ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

গণভবনে আবরারের বাবা-মা

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:১৬  
আপডেট :
 ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ১৯:২২

গণভবনে আবরারের বাবা-মা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের বাবা, মা ও ভাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গণভবনে গিয়েছেন।

সোমবার বিকেলে গণভবনে যান তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং।

রোববার (৬ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফাহাদকে শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সোমবার (৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. মো. সোহেল মাহমুদ বলেন, বাঁশ বা স্টাম্প দিয়ে পেটানো হয়ে থাকতে পারে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে। এর ফলেই রক্তক্ষরণ বা পেইনের (ব্যথা) কারণে ফাহাদের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি বলেন, ফাহাদের হাতে, পায়ে ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। আঘাতের ধরন দেখে মনে হয়েছে ভোঁতা কোনো জিনিস যেমন- বাঁশ বা স্টাম্প দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তবে তার মাথায় কোনো আঘাত নেই। কপালে ছোট একটি কাটা চিহ্ন রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এসব চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করেন বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার। এরপর গত রবিবার রাতে আবরারকে শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে বেধড়ক পেটান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাকে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প ও লাঠিসোটা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রচণ্ড মারধর করা হয়। নির্মম পিটুনিতে আবরার মারা যান।

আবরার হত্যায় ইতোমধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন কয়েকজন। স্বীকারোক্তিতে মামলার অন্যতম আসামি অনিক জানিয়েছে, সে একাই আবরারকে স্টাম্প দিয়ে অন্তত ১ ঘণ্টা পেটায়। আবরারের ওপর দেড়শ’ আঘাত করে সে। শিবির সন্দেহে স্বীকারোক্তি আদায় করতেই আবরারের ওপর নির্যাতন চালায় সে। অনিক আরও বলেছে, বাঁচার জন্য আবরার আমার পায়ে ধরেছে। তারপরও নির্যাতন চালাই। নির্যাতনের একপর্যায়ে আবরার নিস্তেজ হয়ে পড়লে রাত ১২টার দিকে সে কক্ষ থেকে বাইরে যায়। আবরারকে ৫ জনের হাতে রেখে যায় সে। নির্যাতনের শেষ পর্যায়ে আবরার বমি করে। অচেতন হয়ে পড়ে। নির্যাতনকারীদের মধ্যে একজন অনিককে ফোনে তা জানালে সে (অনিক) বলে, ‘শালা ভান করছে। আরেকটু দিলে ঠিক হয়ে যাবে।’

অনিক সরকার আবার কক্ষে আসে। এরপর স্টাম্প দিয়ে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে আঘাত করতে থাকে। সে খুবই অনিয়ন্ত্রিতভাবে আবরারকে মারতে থাকে। তার মারা দেখে সবাই ভয় পেয়ে যায়। মারার একপর্যায়ে স্টাম্প ভেঙে যায়। পরে মশারি টানানোর রড দিয়ে পেটানো হয়।

অনিক আরও বলেছে, সে আবরারকে প্রথমে কিল-ঘুষি দিয়ে ক্যাম্পাসে কারা শিবির করে জানতে চায়। তখন ইফতিও চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। একপর্যায়ে সামসুল আরেফিন ক্রিকেট স্টাম্প নিয়ে আসে। কথা আদায়ের জন্য ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে আবরারের পায়ে পেটায়। এরপর দু’হাত টানটান করে স্টাম্প দিয়ে সে (অনিক) আবরারকে মারতে থাকে। আবরার চিৎকার করে কাঁদতেও পারেনি। কারণ অন্যরা আবরারের মুখ চেপে ধরে রেখেছিল। এভাবে থেমে থেমে স্টাম্প দিয়ে পেটায় ইফতি, মেফতাহুল জিয়নসহ অন্যরা।

এরপর আবরারকে কক্ষে রেখে ইফতি, জিয়নসহ অন্যরা ক্যান্টিনে খেতে যায়। খাবার খেয়ে ফিরে এসে দেখতে পায় আবরার মেঝেতে পড়ে আছে। তখন আবরার বমি করছিল। তৃতীয় দফা নির্যাতনে অংশ নেয় মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশাররফ সকাল ও মুজাহিদসহ ৫ জন। অনিকের জবানিতে এভাবেই উঠে আসে আবরারের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত