কলেজছাত্র সোহাগ হত্যায় চার জনের নামে মামলা
যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০১৯, ২০:১৭
যশোরে কলেজছাত্র সোহানুর রহমান সোহাগ ওরফে মাইকেল (১৯) হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। নিহতের ভাই মিলন হোসেন গত মঙ্গলবার রাতে মামলাটি করেন।
আসামিরা হলো, বারান্দী মোল্লাপাড়া আমতলা নদীর পাড় এলাকার সিদ্দিক ওরফে মাইছো সিদ্দিকের ছেলে রাকিব (২৬), মৃত খায়রুল ইসলামের ছেলে রায়হান (২৪), আব্দুল কাদের ওরফে ভাংড়ি কাদেরের ছেলে কুরবান (১৯) এবং একই এলাকার মৃত আইয়ুব হোসেনের ছেলে শরীফ (২৪)। এছাড়া অজ্ঞাত ৩/৪ জনের কথা বলে হয়েছে এজাহারে।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২০ অক্টোবর রাতে সোহাগ বাড়িতে ছিলো। রাত ১০টার দিকে আসামি রায়হান তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। সময়মত বাড়িতে না ফেরায় তার বাবা সোহাগের মোবাইলে কল দেন। সোহাগ জানায় সে তার বন্ধু রাকিব, রায়হান, কুরবান ও শরীফের সাথে আছে। বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হবে। কিন্তু রাতে বাড়ি না ফেরায় ফের ফোন দেয়া হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর সারা রাত বাড়িতে ফেরেনি।
পরদিন ২১ অক্টোবর সকালে লোকমুখে জানতে পারেন নদীর পাড়ে সোহাগের লাশ পড়ে আছে। তিনি সেখানে গিয়ে নদীর পাড়ে রোপন করা নেপিয়ার ঘাষবনের মধ্যে সোহাগের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তার গলা, বুকে, পেটে, উরুতে একাধিক ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। পূর্ব শত্রুতার জেরে সোহাগকে হত্যা করে লাশ নদের পাড়ের ঘাষ বনে ফেলে রেখে যায়।
এদিকে এলাকার একটি সূত্র জানিয়েছে, সোহাগের মৃতদেহ উদ্ধারের পরপরই রটে এই ঘটনায় সাথে রাকিব-জিতু জড়িত। কিন্তু অবিশ্বাস্য ভাবে এজাহারে জিতুর নামে আসেনি। নিহতের পরিবারের সদস্যরাই জিতুকে সন্দেহ করেছিল। কিন্তু ঘটনার একদিন পর দায়েরকরা এজাহারে জিতুর নাম নেই। ঘটনার তিনদিন পার হলেও এই মামলায় পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই আমিরুজ্জামান জানিয়েছেন, নিহতের পরিবারের লোকজন যে নাম দিয়েছে সেই নামে এজাহার হয়েছে। জিতু এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিল কি-না তা তদন্ত করে দেখা হবে। প্রয়োজন হলে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এলাকার একটি সূত্র জানিয়েছে, সোহাগ হত্যার পেছনে ছিল পরকয়া প্রেম। আসামি রাকিব সোহাগের মাকে ধর্ম মা বলে ডাকতো। সেই থেকে সোহাগ ও রাকিব ভাইয়ের মতো চলতো। কিন্তু রাকিবের স্ত্রী অনন্যার সাথে সোহাগের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি রাকিব। সোহাগের সাথে অনন্যার দৌহিক সম্পর্ক গড়ার সংবাদ শুনে রাকিব ক্ষিপ্ত হয়। সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
এদিকে অনুমানিক ৭/৮ মাস আগে অনন্যার সথে তালাক হয়ে যায় রাকিবের। অনন্যাই নাকি তালাক দিয়েছিলো রাকিবকে। সেই থেকে সোহাগের জীবন হুমকির মুখে পড়ে। সোহাগকে খুন করবে বলে রাকিব বেশ কয়েকবার মোবাইল ফোনে অনন্যাকে শাসায়। ২০ অক্টোবর রাতে রাকিব কৌশলে সোহাগকে বাড়ি থেকে রায়হান ও জিতুকে দিয়ে ডেকে নিয়ে নদের পাড়ে যায়। সেখানে গিয়ে প্রথমে ইয়াবা সেবন করে সবাই। এরপর সোহাগকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে পালিয়ে যায় বলে এলাকার একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
আসামি রাকিবের সাবেক স্ত্রী অনন্যা এই মামলায় ৪ নম্বর সাক্ষী হয়েছেন। এছাড়া নিহতের বোন তন্বী, পিতা হাবিবুর রহমান এবং একই এলাকার কাজী আলাউদ্দিন এই মামলার সাক্ষী।
বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে