% ইলিশ চাঁদপুর থেকে আহরণ করা হয়। তাছাড়া ভোলা, বরিশাল, নোয়াখালিসহ অন্যান্য কয়েকটি জেলায় আহরণ করা সব ইলিশ আগে আনা হয় চাঁদপুরের বাজারে। এখান থেকেই সারা দেশে মাছ সরবরাহ করা হয়। দেশের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় অর্ধেক এই বাজারগুলো থেকেই সারাদেশে পাঠানো হয়।

তাই চাঁদপুর অন্য যে কোন জেলার চাইতে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

২০১৫ সালে চাঁদপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর মণ্ডল ইলিশের ব্র্যান্ডিং কার্যক্রম শুরু করেন । চাঁদপুর জেলাকে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ নামে ব্র্যান্ডিং করেন তিনি। সরকারের পক্ষ থেকেও পরে এই দাবিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত