ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

আইএস প্রধানের মৃত্যুর প্রভাব বাংলাদেশে কতটা পড়বে?

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:৪৫  
আপডেট :
 ২৮ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:০৪

আইএস প্রধানের মৃত্যুর প্রভাব বাংলাদেশে কতটা পড়বে?

২০১৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকা গুলশানে হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় যে জঙ্গি হামলা হয়েছিল, তার হামলাকারীদের ছবি ছাপা হয়েছিল আইএস-এর বার্তা সংস্থা আমাক-এ।

২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় ২২জন নিহত হয়েছিলেন এবং এ ঘটনার পর জঙ্গিরাই নিজেদের ইসলামিক স্টেট বা আইএস পরিচয় বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছিলো। যদিও বাংলাদেশ সরকার বরাবরই কথিত আইএসের উপস্থিতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

বিভিন্ন সময়ে নানা ধরণের হামলার পর আইএসের দাবি প্রকাশ হয়েছে নানা মাধ্যমে। সংগঠনটি আইসিস নামেও পরিচিত।

এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি হামলার পরেও একই কায়দায় দায় স্বীকার করেছে কথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস। আবার হোলি আর্টিজানের ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে। এসব অভিযানে এ পর্যন্ত অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছে।

এসব অভিযানের মধ্যেই চলতি বছরের শুরুতে খবর পাওয়া যায় যে সিরিয়া ফেরত একজন আইএস সন্দেহভাজন জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়েছে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এরকম অন্তত ৫০জন বিভিন্ন দেশ থেকে গিয়ে সিরিয়া আর ইরাকে আইএসের সঙ্গে জড়িত হয়েছিল। যাদের ফরেন টেরোরিস্ট ফাইটার বলে বর্ণনা করছেন কর্মকর্তারা।

হোলি আর্টিজান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসাবে অভিযুক্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরী সিরিয়া-ইরাকে গিয়েছিলেন বলে জানা যায়। ২০১৪ সালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন ব্রিটিশ নাগরিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, যিনি আইএসের জন্য সদস্য সংগ্রহ করছেন বলে পুলিশ জানিয়েছিল।

এমনকি সন্দেহভাজন জঙ্গিদের একটি তালিকও ঢাকায় ইমিগ্রেশনে দিয়েছিলো পুলিশ।

ঢাকায় হোলি আর্টিজান রেস্তোঁরায় ভয়াবহ হামলার পর দায় স্বীকার করে হামলকারীদের ছবি প্রকাশ করেছিলো আইএস। কিন্তু এখন আইএসের প্রতিষ্ঠাতা এবং শীর্ষ নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির মৃত্যুর খবর যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করার পর বিশ্লেষকরা মনে করছেন এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও। তারা মনে করছেন বাগদাদির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এদেশে আইএস ভাবাদর্শে বিশ্বাসীরা ক্রমশ আরো দুর্বল হয়ে পড়বে।

ঢাকায় পুলিশের মুখপাত্র মাসুদুর রহমান বলছেন কোনো সংগঠন নেতৃত্বশূন্য হলে অবশ্যই তারা মনোবল হারায়। গণমাধ্যমে আমরা দেখছি যে তার মৃত্যু হয়েছে। এটি সত্যি হলে অবশ্যই তাদের তৎপরতা আরো দুর্বল হবে সেটিই স্বাভাবিক।

বাগদাদির মৃত্যুর প্রভাব বাংলাদেশে কতটা পড়বে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা কখনো সরাসরি আইএস পাইনি। হয়তো অনলাইনে ভাবাদর্শ প্রচার বা এমন ঘটনা হয়েছে। এদের অনেককে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নানা ব্যবস্থাও হয়েছে। আমাদের শক্ত নজরদারিও রয়েছে।

জঙ্গি বিষয়ক বিশ্লেষক ও আইএসসহ বৈশ্বিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন তাসনিম খলিল। তিনি বলছেন, বাগদাদিকে নিয়ে কথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস যে মিথ তৈরি করেছিলো সে গল্পের কফিনে পেরেক ঠুকে দিয়েছে বাগদাদির মৃত্যু। নিজেকে একজন খলিফা হিসেবে দাবি করেছিলেন বাগদাদি যা কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে। বাংলাদেশ থেকেও আইএসের সাথে যোগ দেয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে অনেকে সিরিয়ায় গিয়েছিলো।

তিনি বলেন, বেশ কয়েকজন সিরিয়ায় ধরা পড়ে সিরিয়ান কুর্দিদের কারাগারে আটক আছে। অনেকে লড়াইয়ে নিহত হয়েছে। বাংলাদেশি জিহাদিদের সন্তান বা স্ত্রীরা আটকে আছেন শরণার্থী হিসেবে। এদের সংখ্যা বেশ বড়। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আইসিসের পতন আগেই হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, দুটি গ্রুপ বাংলাদেশে সক্রিয়। এর একটি হলো আল কায়েদা (ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট) আরেকটা জেএমবি। যেটি পরে ভারতেও বিস্তৃত হয়েছে। আইএসের পতনে এদের লাভ হবে, বিস্তার ঘটবে। তবে বৈশ্বিকভাবে আইসিসের এখন আর তেমন কোনো অবস্থান নেই এবং এ অবস্থায় বাগদাদির মৃত্যু বাংলাদেশে আইসিসপন্থীদের অবস্থান আরও দুর্বল করবে বলে মনে করেন তিনি।

আইসিস এফিলিয়েটেড সংগঠন বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে নেই মন্তব্য করে তাসনিম খলিল বলেন, অনলাইনে হয়তো কেউ কেউ তৎপর। তবে সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আইসিসের যে কার্যক্রম সেটিকে আরো দুর্বল করবে এ ঘটনা।

তাসনিম খলিল বলছেন আইএসের প্রতিষ্ঠাতা এবং শীর্ষ নেতা আবু বকর আল বাগদাদির মধ্যে কথিত খলিফার একটি চরিত্র তৈরি করা হয়েছিলো। আইসিস অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বাগদাদিকে এমন একটি চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলো সেটিই তাকে বিশ্বব্যাপী অনুসারী গড়ে তুলতে সহায়তা করেছিলো। ইসলাম ধর্মে কেয়ামতের আগে ইসা নবী আসবে এবং তার আগে যে কথিত খলিফা আসবে ও দাবিক নামক জায়গায় বিধর্মীদের সাথে লড়াই হবে এগুলোর কথা বলে তারা প্রমাণ করতে চাইতো যে আবু বকর বাগদাদিই হলো সেই লোক। তাদের যে কালো পতাকা সেটিও নেয়া হয়েছে ইসলাম ধর্মের ওই বর্ণনা থেকেই।

অর্থাৎ হাদিস কোরআন দেখিয়ে তারা দাবি করতো আইসিস হলো সেটি যেটি ইসলামের নবী মোহাম্মদ (সা.) বলে গেছেন। এসব বলেই সারা বিশ্ব থেকে অনুসারী সংগ্রহ করে সিরিয়া ইরাক জুড়ে খেলাফত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেও কার্যত আইসিস বা বাগদাদি ব্যর্থ হয়েছেন বলে মনে করেন তাসনিম খলিল।

বাগদাদির মৃত্যু যেভাবেই হোক মনে রাখতে হবে যে আইসিস (যা আইএস নামেও পরিচিত) পরাজিত হয়েছে কুর্দি মুসলিমদের হাতে, বিধর্মীদের হাতে নয়। তবে ইসলামের নামে তাদের প্রচারণা আগেই অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক আব্দুর রব খান বলছেন, ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আল-কায়েদার বিলুপ্তি শুরু হয়েছে এবং সংগঠনটি এখন আর তেমন আলোচনায় নেই। আমার ধারণা আইএসের অবস্থাও আল-কায়েদার মতোই হবে। যদিও সিরিয়ায় পিছু হটার পরেও লড়াই করছিলো আইএস। কিন্তু এবার বাগদাদির মৃত্যুর পর তারা আরো দুর্বল হয়ে ধীরে ধীরে বিলুপ্তির দিকে যাবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে গিয়েছিলো তাদের কারো অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। অনেকে প্রাণ হারিয়েছে কিংবা পরাজিত হয়ে হতাশ হয়েছে। এখন বাগদাদির মৃত্যুর পর তারা আরো হতাশ হবে। কেউ কেউ নতুন মতাদর্শে ঝুঁকবে হয়তো; কিন্তু তাতেও লাভ হবে না। সবমিলিয়ে তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এদেশে পরোক্ষ কোনো তৎপরতা কোনো সংগঠন বা ভাবাদর্শে বিশ্বাসী কেউ থাকলেও তারা ক্রমশ দুর্বল হয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সূত্র: বিবিসি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত