ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

রাত হলেই ‘ইলিশ নিধনের উৎসব’

  মাদারীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০১৯, ২১:০০

রাত হলেই ‘ইলিশ নিধনের উৎসব’

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু অসাধু জেলে মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা নদীতে রাত হলেই ইলিশ মাছ ধরার উৎসবে মেতে ওঠে। মাছ ধরা বন্ধে প্রতিনিয়ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে ইলিশ শিকারিদের জেল-জরিমানা করলেও থামেনি ইলিশ শিকারিদের দৌরাত্ম্য। পদ্মার চরের কাশবনের ভিতরে মাছ মজুদ করে বিক্রি করছে তারা। রাতে মাছ ধরার অভিযানে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত হামলার শিকারও হয়েছেন। এ পর্যন্ত মাছ ধরার অপরাধে ১৮৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইলিশ সংরক্ষণে ৯ অক্টোবর থেকে ২২ দিন মা ইলিশ নিধনে সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সরকারি ঘোষণার পরও কিছু অসাধু জেলে চুরি করে মাছ শিকার করে যাচ্ছে। অবৈধ মাছ ধরার অপরাধে এ পর্যন্ত ১৮৫ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়েছে। মাছ ধরা নিষেধের এক সপ্তাহে পূর্বে শিবচর উপজেলার কার্ডধারী ৩ হাজার ৫০৯ জন জেলেকে ২০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। দিনে ও রাতে প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে অভিযান অব্যহত রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৬৫ লাখ টাকার জাল জব্দ করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা ইউনিয়নের কাজীরসূরা, চরজানাজাত ইউনিয়নের হাজরা ও মাদবরেরচর ইউনিয়নের খারাকান্দির এলাকা পদ্মা নদীর মধ্যে পড়ছে। চরাঞ্চলের এসব এলাকা দুর্গম হওয়ায় জেলেরা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাছ শিকার করছে। লোকচক্ষুর আড়াল করতে ট্রলারগুলোতে কোনো আলোকবাতি ব্যবহার করেন না অসাধু জেলেরা। ইলিশ মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার মাঝে এভাবেই নতুন কৌশলে নিধন চলছে। শিকার করা মাছ এ অঞ্চলের প্রায় ৮/১০টি গ্রামে সন্ধ্যা রাত থেকে ভোর রাত পর্যন্ত বিক্রি করেন তারা।

এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে হালি আট শ থেকে এক হাজার টাকা, পাঁচ শ গ্রাম ওজনের ইলিশের হালি বিক্রি হচ্ছে তিন শ থেকে চার শ টাকা।

সস্তায় ইলিশ কিনতে পারায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতারা ব্যাগ ভর্তি করে ইলিশ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ীরা পদ্মার চরের কাশবনের ভিতরে মাছ মজুদ করে বিক্রি করছে। রাতে মাছ ধরার অভিযানে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত হামলার শিকার হয়েছেন।

মা ইলিশ ধরতে যাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, সরকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ করলেও পরিবারের খরচ চালাতেই রাতের আধারে পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করছি। সাগরসহ অন্যান্য নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় আমরা বেশি লাভের আশায় রাতে পদ্মা নদীতে মাছ ধরছি। অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন মাছ বেশি পাওয়া যায়। আমরা বিভিন্ন গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এ মাছগুলো বিক্রি করি। কোনো হাট-বাজারে বিক্রি করি না। প্রতি কেজি মাছ বিক্রি হচ্ছে দুই শ থেকে পাঁচ শ টাকা পর্যন্ত।

রাতের আধারে ইলিশ মাছ কিনতে যাওয়া কয়েকজন ক্রেতা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, রাতে পদ্মার পাড়ের গ্রামগুলোতে সস্তায় ইলিশ মাছ কিনতে পাওয়া যায় বিধায় এসেছি। অন্যান্য সময় মাছের দাম বেশি থাকে তাই আমরা পছন্দের মাছ কিনতে পারি না। আমরা গরীব মানুষ সব সময় মাছ কিনতে পারি না। এখন অনেক কম দামে ইলিশ পাওয়া যায় দেখে কিনতে এসেছি।

শিবচর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এটিম সামসুজ্জামান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, রাতে চুরির মত করে জেলেরা মা ইলিশ ধরছে। সে জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আমরা দিনে ও রাতে মাছ ধরা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছি। যাতে করে পদ্মা নদীর মা ইলিশগুলো সুষ্ঠুভাবে ডিম ছাড়তে পারে। মাছ ধরার অপরাধে জেলেদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রদান করা হচ্ছে।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ সময়ে মা ইলিশ ধরা বন্ধের জন্য আমরা প্রতিনিয়ত দিনে ও রাতে পদ্মা নদীতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। যে সমস্ত জেলারা মাছ ধরছে এবং যে সকল ক্রেতা মাছ ক্রয় করছে তাদের সকলকে আমরা অবহিত করেছি নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরা ও ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ রাখার জন্য। তারপরেও কিছু অসাধু জেলারা রাতে চুরি করে মাছ ধরছে। আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাজা দিয়েছি। আগামী ৩০ তারিখ পর্যন্ত আমাদের মোবাইল কোর্টের অভিযান অব্যহত থাকবে।

জেলা মৎস কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরা নিষেধ তা আমরা অনেকদিন পূর্বে থেকেই জেলেদের, মাছ ব্যবসায়ীদের ও সাধারণ মানুষকে অবগত করেছি। সরকারি ঘোষণার পরও কিছু অসাধু জেলেরা চুরি করে মাছ শিকার করছে। মাছ ধরার অপরাধে এ পর্যন্ত ১৮৫ জন জেলেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়েছে। মাছ ধরা নিষেধের এক সপ্তাহে পূর্বে জেলেদের আমরা ২০ কেজি করে চাল দিয়েছি। তারপরেও কিছু জেলে রাতের আধারে মাছ শিকার করছে। দিনে ও রাতে আমরা প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত