ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

হতাশার কবলে লক্ষ্মীপুরে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা

  লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ১৫:১৫

হতাশার কবলে লক্ষ্মীপুরে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা

লক্ষ্মীপুর জেলার ৫৮টি ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা এখন নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন। দীর্ঘদিন থেকে তাদের চাকুরি স্থায়ীকরণের দাবি জানিয়ে আসলেও সে বিষয়ে কোনো সুরাহা না হওয়ায় জীবন-জীবিকা নিয়ে বর্তমানে দুঃশ্চিন্তা বেড়েছে তাদের।

তারা ২০১০ সাল থেকে ডিজিটাল সেন্টারে বিনা বেতনে কাজ করে আসছেন। পাশাপাশি এসব উদ্যাক্তারা জেলার প্রায় ২০ লাখ নাগরিকের জন্ম নিবন্ধন সফলকরণসহ বিশ্বের বৃহত্তম বাংলাদেশ ডট গভ ডট বিডির মতো ওয়েবসাইটের লক্ষ্মীপুর জেলা অংশ তৈরিতে ভূমিকা রাখছেন। এমনকি দৈনন্দিন নানা ধরনের ডিজিটাল সেবা প্রদান করে তারা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় সহায়ক হিসেবেও নিবেদিত রয়েছেন। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর জেলা ব্যাপী ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন উদ্যোক্তা।

এদিন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন জেলার ২৬টি ইউনিয়ন পরিষদে ‘হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর’ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে পূর্বের উদ্যোক্তাদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন জেলার ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই সময় এ নিয়োগ বাতিল করে উল্লেখিত পদে উদ্যোক্তাদের স্থায়ী নিয়োগ দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করে উদ্যোক্তারা। পরে ২০১৭ সালে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার পদে উদ্যোক্তাদের নিয়োগের জন্য হাইকোর্টে রিট করা হয়। উচ্চ আদালতের বিচারক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রিটকারীদের নিয়োগের জন্য নির্দেশনা প্রদানের পর রায়ের বিপক্ষে সরকার পক্ষ আপিল করে। আপিলের শুনানিতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উদ্যোক্তাদের নিয়োগের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়।

উদ্যোক্তাদের অভিযোগ রাজনৈতিক ও রহস্যজনক কারণে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের কোন অগ্রাধিকার না দিয়েই কয়েকটি জেলায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। পরবর্তীতে পুনরায় আদালতের দ্বারস্থ হয় উদ্যোক্তারা, যে মামলা এখনও চলমান রয়েছে। এছাড়াও এ নিয়ে পরে পৃথকভাবে আরও কয়েকটি রিট করেন উদ্যোক্তারা। সেগুলোও শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন জেলায় নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের ৫ উপজেলার ৫৮টি ইউনিয়নে রয়েছে ডিজিটাল সেন্টার। প্রত্যেক সেন্টারে দুইজন করে মোট ১১৬ জন নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তা রয়েছে। তারা ২০১০ থেকে টানা নয় বছর বিনা পরিশ্রমে কাজ করে আসছেন। ডিজিটাল সেন্টারের দৈনন্দিন আয় রোজগারেই চলছিল তাদের কর্মজীবন।

এদিকে অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর জেলায় ২৬ জন হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর উদ্যোক্তাদের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তদের পক্ষ থেকে এ নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ করার আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুর জেলা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা ফোরামের একাধিক নেতা।

লক্ষ্মীপুর জেলা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলার শাকচর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা মুহাম্মদ সেকান্তর আলী জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১০ সালে সারাদেশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু করেন। পরবর্তীতে যা ডিজিটাল সেন্টার হিসেবে রূপ লাভ করে।

তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল সেন্টার চালুর পর থেকে উদ্যোক্তারা বিনামূল্যে ইউনিয়ন পরিষদের দাপ্তরিক হিসাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিনিময়ে সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্য নিয়ে কোনো রকমে জীবন পরিচালনা করছেন তারা। আমরা ভেবে ছিলাম একদিন আগে বা পরে আমাদের চাকরি স্থায়ী হবে এবং আমরা জাতীয়করণের অধিভুক্ত হবো। কিন্তু বর্তমান নিয়োগ প্রক্রিয়া আমাদেরকে হতাশ করে তুলেছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা ফোরামের সভাপতি ও সদর উপজেলার চরশাহী ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা নিজাম উদ্দিন সোহাগ জানান, আমারা উদ্যোক্তারা দীর্ঘ নয় বছর ডিজিটাল সেন্টারে ইউনিয়ন পরিষদের যাবতীয় দাফতরিক কার্যক্রম বিনামূল্যে করে আসছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টা আর আমাদের শ্রমে আজ ডিজিটাল ইউনিয়ন বিশ্বব্যাপী মডেল। আমাদেরকে বাদ দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে এরকম যে কোন পদে নিয়োগের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত পদক্ষেপ নিবো।

জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারে উদ্যোক্তাদের জাতীয়ভাবে বলা হয় ডিজিটাল বাংলাদেশের সন্তান বা ডিজিটাল নির্মাণ সৈনিক। ইউনিয়ন পরিষদসহ ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ ও ২০১৩ সালে দু’বার সাউথ অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কয়েকটি বেশ কয়েকটি পুরষ্কার পেয়েছেন।

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত